সুনাকের দায়িত্বগ্রহণে ৯ মন্ত্রীর পদত্যাগ
Share on:
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক দায়িত্ব গ্রহণের আধা ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেছেন মন্ত্রিসভার ৯ সদস্য।
পদত্যাগ করাদের মধ্যে রয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী জ্যাকব রিস-মগ। তিনিই প্রথম পদত্যাগ করেন।
এরপর আইন ও বিচার মন্ত্রী ব্র্যান্ডন লুইসের পদত্যাগ করার ঘোষণা আসে। তার পদত্যাগের পর পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী কিট মলথাউস, লেভেলিং আপ মন্ত্রী সিমন ক্লার্ক, পরিবেশমন্ত্রী রনিল জয়াবর্ধনে, জুনিয়র মন্ত্রী ভিকি ফর্ড এবং কল স্মিথ। সবশেষে অলোক শর্মা মন্ত্রিত্ব ছাড়েন।
তাছাড়া চিপ হুইপের পদ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন ওয়েন্ডে মর্টেন। এমনকি টোরি পার্টি চেয়ারম্যান জ্যাক ব্যারিও পদত্যাগ করেন।
বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভাষণ দেওয়ার পরপরই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসামন্ত্রী জ্যাকব রিস-মগ এবং বিচারমন্ত্রী ব্র্যান্ডন লুইস।
রিস-মগ সম্প্রতি বলেছিলেন, তিনি ঋষির মন্ত্রিসভায় থাকবেন বলে আশা করছেন না। তবে প্রধানমন্ত্রী তাকে যে দায়িত্বই দেবেন, তা পালন করতে প্রস্তুত।
তবে আগের অবস্থান থেকে সরে আসার বিষয়ে মঙ্গলবার পদত্যাগকারী এ মন্ত্রী বলেছেন, তিনি আর বিশ্বাস করেন না যে, ঋষি সুনাক ‘সমাজতন্ত্রবাদী’। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফকে তিনি বলেন, কনজারভেটিভ পার্টির নেতা স্পষ্টতই সমাজতান্ত্রিক নন।
এসময় ভবিষ্যতে নির্বাচনে হেরে যাওয়া এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর পেছনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন রিস।
আর বিচারমন্ত্রী ব্র্যান্ডন লুইস এক টুইটে জানিয়েছেন, তার পদত্যাগপত্র নতুন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। লুইস বলেছেন, যুক্তরাজ্যের দীর্ঘস্থায়ী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের একজন হতে পারা তার কাছে অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। তিনি চারজন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে, পাঁচটি মন্ত্রণালয়ে আটটি মন্ত্রীর ভূমিকা পালন করেছেন।
লুইস বলেছেন, দল ও দেশের জন্য ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তার সমর্থন থাকবে।
সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চিফ হুইপ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ওয়েন্ডি মর্টন। এক টুইটে তিনি বলেছেন, পেছনের বেঞ্চগুলোতে যাচ্ছি। সেখান থেকে আমি ব্যবসা ও অ্যালড্রিজ-ব্রাউনহিলসের সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব অব্যাহত রাখবো।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন কনজারভেটিভ নেতা ঋষি সুনাক। তার আগে, বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছে জাতির উদ্দেশ্যে প্রথমবার ভাষণ দেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে পূর্বসূরী লিজ ট্রাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে ঋষি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধির উন্নতি করতে চাওয়া ভুল নয়। এটি একটি মহৎ উদ্দেশ্য। কিন্তু কিছু ভুল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এগুলো অসৎ ইচ্ছা বা খারাপ উদ্দেশ্য থেকে জন্মগ্রহণ করেননি, বরং তার পুরোপুরি বিপরীত। তবুও সেগুলো ভুলই।
যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি তার পূর্বসূরীর করা ‘ভুলগুলো সংশোধন করতে’ বদ্ধপরিকর। আর এই কাজ শুরু হবে তাৎক্ষণিকভাবে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এছাড়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋসি সুনাককে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির (টোরি) নেতা ঘোষণা করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের রাজনীতির ২০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী ঋসি সুনাক। এর আগে ব্রিটেনের স্থানীয় সময় ২টার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী পদের নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান হতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন পেনি মর্ডান্ট।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বদলে ঋষি সুনাকের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। এর ফলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নেতা সুনাক।
এর আগে ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের মন্ত্রীসভার অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
ঋষি ২০১৫ সালে রিচমন্ডের (ইয়র্কস) এমপি নির্বাচিত হন। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাফল্য পান তিনি। আর এখন যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে আছেন তিনি।
৪২ বছর বয়সী সুনাক ১৯৮০ সালে সাউদাম্পটনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেন। তারা পূর্ব আফ্রিকা থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। তারা বাবা ছিলেন ডাক্তার। আর মা একটি ফার্মেসি চালাতেন। ঋষি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হলে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম এশিয়ান-ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এন