তাজরীন ট্র্যাজেডির ১১ বছর: সাক্ষী খুঁজে পাচ্ছে না রাষ্ট্রপক্ষ
Share on:
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে অবস্থিত তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ঘটে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন অন্তত ১১২ জন। আহত ও দগ্ধ হন আরও দুই শতাধিক শ্রমিক। তাজরীন ট্র্যাজেডির ১১ বছরে মামলার ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১১ জন। চলতি বছর কোনো সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হননি। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পরও তারা আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন না। ফলে বিচার কাজও এগোচ্ছে না।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তারা নির্ধারিত ঠিকানায় না থাকায় সমন ফেরত আসছে। তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকটা একই অভিযোগ আসামিপক্ষেরও। তাদের মতে, সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় মামলাটি গতি পাচ্ছে না। মামলাটি দ্রুত শেষ হলে ন্যায়-অন্যায় আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর অদূরের ওই পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১১২ জনের প্রায় সবাই ছিলেন ওই কারখানারই শ্রমিক।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, তাজরীন অগ্নিকাণ্ডের মামলাটি বর্তমানে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১ নভেম্বর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্ত সেদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির করতে না পেরে সময়ের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছরের ২৫ মার্চ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। মামলাটির বিচার শুরু হওয়ার আট বছর পার হয়েছে। এসময়ে ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।এদের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র ১১ জন।
মামলার নথি থেকে আরও জানা যায়, আলোচিত এ মামলায় ২০১৬ সালে ৫ জন, ২০১৭ সালে দুজন, ২০১৯ ও ২০২১ সালে একজন করে এবং ২০২২ সালে দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৩ সালে কোনো সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বীমল সমদ্দার বলেন, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে দায়ের করা মামলাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মামলার ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১১ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৫ সাক্ষীর বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জন সাক্ষ্য দেন। বাকি ৪৪ জন আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছে তাদের নির্ধারিত ঠিকানায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নির্ধারিত ঠিকানা থেকে সমন ফেরত আসছে। তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই মামলার বিচারে ধীরগতি হচ্ছে।
এ নিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী এ টি এম গোলাম গাউস বলেন, অধিকাংশ তারিখে মামলার সাক্ষী আদালতে হাজির হচ্ছেন না। সাক্ষী হাজির না হওয়ায় মামলাটি গতি পাচ্ছে না। আমরা চাই, মামলাটি যেন দ্রুত শেষ হয়। ন্যায়-অন্যায় আদালতের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস নামের পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন নিহত হন। এতে আহত ও দগ্ধ হন আরও দুই শতাধিক শ্রমিক। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগ এনে দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারা যুক্ত করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিজিএম) আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এতে তাজরীন ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেনসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান। মামলার ১০৪ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন- প্রতিষ্ঠানের মালিক ও এমডি দেলোয়ার হোসেন, চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার, লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল-আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল-আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু ও শহীদুজ্জামান দুলাল।
আসামিদের মধ্যে মো. শহিদুজ্জামান দুলাল, মোবারক হোসেন মঞ্জু, মো. রানা ওরফে আনোয়ারুল ও মো. শামিম মিয়া পলাতক।
এমএইচ