লেবাননের প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ
Share on:
লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন সংকট বাড়িয়ে পদত্যাগ করেছেন। রোববার (৩০ অক্টোবর) পদত্যাগ করেন ৮৯ বছর বয়সী সদ্য সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। পদত্যাগের পর প্রেসিডেন্ট প্যালেসও ছেড়েছেন তিনি।
এর আগে ২০১৬ সালে লেবাননের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন মিশেল আউন। সেসময় সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যারোনাইট খ্রিস্টান রাজনীতিবিদ সামির গেগা উভয়ের মধ্যকার একটি চুক্তিতে তাকে এই পদে সমর্থন করা হয়েছিল। আর সেই চুক্তির ফলে তৎকালীন নেতৃস্থানীয় সুন্নি রাজনীতিবিদ সাদ আল-হারিরি লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর পদে এসেছিলেন।
পরবর্তী ছয় বছরের মেয়াদের সময় লেবাননের সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহর সহায়তায় ২০১৭ সালে সিরিয়ার সীমান্তে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ২০১৮ সালে একটি নতুন নির্বাচনী আইন পাস হয় এবং শীর্ষস্থানীয় জ্বালানি কোম্পানিগুলো ২০২০ সালে অফশোর ব্লকগুলোতে অনুসন্ধানমূলক খনন শুরু করে।
মেয়াদের শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চুক্তি স্বাক্ষর করে লেবানন। ইসরায়েলের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ এবং লেবাননের পক্ষে সই করেন প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। এর ফলে দুই দেশের জন্যই সমুদ্রের বিরোধপূর্ণ গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের পথ খুলে যায়।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লেবাননের চলমান বিপর্যয়মূলক আর্থিক মন্দা এবং বৈরুত বন্দরে মারাত্মক বিস্ফোরণের পর দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন ৮৯ বছর বয়সী মিশেল আউন। তবে চলমান এসব সংকটের মধ্যেই পদ ছাড়লেন তিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মিশেল আউনের পদত্যাগের পর দায়িত্বপালনের জন্য এখনও পর্যন্ত উত্তরসূরির বিষয়ে একমত হতে পারেনি লেবাননের পার্লামেন্ট। সাংবিধানিকভাবে লেবাননের প্রেসিডেন্টের কোনো বিলে স্বাক্ষর করে আইনে পরিণত করার, নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করার এবং কোনো দলকে সরকার গঠনের বিষয়ে সবুজ সংকেত দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে আউনের দায়িত্বপালনের অর্ধেকেরও বেশি সময়ের মতো লেবাননে বর্তমানে একটি তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রিসভা শাসন করছে। এই মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী-মনোনীত গত ছয় মাস ধরে দেশটিতে সরকার গঠনের চেষ্টা করছেন।
রয়টার্স জানায়, লেবাননে মিশেল আউন একজন গভীরভাবে বিভাজনকারী ব্যক্তিত্ব। অনেক খ্রিস্টান তাকে পছন্দ করেন। খিস্টানরা মূলত আউনকে লেবাননের সাম্প্রদায়িক ব্যবস্থায় তাদের রক্ষক হিসাবে দেখে থাকেন। কিন্তু সমালোচকদের কাছে তিনি দুর্নীতিকে আরও বাড়িয়ে তোলা এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে প্রভাব অর্জনে সহায়তা করার অভিযোগে অভিযুক্ত।
প্রসঙ্গত, লেবাননে প্রেসিডেন্ট পদটি খ্রিষ্টানদের জন্য সংরক্ষিত। ২০১৪ সালের মে মাসে লেবাননের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিশেল সুলাইমান মেয়াদ শেষ হওয়ায় পদত্যাগ করেন। এরপর টানা ২৯ মাস রাষ্ট্রপ্রধানহীন অবস্থায় ছিল মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটি। এরপর ২০১৬ সালের অক্টোবরের শেষে লেবাননের সাবেক সেনাপ্রধান মিশেল আউন দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আর এর মধ্য দিয়েই সেসময়কার দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট পদের শূন্যতা পূরণ হয়েছিল।
এন