tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ১২ জানুয়ারী ২০২৪, ১১:৫০ এএম

সন্তানকে হত্যার আগে চিঠিতে যা লিখেছিলেন স্টার্টআপের সিইও


ceo-20240112114715

হোটেলের ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ছুরি, একটি তোয়ালে আর একটি বালিশের সূত্র ধরে তদন্ত অনেকটাই এগিয়েছে।


শিশু খুনের রহস্যের জট খুলতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছেন তদন্তকারীরা। এ বার মিলল একটি চিঠি। তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, চিঠির বয়ানের সূত্র ধরে বাকি জটও ছাড়ানো সম্ভব হবে। স্পষ্ট হয়ে যাবে খুন হওয়া শিশুর মা তথা বেঙ্গালুরুর মাইন্ডফুল এআই ল্যাবের সিইও সূচনা শেঠের ভূমিকা।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া চিঠিতে লেখা আছে যে, ‘আমার স্বামীকে আমার সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া নিয়ে আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে, সেটি আমি মেনে নিতে পারছি না।’

ধারণা করা হচ্ছে, চিঠিটি কয়েকদিন আগে লেখা হয়েছে। ইতোমধ্যে চিঠিটি ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে হাতের লেখা পরীক্ষা করে দেখার জন্য। চিঠির হাতের লেখা সূচনার কি না, সেটিই দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

কর্নাটকে ছেলের মরদেহসহ ধরা পড়া সূচনাকে ট্রানজিট রিমান্ডে গোয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছয় দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে তাকে।

তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, জেরায় জানা গেছে, দাম্পত্য সমস্যায় জর্জরিত সূচনা ও তার স্বামী বেঙ্কটরামনের বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা শেষ পর্বে পৌঁছেছে। ২০১০ সালে বিয়ে হয় তাদের। পরে ২০১৯ সালে তাদের কোলজুড়ে আসে ছেলের সন্তান। ২০২১ সাল থেকে আলাদা থাকছিলেন সূচনা ও বেঙ্কট। গত বছর আগস্টে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের মামলা করেন তিনি।

অভিযোগ ছিল, বেঙ্কট ছেলেকে ও তাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। পাশাপাশি, স্বামীর থেকে প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা খোরপোশের দাবিও করেন সূচনা। তিনি আদালতে জানান, তার স্বামী বছরে কোটি টাকারও বেশি অর্থ উপার্জন করেন।

এরপর, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মামলা চলাকালে প্রতি মাসে সূচনাকে ২০ হাজার টাকা করে খোরপোশ দিতে বেঙ্কটকে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি, সূচনার বাড়িতে ঢুকতে, ফোন বা মেসেজ করে যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করা হয়। একই সঙ্গে, প্রতি রোববার ছেলের সঙ্গে বাবাকে দেখা করার অনুমতিও দেন আদালত। সম্ভবত, আদলতের এই রায়েই ভেঙে পড়েছিলেন সূচনা।

তদন্তকারীরা আগেই অনুমান করেছিলেন, বাবার সঙ্গে দেখা হওয়া আটকাতেই রাগের বশে ছেলেকে খুন করতে পারেন সূচনা। হোটেলের ঘর থেকে চিঠি উদ্ধার হওয়ার পর সেই অনুমান আরও কিছুটা পোক্ত হল বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

গোয়ার ক্যান্ডোলিম বিচে যে হোটেলে ছেলেকে নিয়ে উঠেছিলেন সূচনা, সেই ঘর থেকেই ওই ছুরি, তোয়ালে, বালিশ ও দু’টি কাশির সিরাপের খালি বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, সূচনা ওই হোটেলে উঠেছিলেন গত ৬ জানুয়ারি। হোটেল ছেড়েছিলেন ৮ জানুয়ারি। ছাড়ার পর হোটেলের এক কর্মী ওই ঘরে গিয়ে রক্তের দাগ লেগে থাকা তোয়ালে উদ্ধার করেন।

রাত ১টা নাগাদ সূচনা তড়িঘড়ি হোটেল ছাড়ার সময়েই কর্মীদের সন্দেহ হয়েছিল। এরপর ঘর পরিষ্কারের সময় তোয়ালেতে রক্তের দাগ দেখে সেই সন্দেহ তীব্র হওয়ায় পুলিশে খবর দেওয়া হয় হোটেল থেকে। পুলিশকে জানানো হয়, হোটেল বুক করার সময় সূচনার সঙ্গে তার ছোট্ট ছেলে ছিল। কিন্তু বেরোনোর সময় শিশুটিকে দেখেননি হোটেলের কর্মীরা। সূচনার হাতে থাকা ভারি ব্যাগটির কথাও হোটেল কর্মীরাই জানিয়েছিলেন।

পরে তদন্তকারীরা সূচনার সঙ্গে যোগাযোগ করে তোয়ালেতে রক্তের দাগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঋতুস্রাবের কারণে ওই দাগ লেগেছে তোয়ালেতে।

পুলিশ সূত্রে খবরে বলা হয়েছে, মৃত শিশুর ময়নাতদন্ত করেছেন যিনি, সেই চিকিৎসক জানিয়েছেন, সম্ভবত কাশির ওষুধ বেশি পরিমাণে খাইয়ে ছেলেকে বেহুঁশ করে নাকে-মুখে বালিশ, তোয়ালে চাপা দিয়ে বা তার জাতীয় কিছু গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তার পরে সম্ভবত হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন সূচনা। কিন্তু পরে মন বদলান। সেখান থেকে তার হাতে ক্ষত হয়ে থাকতে পারে। তবে খুনের কথা এখনও স্বীকার করেননি গোয়ার মাপুসা জেলে বন্দি মা সূচনা। বার বার বলছেন, ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান ছেলে মারা গেছে।

প্রসঙ্গত, ভারতের বেঙ্গালুরুর এক স্টার্টআপ সংস্থার সিইও সূচনা শেঠ। বর্তমানে তাকে নিয়ে ভারতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। গত সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে নিজের শিশুপুত্রকে খুনের অভিযোগ ওঠে।

এনএইচ