মেট্রোরেল নির্মাণেও বাধা এসেছিল: প্রধানমন্ত্রী
Share on:
মেট্রোরেল নির্মাণেও বাধা এসেছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা কাজে বাধা দেয়া দেশের কিছু মানুষের চরিত্র শুধু পদ্মা সেতু নয়, মেট্রোরেল নির্মাণেও বাধা এসেছিল। এগুলো যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।
সোমবার (৯ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মেট্রোরেল প্রসঙ্গে তিনি এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রাথমিকভাবে বিজয় সরণির মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের রুট তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে আমার ঘোর আপত্তি ছিল। তা হলে আমাদের তেজগাঁও বিমানবন্দর বন্ধ করে দিতে হবে যেটির ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়ে রয়েছে। একটা তৈরি করা এয়ারপোর্ট সেটা কখনো নষ্ট হোক আমি চাইনি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৮ সালের বন্যায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দর বন্যার পানিতে চলে যাওয়ায় সব ত্রাণসামগ্রী এই বিমানবন্দর দিয়ে এসেছিল। তাছাড়া, এখানে ঘন কুয়াশায় কখনো কখনো বিমান চলাচল ব্যবহৃত হয়, গতকালও সাতটি প্লেন কলকাতায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তেজগাঁও বিমানবন্দরটা কখনো বন্যা কবলিত হয় না এবং এখানে কুয়াশার পরিমাণটাও খুব কম। কিন্তু এই এয়ারপোর্টকে বন্ধ করে দিয়ে এখানে হাউজিং নির্মাণের প্রস্তাবও আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণীরা দিয়েছিলেন।
সরকার যখন প্ল্যানেটোরিয়ামের জন্য ডিজাইন করেছিল, তখন এর গম্বুজটা অনেক ওপরে করার কথা ছিল। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সেই উচ্চতা কমিয়েছি। যদি উচ্চতা ৬০-৭০ ফুট অতিক্রম করে তবে এটি (তেজগাঁও বিমানবন্দরের) এয়ার ফানেলে পড়ে যাবে। বিমান ওঠানামার জায়গাটা কিন্তু রাখতে হবে।
মেট্রোরেলের রুট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি পুরানো অ্যালাইনমেন্ট কার্যকর করা হয় তবে সরকারকে ২২টি ভবন ভেঙে ফেলতে হতো। সে কারণেই আমি খামার বাড়ি এলাকা ব্যবহার করে নতুন রুট প্রস্তাব করেছি। যদিও আমাদের আঁতেল শ্রেণির তীব্র আপত্তি ছিল সংসদ ভবন নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে, খেজুর বাগান নষ্ট হবে। তাছাড়া, এই খেজুর বাগান আমাদেরই লাগানো ছিল।
তিনি জানান, লুই কানের ডিজাইন নিয়ে এসে সে সময় তিনি দেখলেন সংসদ ভবনের পাশে যে দুটি মাঠ রয়েছে তার জায়গা এই ডিজাইনে পড়ে না। তাছাড়া এই বাগানও নষ্ট হবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেল রুট সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সেই সময় অনেকে মেট্রোরেলের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনটি তার বাঁক এবং অবতরণের জায়গার জন্য ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে সরকারপ্রধান বলেন, আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি, স্টেশনটিকে অক্ষত রেখে আমরা কীভাবে এটি করতে পারি। প্রয়োজনে মেট্রোরেল স্টেশনের উপর দিয়ে যাবে বা তার বাঁক নেওয়ার জন্য অন্য জায়গা খুঁজে নেবে। এখন, এটি সেইভাবে বাস্তবায়ন করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক পরিবেশ নষ্ট করবে বলে সেসময় বাধা দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি যে, মেট্রোরেলের কারণে তারা কোনো ঝামেলার সম্মুখিন হবে না। কারণ এটি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি কোণ দিয়ে যাবে যার কোনো শব্দ থাকবে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে।
হলি আর্টিজান আক্রমণের পরে মেট্রোরেলের কাজ বন্ধ করা হয়েছিল। কারণ মেট্রোরেল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সাত জাপানি পরামর্শক নিহত হয়েছিলেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা জানান, সেই সময়ে সমস্ত জাপানিরা তাদের স্বদেশে ফিরে গিয়েছিল। সেময় তিনি নিজে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছে তার সমবেদনা প্রকাশ করেছিলেন। তার জাপান সফরে সাতজন নিহত জাপানি কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি যা যা করণীয় সরকার তা করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জাপান সরকার তার অনুরোধ বিবেচনায় নেয়।
তিনি স্মরণ করেন, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন মেট্রোরেলের কাজ ফের বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ‘কিন্তু সেই সময় ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম ব্যবহার করে আমাদের প্রকৌশলীরা সঙ্গে মিলে কাজটি ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে গেছে।’
পদ্মা সেতু নিয়েও নানা ঢালাও সমালোচনা হয়েছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই সেতুতে কে উঠবে আর কোথা থেকে এর টাকা উঠবে! যারা এসব বলেছিল তাদের বলতে চাই—ইতোমধ্যে কয়েকমাসের মধ্যে ৪শ’ কোটি টাকা উঠে গেছে। আসলে প্রত্যেকটা কাজে বাধা দেওয়াটা আমাদের কিছু মানুষের চরিত্র।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আততায়ীর গুলিতে নিহত হতে হওয়ায় তিনি তাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। পাশাপাশি মেট্রোরেল বাস্তবায়নে জাপান সরকারকে, মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় জনগণকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আজকে তিনি মানুষের মাঝে বিপুল উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস দেখছেন এই মেট্রোরেল নিয়ে। যাত্রী ও হজযাত্রীদের সুবিধার্থে সরকার বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করছে।
এমআই