tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অর্থনীতি প্রকাশনার সময়: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ২০:৫৫ পিএম

বাড়তি প্রণোদনা আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্সে


Untitled-1-2305211542

#দশদিনে রেমিট্যান্স এলো ৭৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার ডলারের বাজারে অস্থিরতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বেঁধে দেওয়া দামে ব্যাংক ও মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষত, খোলাবাজারে ডলারের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। খোলাবাজারে ডলারের নিয়ন্ত্রণ এখন কালোবাজারিদের দখলে।


শনিবার পর্যন্ত খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২৭ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এরপরও ক্রেতারা চাহিদা মতো ডলার পাচ্ছেন না। গত বেশ কদিন ধরেই প্রতি ডলার লেনদেন চলছে ১২৪ টাকা পর্যন্ত। গত সপ্তাহেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, রিজার্ভ থেকে আর কোনো ডলার বিক্রি করা হবে না। এ অবস্থায় ডলার সংকট নিরসনে সরকারের কোনো উদ্যোগই যেন কাজে আসছে না। তবে এক্ষেত্রে আশা জাগাচ্ছে রেমিট্যান্স। সংকটময় পরিস্থিতিতে বাড়তে শুরু করেছে ডলার আয়ের অন্যতম উৎস রেমিট্যান্স।

সম্প্রতি রেমিট্যান্স কেনায় বাড়তি প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এতে প্রতি ডলার রেমিট্যান্স থেকে প্রবাসীদের স্বজনরা পাচ্ছেন বাড়তি প্রণোদনা। এতে রেমিট্যান্সে প্রতি ডলারের দাম হয়েছে ১১৫ টাকা। যদিও সংকট থাকায় গোপনে আরও বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনছে ব্যাংক, যা খোলা বাজারের দরের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি হুন্ডি দরের প্রায় কাছাকাছি। সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এখন হুন্ডি (অবৈধ পথ) এড়িয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এতে রেমিট্যান্সের পালে লাগছে নতুন হাওয়া। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি ডলার সংকট কমিয়ে রিজার্ভ বাড়াতে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে দেশে প্রায় ৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। প্রতিদিন গড়ে আসছে প্রায় ৮ কোটি (৭ দশমিক ৯৪ কোটি) ডলার। রেমিট্যান্সের এ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে মাস শেষে তা রেকর্ড ২৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সবশেষ গত আগস্টে একক কোনো মাসে দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

ডলারের সরবরাহ ও বাজারদরের বর্তমান হালচাল এবং আগামী দিনে সংকট ভালোরের ব সম্ভাবনা জানতে যোগাযোগ করা হলে মেঘনা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সোহেল আর কে হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য বেড়েছে। আর ম বৈদেশিক বাণিজ্যে ডলার ‘নাম্বার ওয়ান' মুদ্রা। যে কয়টি কারণে ডলারের সরবরাহে সংকট তৈরি ব্য হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো বৈদেশিক ব্যয়ের তুলনায় রেমিট্যান্সপ্রবাহ ও রপ্তানি আয় কম। এ ছাড়া জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিও এ সংকটের অন্যতম কারণ। সোহেল আর কে হোসেন বলেন, “ভূরাজ- জম নৈতিক কারণে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট সংকটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার বৃদ্ধি আমাদের মতো এল স্বল্পোন্নত দেশে ডলারের সরবরাহে সংকট তৈরি রপ্তা করেছে।'

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার বৃদ্ধি ও সরকার সরব কর্তৃক বন্ড ইস্যু করায় বিনিয়োগকারীরা সেখানে মনোযোগী হয় ও দেশে দেশে থাকা মার্কিন ডলার ট্রান্সফার করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়।'

মেঘনা ব্যাংকের সিইও আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আশার বিষয় হলো যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি কমে এসেছে। আগামীতে আরও কমবে। সুতরাং খুব কম সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রে সুদহারও কমবে। তখন ডলারের সরবরাহ আবারও ইউরোপ ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বৃদ্ধি পাবে।” এদিকে সংকটে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলারের বিলসমূহ পরিশোধ না করার অভিযোগও প্রতি মাসে বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত পাঁচ মাসে বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলারের বিলসমূহ পরিশোধ না করার শতাধিক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে আসা ৭৯ কোটি ৪৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪ কোটি ৯২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত এক ব্যাংকের (বিকেবি) মাধ্যমে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭২ কোটি ৩২ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এসময়ের মধ্যে ১০টি ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা দুই হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। যা কোনো একটি অর্থবছরে এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারে ১১৫ টাকার বেশি নয়: রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিপরীতে ১২২ টাকার বেশি দাম দেওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে আসার পরই জরুরি বৈঠকে বসে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকের সংগঠন বাফেদা। গত বুধবার (৮ নভেম্বর) যৌথ বৈঠকে নতুন সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠন দুটি। সিদ্ধান্ত মোতাবেক, এখন থেকে প্রবাসী আয়ে ব্যাংকের নিজস্ব প্রণোদনাসহ ডলারের দাম কোনোভাবেই ১১৫ টাকার বেশি দেওয়া যাবে না।

এদিকে, নানা উদ্যোগেও কাটছে না ডলার সংকট। বিপরীতে বেড়েই চলেছে ডলারের দাম। এবিবি ও বাফেদা গত ১ সেপ্টেম্বর প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা বাড়িয়ে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে। এর সঙ্গে রেমিট্যান্সে ব্যাংকগুলো নিজেদের মতো করে প্রণোদনা দিতে পারবে বলে জানানো হয়। তবে বেশিরভাগ ব্যাংক এ দামে ডলার পাচ্ছে না। এখন ১২২ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত দামে ডলার কিনছে অনেক ব্যাংক।

এনএইচ