tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অর্থনীতি প্রকাশনার সময়: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:০৩ পিএম

আমানতের সুদের সীমা প্রত্যাহার চায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান


20220912_131244

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ও ঋণে বেঁধে দেওয়া সুদহারের সীমা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিএলএফসিএ)। মূলত মূল্যস্ফীতি বাড়তির দিকে থাকায় আমানতের সুদহারের সীমা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এ খাতের প্রধান নির্বহীদের সংগঠনটি।


রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এমন দাবি জানিয়েছে বিএলএফসিএ। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

কয়েক মাস আগেও বিএলএফসিএ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে আমানত ও ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিল। গত এপ্রিল মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়। ওই নির্দেশনায় ঋণে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ এবং আমানতে ৭ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করা হয়। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।

বিএলএফসিএ নেতারা আরও কিছু দাবি নিয়ে রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সংগঠনটির নেতৃত্ব দেন বিএলএফসিএ'র চেয়ারম্যান ও আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিনুল ইসলাম।

বৈঠকে উপস্থিত এক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী জানান, ‘আমরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ও ঋণের সুদহারের সীমা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। গভর্নর আমাদের এ অনুরোধ পর্যালোচনা করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।’

এর আগে গত ২৫ জুলাই বিএলএফসিএ'র পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বিএলএফসিএ জানায়, বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মুদ্রাবাজারে সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলো সাড়ে ৬ শতাংশেরও বেশি সুদহারে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করছে। আবার বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্যের ঘাটতি ও তহবিল সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক ৭ শতাংশেরও বেশি সুদহারে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করছে। এ পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭ শতাংশ সুদহারে আমানত সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আবার মূল্যস্ফীতির বর্তমানের ঊধ্র্বহারের কারণে শিগগির ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি সুদে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ অসম্ভব হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে ব্যাংকের জন্য জরুরি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট হতে তারল্য সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ থাকলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সুযোগ নেই। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করে থাকে। যেখানে ঝুঁকির হার বেশি থাকায় ঋণের সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি রাখতে হয়। তফসিলি ব্যাংক বিনা সুদে চলতি আমানত কিংবা স্বল্প সুদে সঞ্চয়ী আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে তহবিল ব্যয় কমাতে সক্ষম হলেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সে সুযোগ নেই। বৈদেশিক বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়সহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবার বিপরীতে ব্যাংকগুলো উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সুদ বহির্ভূত ফি, কমিশন, চার্জ ইত্যাদি আয় করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে সুদ বহির্ভূত আয় সীমিত।

আবার বিভিন্ন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত ঋণ ও স্বল্পমেয়াদী তহবিলের বিপরীতে উচ্চহারে সুদ আদায় করছে। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত ঋণের সর্বোচ্চ হার ১১ শতাংশ কার্যকর হওয়ায় আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে আর্থিক সক্ষমতার অবনতি ঘটতে পারে। যেখানে বিনিয়োগকারীরা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা হারাবে এবং আমানত সংগ্রহের প্রচেষ্টাও ব্যাহত হবে। যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হবে।

এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সুদের হার নির্ধারণের প্রস্তাব করে বিএলএফসিএ। যেখানে আমানতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার হবে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির হারের অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ। আর ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুদহার হবে বিদ্যামান মূল্যস্ফীতির হারের অতিরিক্ত সাড়ে ৬ শতাংশ, যা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। ক্রেডিট কার্ড ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদত্ত ন্যানো লোনের ক্ষেত্রে সুদহার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ নির্ধারণ এবং ব্যাংকগুলো কর্তৃক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রদত্ত যে কোনো তহবিলের কার্যকরী সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ নির্ধারণের অনুরোধ জানানো হয়।

এমআই