বিশ্বজুড়ে ইফতারে বৈচিত্র্য
Share on:
রমযান মাসে মুসলিমগণ সারাদিন রোজা রাখার পর, সূর্যাস্তের সময় ইফতার গ্রহণ করেন। রমজান মাসে সবাই একত্রে বসে ইফতার গ্রহণ করেন। খেজুর খাবার মাধ্যমে ইফতার শুরু করা সুন্নত। রোজার নিয়ম সব দেশের মুসলমানদের জন্য একই রকম হলেও দেশ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস একেক রকম। বিভিন্ন দেশের মানুষ নানাভাবে নানা ধরনের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সম্পন্ন করেন ইফতার। কোথাও কোথাও একই দেশে অঞ্চলভেদে ইফতার সামগ্রীতেও পার্থক্য দেখা যায়। তবে সাধারণভাবে সব দেশের ইফতারে ফল, শরবত, খেজুর, পানি, দুধ বেশ প্রচলিত। এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় আইটেম।
১. সৌদি আরব: সৌদি আরবের ইফতার আয়োজন বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। সৌদি আরবের লোকেরা পুষ্টিকর খাবারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সেখানে ইফতারে যে খাবারগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো উন্নত মানের খেজুর, বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, ভিমতো (আঙ্গুর রসের শরবত), তামিজ (একধরনের রুটি), বোরাক (মাংসের পিঠা), মানডি (ভাত ও মুরগির মাংসের সমন্বয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার) লাবাণ ইত্যাদি।
এছাড়া ‘খাবসা’ নামক একটি খাবার সৌদি আরবে বেশ জনপ্রিয়। খাবসা সাধারণত মুরগি কিংবা ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি করা হয়। ইফতারের টেবিলে খাবসার গুরুত্ব থাকে সবচেয়ে বেশি।
২. মিশর: মিশরীয়রা আত্মীয়স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করতে পছন্দ করেন। রমজান মাসে দেশটিতে প্রতিটি বাড়ি এবং সড়কে নানা রঙের বাতিতে আলোক সজ্জ্বিত করা হয়। বেশিরভাগ মিশরীয় পরিবারের ইফতারে আইটেমে ফুল মুদাম্মাস নামক একটি খাবার থাকে, যা রুটি দিয়ে খাওয়া হয়। প্রধান ইফতার সামগ্রীর মধ্যে আরো রয়েছে কোনাফা ও কাতায়েফ (আটা, মধু, বাদাম ও কিসমিসের সমন্বয়ে তৈরি কেক জাতীয় খাদ্য বিশেষ), ককটেল খুশাফ, মলোকিয়া, খেজুর ইত্যাদি।
ইফতারের টেবিলে মিশরের বিখ্যাত একটি পানীয় হচ্ছে ‘কামার আল দিনান্দ আরাসি’। শুকনা আখরোট সারাদিন পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে তৈরি করা হয় কামার আল দিনান্দ আরাসি। ‘খাবোস রমজান’ নামক একধরনের রুটি মিশরে বেশ জনপ্রিয়। এটি কিছুটা অর্ধচন্দ্রাকৃতির হয়ে থাকে।
৩. মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ায় সাধারণত শুকনো খাবার বা খেজুর দিয়ে মুসলমানেরা রোজা ভাঙে। এছাড়া দেশীয় কিছু বিখ্যাত ইফতার আইটেম তো থাকবেই।
মালয়েশিয়ার লোকদের একটি স্থানীয় ইফতারে আইটেমের নাম হচ্ছে ‘বারবুকা পুয়াসা’। এটা আখের রস এবং সোয়াবিনের দুধ দ্বারা তৈরি একধরনের বিশেষ মিষ্টান্ন সামগ্রী। এছাড়া মালয়েশিয়ার ইফতারে থাকে নাসি আয়াম, পপিয়া বানাস, আয়াম পেরিক, লেমাক লাঞ্জা ইত্যাদি।সঙ্গে বিভিন্ন স্থানীয় খবর তো আছেই।
মালয়েশিয়ায় মসজিদ থেকে রোজাদারদের ‘বুবুর ল্যাম্বাক’ নামক একটি খাবার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। চাউল, মাংস, নারিকেলের দুধ, ঘি ইত্যাদি দিয়ে বুবুর ল্যাম্ব্যাক তৈরি করা হয়। প্রায় পাঁচ দশক আগে কুয়ালালামপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে এই খাবারটি বিতরণের প্রচলন শুরু হয়।
৪. ইরান: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য এবং আনন্দ উদ্দীপনার মাধ্যমে রমজান মাস পালন করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শিয়া অধ্যুষিত মুসলিম দেশটি। ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানের ইফতার সামগ্রীতে ফলমূল এবং মিষ্টান্ন সামগ্রী একটু বেশি গুরুত্ব পায়।
দেশটিতে ইফতার সামগ্রীতে ফল হিসেবে খেজুর, আপেল, চেরি, আখরোট, তরমুজ, তেলেবি, আঙ্গুর, কলা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া মিষ্টান্ন সামগ্রীর মধ্যে মধু, পনির, দুধ, রুটি, চা উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া ইরানের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী জিলাপি। পাশাপাশি ‘শোলে জার্দ’ নামক একটি খাবার বেশ জনপ্রিয়। চিনি, ছোট চাল, আর জাফরান দিয়ে এই খাবারটি রান্না করা হয়।
৫. পাকিস্তান: মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে পাকিস্তানে রমজান মাস পালন করা হয় বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে। ইফতারের টেবিল সাজাতে থাকে হরেক রকমের খাবার।
রুটি এবং মাংস পাকিস্তানীদের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। রমজান মাসে ইফতারের ক্ষেত্রেও এ খাবারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ইফতারের টেবিল সাজাতে আরও গুরুত্ব পায় টিক্কা সমুচা, ব্রেড রোল, চিকেন রোল, তান্দুরি কাটলেট, নুডুলস কাবাব, সুফিয়ানী বিরিয়ানি, গোলাপী কাবাব ইত্যাদি।
মিষ্টান্ন হিসেবে বিভিন্ন খাবার স্থান পায় সেদেশের ইফতার টেবিলে। যেমন- বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, সালাদ, করাচি ফালুদা ইত্যাদি। ঝাল জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে নিমকি, সমুচা পরোটা ইত্যাদি।
এইচএন