বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদেরকে কুরআনের রঙে রঙিন করতে হবে : মুজিবুর রহমান
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বর্তমান সময়ের বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদেরকে কুরআনের রঙে রঙিন করতে হবে।
জামায়াতের রুকনদের কুরআনে বর্নিত গুণাবলী সমুহ নিজেদের চরিত্রে ফুটিয়ে তুলে সমাজের মানুষের মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে।
শুক্রবার ( ২৪ই মে) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী সদস্য (রুকন) শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আখেরাতের সফলতায় মুমিন জীবনের প্রকৃত সফলতা। এজন্য একজন ঈমানদার হিসেবে দুনিয়ার সুযোগ সুবিধা আমাদের জন্য অগ্রগণ্য না। আমাদের মূল টার্গেট হবে আখেরাতে চূড়ান্ত সফলতা। তাই জামায়াতে ইসলামীর রুকনদের আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়ে জীবন পরিচালনা করতে হবে। সকল কাজে আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং উলিল আমরের নিকট আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদান করতে হবে। আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে ময়দানে সাহসিকতার সাথে ভূমিকা পালন করতে হবে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বাইয়াত বা শপথ ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। মানব জীবনে সফলতার জন্য বাইয়াতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাইয়াত বিহীন মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু। রুকনরাই এই সংগঠনের প্রাণ। একজন রুকন হিসেবে আমাদের পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতে হবে, বিনয়ের সাথে পথ চলতে হবে, আমিত্ব পরিত্যাগ করতে হবে। ইকামাতে দ্বীনের কাজ একটি ফরজ ইবাদত। ইকামাতে দ্বীনের কাজকে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য জামায়াতের সদস্যদের (রুকন) তাদের কৃত শপথের আলোকে জীবন পরিচালনা করতে হবে।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, মানব জীবনের প্রথম ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। ব্যক্তি পরিবারের একটা অংশ। আর পরিবার সমাজের অংশ ও ভিত্তিপ্রস্তর। সমাজকে বাদ দিয়ে যেমন রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না, তেমনি পরিবার ছাড়া সমাজও অকল্পনীয়। এজন্য ইসলাম পারিবারিক জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। ফলে জামায়াতের রুকনদের নিজেদের পরিবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে। জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে মুক্তির জন্য পরিবারের সদস্যদের ইসলামের সু-মহান আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। স্ত্রী-সন্তানদের ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।
এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বা ফ্যাক্টর হলেও জামায়াত যে আদর্শকে ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য জামায়াতের জনশক্তিদের টার্গেট ভিত্তিক ও পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিনত করে রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। একটি সফল বিপ্লবের জন্য জনমত তৈরীর পাশাপাশি যোগ্য লিডারশীপ তৈরী করতে হবে। জামায়াত কর্মীদের মানবসেবায় উজ্জীবিত হয়ে সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানবজাতির হেদায়াতের জন্য। আমাদের জীবনে উত্থান-পতন, সফলতা-বিফলতা, বিপদ-আপদ অনেক কিছুই আসবে, এসব ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করে আল্লাহর গোলাম হবার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে আমাদেরকে আনুগত্যের সর্বোচ্চ নজির স্থাপন করতে হবে। যেকোনো কঠিন পরিস্থিতেও ইকামাতে দ্বীনের কাজে সক্রিয় থেকে ইসলামের বিজয়কে তরান্বিত করতে হবে।
অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশে আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি এবং জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে এদেশে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করতে চাচ্ছে। এজন্য জামায়াতের জনশক্তিদের জনগণের সামনে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা, ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা, ইসলামী বিচার ব্যবস্থা ও ইসলামী মূল্যবোধকে ব্যপকভাবে তুলে ধরতে হবে। আর সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করে গণভিত্তিকে মজবুত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আন্দোলনের শপথের জনশক্তিদের নিয়ে এই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য হচ্ছে, সংগঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যোগ্যতা সম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা। নিজেদেরকে একজন পরিপূর্ণ মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো। আল্লাহর দেওয়া বিধানের সাথে আমাদের সম্পর্ক যতো মজবুত হবে ইকামতে দ্বীন বিজয়ের কাজ ততো সহজ হয়ে উঠবে। সংগঠনকে শক্তিশালী ও বিজয়ী আন্দোলনে পরিণত করতে নিজেদের গণমুখি চরিত্রকে উদ্ভাসিত করতে হবে। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণকে ইসলামী আন্দোলনের রাজধানীতে পরিণত করতে মহানগরীর প্রতিটি পাড়া মহল্লায় সংগঠনকে সম্প্রসারণ ও মজবুত করতে হবে। নিজেদের পরিশুদ্ধ করে জান-মালের কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত শিক্ষা শিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। শিক্ষাশিবিরে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির ও এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন, মুহাম্মদ কামাল হোসাইন ও ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন ও ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম সহ মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও বিভিন্ন থানার আমীর-সেক্রেটারীবৃন্দ।
প্রেসবিজ্ঞপ্তি//এমএইচ