tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ২২ অগাস্ট ২০২৪, ১৫:৫৯ পিএম

ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ৯ জেলা


image-287649-1724307595

ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ দেশের নয়টি জেলা।


মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙনস্থল দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে থাকায় একের পর এক জনপদ ডুবছে। বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন এসব জেলার বেশির ভাগ মানুষ। এ ছাড়া বন্যার পানিতে গ্রামীণ সব সড়ক ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।

বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও খাগড়াছড়ি।

কুমিল্লা: কুমিল্লার বুড়িচংয়ে গোমতী নদীর পানিতে কিং বাজেহুড়া গ্রামটি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বানভাসিদের সাহায্যে কাজ করছেন স্থানীয় প্রশাসন। এ ছাড়া, বুধবার বিকেলে তিতাস উপজেলার আসমানিয়া বাজারসংলগ্ন কাঠের সেতু এলাকায় তীব্র স্রোতে গোমতী নদীর ওপর নির্মিত একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে গেছে।

ফেনী: এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বন্যায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ফেনীর তিন উপজেলা পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায়। প্লাবিত হয়েছে এই তিন উপজেলার শতাধিক গ্রাম, পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা পরিস্থিতিতে ডিঙি নৌকায় পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা শুরু করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। উদ্ধারে নামেন ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও।

ফেনীর আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন ফেনীবাসী। গত ৩৬ বছরে অনেকবার বন্যা হলেও এ ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি। এবারের বন্যায় পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

নোয়াখালী: নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভেসে গেছে কয়েকশ’ মাছ ও মুরগির খামার, আমনের বীজতলা এবং শাকসবজির ক্ষেত। ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়েছে গাছপালা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকা। গেলো ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

নোয়াখালী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, কাজি কলোনি, লইয়ার্স কলোনি, রশিদ কলোনি ও কৃষ্ণরামপুর এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়ির আঙিনায় বৃষ্টির পানি থই থই করছে।

লক্ষ্মীপুর: কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরে চারটি পৌরশহরসহ নিম্নাঞ্চলের ৪০টি এলাকা। ২১ আগস্ট সকাল থেকে মেঘনায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি লোকালয় প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ বাসিন্দা।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পুরো ফটিকছড়ি উপজেলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া রাউজান উপজেলার প্রায় আটটি ইউনিয়ন এবং হাটহাজারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ভোর ছয়টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় সীতাকুণ্ডে বৃষ্টির পরিমাণ ১৯৩ মিলিমিটার।

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে টানা বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ছড়া ও নদ-নদী দিয়ে তীব্র বেগে ভারত থেকে আসছে পানি। মনু নদের পানি বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য প্রধান তিন নদ-নদী ধলাই, জুড়ী ও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর বাঁধ ভেঙে, উপচে ৬২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে বৃষ্টি, উজানের পাহাড়ি ঢল সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়ছে। সুরমা নদীর পানি বুধবার ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নদী ও হাওর এমনিতেই ভরা বর্ষার পানিতে টইটম্বুর। তাই পানি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভেঙে পড়েছে সিঙ্গিনালা গ্রামের ৪০ বছরের পুরানো সেতু। এতে মহালছড়ির সঙ্গে মুবাছড়ি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে রাঙামাটির সাজেক, লংগদু ও বাঘাইছড়িতে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।

জেলায় পানিবন্দি এখনো প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার। বন্যায় ভেসে গেছে পুকুরের মাছ; নষ্ট হয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার, মোমবাতি ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

হবিগঞ্জ: টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জের খোয়াই নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটায় খোয়াই নদের মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে আছে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ।

এসএম