tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ০১ জুন ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম

ইসরায়েলকে অস্ত্র দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডর্টমুন্ডের চুক্তি


image_92928_1717222404
ইসরায়েল ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে ডর্টমুন্ড। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম মর্যাদাকর প্রতিযোগিতার একটি হিসেবে ধরা হয় উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে। ইউরোপের ক্লাবগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রতিযোগিতার এবারের আসরের ফাইনাল আজ।


বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় মাঠে নামবে প্রতিযোগিতাটির রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ ও জার্মান ক্লাব বুরুশিয়া ডর্টমুন্ড। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসের সেরা ক্লাবকে হারাতে মুখিয়ে আছে বুরুশিয়া। তবে ওয়েম্বলিতে রাতের ফাইনালের আগে বড় ধরণের বিতর্কে জড়িয়েছে জার্মান ক্লাবটি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকা ক্লাবটি সম্প্রতি জার্মানির সবচেয়ে বড় অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রাইনমেটালের সঙ্গে স্পন্সরশিপ চুক্তির ঘোষণা করেছে। রাইনমেটালের তৈরি অস্ত্র গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনবাসীর ওপর ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বুরুশিয়ার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

বুধবার (২৯ মে) এই চুক্তি ঘোষণার পর থেকেই ফুটবল সমর্থক, শান্তিপ্রিয় গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া আসছে। যার বেশিরভাগই সমালোচনা।

ডর্টমুন্ডের চুক্তির ঘোষণার পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, যেখানে অসংখ্য সমর্থক ক্লাবের প্রতি তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে। এক্সে ডর্টমুন্ডের পোস্টের নিচে ‘আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত’ থেকে শুরু করে সমর্থকদের ঠকানোর অভিযোগ পর্যন্ত ছিল।

একজন ব্যবহারকারী উল্লেখ করেছেন, “আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা করার নামে আপনার ঘৃণ্য অর্থ উপার্জন বিক্রি করা কপটতা ছাড়া আর কিছু নয়।” এছাড়াও আরও একটি বিদ্রূপাত্মক ভিডিও যেখানে একটি ট্যাঙ্কের মাধ্যমে একটি ফুটবল বিতরণ করা হচ্ছে তাও দেওয়া হয়। যা সমর্থকদের মনে অসন্তোষের চিত্র তুলে ধরে।

জার্মান পিস সোসাইটি, শান্তিপ্রিয় এবং যুদ্ধবিরোধীদের একটি জোট, এই চুক্তি বাতিল করার জন্য একটি পিটিশন চালু করেছে। সোসাইটির রাজনৈতিক ব্যবস্থাপক মাইকেল শুলজ ভন গ্লাসার এই চুক্তির সমালোচনা করে বলেন, “একটি অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে স্পন্সর হিসেবে গ্রহণ করা ডর্টমুন্ডের মূল্যবোধের সাথে যায় না - ফুটবলের সাথেও না।”

এই চুক্তি রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যপক সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক এই বিতর্ককে স্বীকার করে বলেন যে এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিফলন। তিনি বলেন, “রাইনমেটাল এখন একটি ফুটবল ক্লাবকে স্পন্সর করছে, এটি অবশ্যই অস্বাভাবিক, তবে এটি আমাদের অবস্থানকে নির্দেশ করে।” তিনি আরও যোগ করেন যে প্রতিরক্ষা শিল্পের সাথে পাবলিক চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে স্থবির অবস্থা ছিল বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা আর ধরে রাখা সম্ভব নয়।

তবে এই বাস্তবতাবাদী অবস্থান সমর্থকদের মধ্যে হতাশা দূর করতে পারেনি যারা বিশ্বাস করেন যে স্পন্সরশিপ ডর্টমুন্ড এবং ফুটবলের নৈতিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। এছাড়াও রাইনমেটালেল অস্ত্র গাজায় ব্যবহার নিয়েও বেশ সমালোচনা হয়েছে। দলটি এরকম প্রতিষ্টানের সাথে চুক্তি ক্লাবটির সমর্থকরা মানতে পারছেন না।

ডর্টমুন্ডের প্রধান নির্বাহী হান্স-জোয়াকিম ওয়াটজকে একটি ক্লাব বিবৃতিতে ‘দায়িত্ব নেওয়া’ শিরোনামে স্পন্সরশিপের পক্ষে যুক্তি দেন। তিনি ইউরোপের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখেন। ওয়াটজকে বলেন ‘আমরা বিশ্বাস করি এটি আমাদের এই মৌলিক বিষয়গুলি রক্ষা করার জন্য খুব কাছ থেকে দেখার সঠিক সিদ্ধান্ত।’

রাইনমেটাল, যার শেয়ার মূল্য ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে ইউক্রেন সংঘাতের সূচনার পর থেকে প্রায় ৫০০% বৃদ্ধি পেয়েছে, জার্মান সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ১০০ বিলিয়ন ইউরোর বিশেষ তহবিল থেকে কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় ৩০ বিলিয়ন লাভ করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কোম্পানির সিইও আর্মিন প্যাপারগার ডর্টমুন্ড চুক্তি সম্পর্কে বলেন, “এই পদক্ষেপটি বি.ভি.বি এবং রাইনমেটালকে একত্রিত করবে, দুই অংশীদার যাদের একই ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, মনোভাব এবং উত্স রয়েছে।”

অবশ্য যদিও এই চুক্তির কিছু সমর্থক রয়েছে তবে সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া প্রাথমিকভাবে নেতিবাচক। সমালোচকরা যুক্তি দেন যে একটি অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা ক্লাবের চিত্রকে কলঙ্কিত করে এবং এর মূল্যবোধকে ক্ষুণ্ন করে।

এনএইচ