চামড়ার ট্রাকে চাঁদাবাজির অভিযোগ, মূল্য না পেয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা
Share on:
সাভারে চামড়ার কাঙ্খিত দাম না পেয়ে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ চামড়া সংগ্রহকারী আলেম-ওলামারাও। এর ওপর পথে পথে চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (১৭ জুন) দুপুর থেকেই ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে পশুর চামড়াবোঝাই ট্রাক প্রবেশ করতে দেখা গেছে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে।
ট্যানারিগুলো ঘুরে দেখা যায়, চামড়া সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। বাড়তি চাপ মোকাবিলার জন্য মৌসুমি শ্রমিকদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।
ঈদুল আজহার নামাজের পর পশু কোরবানি শুরু হয় রাজধানীর অলিগলি ও আশেপাশের এলাকায়। এরপর পশুর সেই চামড়া মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিনে বিক্রি করেন লালবাগের পোস্তায়, কেউ আবার বিক্রি করেন সাভারের আমিনবাজারে। তবে এবার ট্যানারি শিল্পনগরীতে গিয়ে সরাসরি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করতে দেখা গেছে ট্যানারি মালিকদের।
সেখানে মৌসুমি শ্রমিকদের অনেককেই ব্যস্ত দেখা গেছে, লবণ মিশিয়ে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের কাজে।
এবার ঢাকার মধ্যে প্রতি বর্গফুট কোরবানির গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা আর ঢাকার বাইরে নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। একই সঙ্গে ঢাকায় প্রতিটি গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন ১,২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১,০০০ টাকা। তবে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরেও এই দামে বিক্রি করতে দেখা যায়নি কোথাও।
মিরপুরের একটি মাদ্রাসা থেকে সাড়ে ৬০০ চামড়া সংগ্রহ করে ট্যানারিপল্লীতে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাখাওয়াতের মালিকানাধীন কারখানায় নিয়ে যান বেশ কয়েকজন আলেম-ওলামা।
চামড়ার দাম নিয়ে নিজেদের হতাশার কথা জানিয়ে তারা বলেন প্রতিবছরই চামড়ার দাম কমছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আক্ষেপ করে একজন হাফেজ বলেন, দানের এইসব চামড়া দিয়েই তাদের মাদ্রাসা ও এতিমখানা চলে।
সরকার নির্ধারিত দাম দূরের কথা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে প্রতি পিস গরুর চামড়া দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
ঢাকার কদমতলী, লালবাগের পোস্ত ও সাভারের আমিনবাজার ঘুরে চামড়া শিল্পনগরীতে পিকআপবাহী চামড়া নিয়ে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী কেরামত উল্লাহ জানান, সাভারের আমিনবাজার এলাকায় লাঠিসোটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি দল আমিনবাজারের চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন। অন্যথায় চামড়া প্রতি ২০ টাকা করে দাবি করেন। শেষমেষ গুনে গুনে চামড়া প্রতি চাঁদা দিয়ে তাদের সেখান থেকে আসতে হয়েছে।
সালাউদ্দিন কাশেমী নামে একজন হাফেজ জানান, আমাদের কাছ থেকেও ১৩৪০ টাকা চাঁদা নিয়ে তারপরে গাড়ি ছেড়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সরকার নির্ধারিত দামের বালাই যেমন নেই তেমনি সরকার বলেছিল পথে পথে চাঁদাবাজি হবে না। এতিমদের হক মেরে যদি এভাবে চাঁদাবাজি হয় আমরা কোথায় যাব, এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে অবস্থিত আজমির লেদারের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শহীদুল্লাহ বলেন, “এখানে লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া ঢুকছে। এগুলো লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এভাবে অন্তত দুই আড়াই মাস রাখা যাবে। আমরা সরাসরি মাদরাসা থেকে চামড়া কিনছি। আগেই কথা বলা ছিল। সেগুলোই নিচ্ছি। সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, লবণযুক্ত চামড়া ১২০০ টাকা করে। লবণ মাখাতে ২০০-২৫০ টাকা লাগে। এই খরচ বাদ দিয়ে কাঁচা চামড়া কেনা হচ্ছে।”
শহীদুল্লাহ আরও বলেন, “এ বছর ঈদের দিন ও পরের দিন মিলিয়ে পাঁচ লাখের বেশি চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। দুপুরের দিক থেকেই চামড়া ঢুকতে শুরু করেছে। সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।”
চামড়া শিল্পনগরীর প্রস্তুতির বিষয়ে সাভারের বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান রিজোয়ান বলেন, “দুপুর থেকে ২৫ হাজারের বেশি কাঁচা চামড়া ট্যানারিতে ঢুকেছে। এ বছর আমাদের ছয় লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আশা করছি আজ ও আগামীকাল আরও চামড়া ঢুকবে। এ পর্যন্ত চামড়া পরিবহণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাইনি। আমাদের টিম কাজ করছে।”