ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা
Share on:
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ৬৩ শতাংশ পুরুষ ও ৩৭ শতাংশ নারী।
সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই বাড়ছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আর এ কারণে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকাও। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের অবস্থা শোচনীয়।
তবে এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছে ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। এই বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬৪। আর মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ১৯। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে ৬৩ শতাংশ পুরুষ ও ৩৭ শতাংশ নারী।
জানা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ডেঙ্গুতে আটজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর প্রথম ৯ মাসেই ১৬৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে শুধু গত সেপ্টেম্বরেই মারা গেছেন ৮০ জন। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। একই মাসে প্রতি সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি হারে বেড়েছে।
চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩০ হাজার ৯৩৬ জন। আর এ বছর এডিস মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৬৩ জনের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮৮ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে। এরপর ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ নারী ও ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু মৌসুমে শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হলেই দেরি না করে দ্রুত করতে হবে রক্ত পরীক্ষা। শিশুর জ্বর হলে অবশ্যই ডেঙ্গু স্পেশালাইজড কোনো সেন্টার অথবা শিশু হাসপাতাল বা কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপান্ন হতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় গত বছর। তখন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। গত বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেপ্টেম্বরে। ওই সময় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন।
জনস্বাস্থ্যবিদ, কীটতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসকেরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অক্টোবর মাসে আরও বাড়তে পারে। কারণ, রোগটি বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। স্থানীয় সরকারের অব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকারের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ের অভাব বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। তাঁদের পরামর্শ, পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আগে ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারের জোর প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত।
শনাক্ত হচ্ছে না যে বারণে: এদিকে উপসর্গ থাকার পরও এনএস ওয়ান পরীক্ষায় শনাক্ত হচ্ছে না ডেঙ্গু। চিকিৎসকরা বলছেন, উন্নত মানের কিট ব্যবহার না করাই এর কারণ। ফলে মৃত্যুসহ নানা ঝুঁকিতে পড়ছেন রোগীরা। ডেঙ্গু ভাইরাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ধরন, ডেন-টুতেই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক সময় পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে না। ফলে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে গিয়েও তেমন কিছু করার থাকে না। এদিকে পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও উপসর্গ থাকলে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ ডা. এইচ এম নাজমুল আহসান বলেছেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে এনএসওয়ান নেগেটিভ হওয়ার কারণে অনেক রোগী বাসায় থেকে যায়। যখন আমাদের কাছে আসে একদম খারাপ অবস্থায় আসে।’ এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষার জন্য আমরা এনএস ওয়ানের ওপর পরীক্ষার ফলের একদম নির্ভর করি না। আমরা এখন বিভিন্ন রকম উপসর্গ খোঁজার চেষ্টা করি।
সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির বিষয়ে দুই মাস আগেই সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি সিটি করপোরেশন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক রোগী বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগী যেভাবে বাড়তেছে এই হিসেবে সিটি করপোরেশনগুলোকে আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত। তবে সিটি করপোরেশনের দাবি, তাদের চেষ্টার কোন কমতি ছিল না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর খায়রুল আলম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা পুরোদমে কাজ চালাচ্ছি।