শিগগির পুলিশ বাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে হেলিকপ্টার : প্রধানমন্ত্রী
Share on:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন বলেছেন, ‘পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ এভিয়েশন ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমে শিগগির দুটি হেলিকপ্টার যুক্ত হতে চলেছে।’
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্ত্যবে তিনি এসব কথা বলেন। ‘স্মার্ট পুলিশ স্মার্ট দেশ, শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ শুরু হয়।
পুলিশ বাহিনীকে অধিকতর দক্ষ ও পেশাদার করতে সরকার বহুমুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশকে ‘স্মার্ট পুলিশ বাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেই। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করি। পুলিশ, র্যাবসহ সব আইন-শৃঙ্খলা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াই। গত ১৫ বছরে আমরা পুলিশের উন্নয়নে বহুমুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করি। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করেছি। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও দমনে গঠন করা হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন, এমআরটি পুলিশ।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তায় আর্মড পুলিশের ২টি এবং র্যাবের একটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশে এরই মধ্যে ডিএনএ ল্যাব, আধুনিক ফরেনসিক ল্যাব, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এএফআইএস) এবং আধুনিক রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। কয়েকটি বিভাগীয় শহরে এসব ল্যাবের কার্যক্রম চলমান। ভবিষ্যতে সব বিভাগে এ ধরনের ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘সাইবার অপরাধ এবং এর সঙ্গে যুক্ত ফাইন্যানসিয়াল ক্রাইম, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি অপরাধ মোকাবিলায় সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, ডিএমপির সিটিটিসিসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সাইবার অপরাধ দমনে কাজ করছে। পুলিশে একটি পূর্ণাঙ্গ সাইবার পুলিশ ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশ স্টাফ কলেজ এখন আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিসহ পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে আমরা যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা প্রশিক্ষণের উৎকৃষ্ট কেন্দ্রে পরিণত করেছি। আমরা থানা, ফাঁড়ি, তদন্তকেন্দ্র, ব্যারাক, আবাসিক ভবনের জন্য জমি বরাদ্দসহ এসব স্থাপনা নির্মাণে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে ২০ তলা এনসিকম ভবন, এসবি ও সিআইডির আধুনিক ভবন, ১০১টি আধুনিক থানা ভবন নির্মাণ করেছি। আরও অনেক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বর্তমানে চলমান। দশতলা ভবন করে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল আধুনিকায়ন করেছি। বিভাগীয় পর্যায়ে পুলিশ হাসপাতালের উন্নয়নে উদ্যোগ নিয়েছি। ঢাকা বিভাগে একটি বিভাগীয় হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান। অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৫ গুণ। বাজেটের আকার ১২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে কমিয়ে এনেছি। এসময়ে অতি দারিদ্র্যের হার কমেছে ৫ গুণ। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৮ গুণ বেড়েছে। মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ দশমিক ৮ বছর। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পাতাল রেলের কার্যক্রম উদ্বোধন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমাদের সামর্থ্যরে প্রতীক। আমরা ৩২টি জেলা, ৩৯৪টি উপজেলা এরই মধ্যে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছি। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীরও রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান।’
এর আগে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এবার সর্বাধিক সংখ্যক ৪০০ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) এবং রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জীবন উৎসর্গকারী নয়জনের পরিবারের সদস্যদের হাতে মরণোত্তর বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) তুলে দেন শেখ হাসিনা।
অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৩৫ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), ৬০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামলূক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ৯৫ পুলিশ সদস্যকে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)- সেবা এবং ২১০ জনকে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)- সেবা পদকে ভূষিত করা হয়।
বিপিএম সাহসিকতা ও সেবা এবং পিপিএম সাহসিকতা ও সেবা- এই চারটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। যারা এ পদকে ভূষিত হন তাদের নামের শেষে বিপিএম-পিপিএম উপাধি যুক্ত হয়।
এসএম