দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়তে হবে : সেলিম উদ্দিন
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, জামায়াত কোনো ক্ষমতাকেন্দ্রীক, উচ্চাভিলাষী ও গতানুগতিক রাজনৈতিক সংগঠন নয় বরং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জামায়াতে ইসলামী আর্ত-মানবতার কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একই সাথে জামায়াত সমৃদ্ধ জাতি গঠন ও ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায়ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে দাওয়াতি কার্যক্রম সম্প্রসারণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সকলকে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
শুক্রবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের ৪০ নম্বর ওয়ার্ড আয়োজিত ষান্মাসিক রুকন বৈঠক-২০২২-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা চালানো আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলমানদের ওপর ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয় করে দিয়েছেন। হাদিসে রাসূল সা:-এর বর্ণনায় এসেছে, যার মধ্যে দ্বীন কায়েমের যজবা নেই; তার ঈমানই নেই। মূলত, প্রত্যেক মুমিনের জীবনোদ্দেশ্যই হচ্ছে দ্বীন। তাই ঈমানের দাবিতে সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ইসলামী আন্দোলনকে বিজয়ী করার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ সময় তিনি দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য শপথের জনশক্তিকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের পথচলা কখনো মসৃণ ছিল না বরং বিপদসঙ্কুল পথেই দ্বীনের বিজয় অবশ্যাম্ভাবী হয়ে উঠেছে। যুগে যুগে যারাই মানুষের কাছে দ্বীনে হক্বের দাওয়াত দিয়েছেন, কায়েমী স্বার্থবাদীদের পক্ষ থেকে তাদের ওপরই নেমে এসেছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। বিশ্ব নবী হজরত মোহাম্মদ সা: ও তার সাহাবীরা রা: তা থেকে রেহাই পাননি। তিনি কাফিরদের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে শিয়াবে আবি তালিবে তার স্বজন ও সাথীদের নিয়ে দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ ছিলেন। ওই সময় তাদের খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ফলে তারা বাবলা গাছের পাতা খেয়ে নিজেদের ক্ষুধা নিবারণ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাকে ও তার সাথীদের জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করতে হয়েছিল। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে ধৈর্য, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সাথে দ্বীন বিজয়ের প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি জালিমের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সকলকে ময়দানে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের জন্য খুবই উর্বর। জনমতও আমাদের পক্ষেই রয়েছে। আর এই ব্যাপক জনমতকে সংঘবদ্ধ করতে পারলেই ইসলামের বিজয় অবশ্যাম্ভাবী হয়ে উঠবে। তাই ইসলামের পক্ষে জনগণকে সংগঠিত করতে হলে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করতে হবে। ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার সাথে দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ময়দানে নিজের সকল প্রতিভা, শক্তিকে ও সম্ভবনাকে ইখলাসের সাথে যুগপৎভাবে কাজে লাগাতে হবে। দ্বীনি আন্দোলনের কর্মীদের কোনো অবস্থায় আবেগপ্রবণ হওয়ার সুযোগ নেই বরং বিচক্ষণতার সাথেই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। তিনি ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে মোকাবেলা করতে সকলকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সরকার দেশ পরিচালনায় সার্বিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। করোনা মহামারী মোকাবেলায় সরকার সাফল্য দেখাতে পারেনি। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা যখন প্রান্তিক পর্যায়ে নেমে এসেছে, তখন ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি ইতোমধ্যেই গণদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। সিলেটসহ সারাদেশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হলেও সরকার দুর্গত ও পানিবন্দী মানুষের কল্যাণে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি অবিলম্বে সারাদেশে বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার ও তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
তিনি সরকারের ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, মূলত সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের জন্য তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এমতাবস্থায় দেশ ও জাতিকে এই রুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে হলে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে সরকারকে জনমত যাচাইয়ের আহ্বান জানান। অন্যথায় দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে জনগণই গণদাবি আদায় করে ছাড়বে-ইনশাআল্লাহ।
থানা আমির হারুন অর রশীদের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির আবুল বাশার ও সেক্রেটারি আল আমীন মেহেদী প্রমুখ।
এমআই