উপকরণের দাম বাড়ায় বিপাকে বেকারি ব্যবসায়ীরা
Share on:
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারেইয়ারহাট ট্রাফিক মোড়ে কথা হয় লেগুনা চালক শেখ ফরিদের সঙ্গে। শেখ ফরিদ বলছিলেন, ‘একটা সময় গাড়ি চালানোর ফাঁকে টং দোকানে এক কাপ চা, বিস্কুট ও বনরুটি খেতে ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ হতো, কিন্তু এখন একটি বন কিংবা বাটারবন কিনতে সেই টাকা চলে যাচ্ছে। রাস্তায় আগের মত যাত্রী থাকে না, তার ওপর সব জিনিসের দাম বাড়তি। সবক্ষেত্রে আমাদের মরণদশা।’
উপজেলার নজরআলী রূপজান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আবির হাসান বলেন, ‘আগে একটা কেক খেয়ে পানি পান করলে খিদে মিটতো। কিন্তু এখন কেকের আকার এতো ছোট হয়ে গেছে যে, দুইটা খেলে আগের একটা কেকের সমান। তাই কেকের দাম ঠিক থাকলেও ওজন ও আকারে কমানো হয়েছে।’
এক অভিভাবক বলেন, আগে বাচ্চাকে টিফিনের জন্য একটি মাফিন কেক দিলে হতো। এক পিস কেক ছিল ৫ টাকা। গত ৬ মাস ধরে ২টি মাফিন কেক দেওয়া লাগে। দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। আকারে ছোট হয়ে গেছে কেক।
দফায় দফায় উপকরণের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়ে। বেড়ে গেছে বেকারিজাত সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম। আগের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় বিভিন্ন বেকারি ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, কেক, পাউরুটি, বাটারবন, ড্যানিশ ও প্যাটিস কিনে খান কর্মজীবী মানুষ ও স্কুল শিক্ষার্থীরা। সব ধরনের বেকারি পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন উৎপাদনকারীরা। দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
মিরসরাই সদরের দোকানদার মোহাম্মদ রুবেল জানান, ‘রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা চালক, খেটে-খাওয়া মানুষ তাদের মূল কাস্টমার। দাম বাড়ার কারণে তারা এখন চাহিদা থাকলেও কম খাচ্ছে। তাছাড়া আগে বেকারি পণ্য বিক্রি করে সরবরাহকারীকে টাকা দিতাম। এখন সেই টাকা অগ্রিম বা নগদ দিতে হচ্ছে। আগে যে কেক ৭ টাকায় বিক্রি হতো, এখন সেটা ১৫ টাকা। আগে যে বিস্কুট ৩ টাকা ছিল, এখন সেটা এখন ৫ টাকা। প্রতিটি পণ্যের দামই দ্বিগুণ বেড়েছে। আগে ১০ পিসের প্যাকেট কিনতাম ৫০ টাকা, এখন সেটা ১২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
বেকারি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেকারি পণ্যের অন্যতম উপকরণের মধ্যে রয়েছে ডিম, আটা, ময়দা, চিনি, তেল, ঘি। সঙ্গে রয়েছে বিদ্যুৎ গ্যাসসহ অন্যান্য খরচ। বেড়েছে বেকারি শ্রমিকদের মজুরি। সব মিলিয়ে বেকারি শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
কয়েকটি বেকারি পণ্যের মূল্য যাচাই করে দেখা গেছে, মানভেদে ৫ থেকে ৭ টাকার এক পিস বনরুটি বর্তমান বাজারে ১০ থেকে ২০ টাকা, ২ থেকে ৩ টাকার বিস্কুটের পিস এখন ৫ থেকে ৮ টাকা, ১০ টাকার বাটারবনের পিস আকারভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে এক পিস কেক ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আবুতোরাব বাজারের রাহাত ফুড প্রোডাক্টসের মালিক আবুল বশর বলেন, উপকরণের দাম যেভাবে বাড়ছে যে কোনো সময় বেকারির ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। বাধ্য হয়ে পণ্যের দাম বাড়াতে হচ্ছে। এতে বাজারে প্রভাব পড়েছে, বেচাকেনা আগের চেয়ে কমে গেছে।
মিরসরাই বাজারের আল আমিন বেকারির স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, বর্তমানে চিনি, ময়দার দাম ও শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। গত ৬ মাস ধরে দফায় দফায় বাড়ছে উপকরণের দাম। ছোটখাটো উদ্যোক্তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
জম জম সুইটস অ্যান্ড বেকস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘বেকারি পণ্যে কারো অবস্থা ভালো নেই। আমরা যেসব কাঁচামাল ক্রয় করি, সেগুলোর কস্টিং অনেক বেড়ে গেছে। বাজারে ডিম, চিনি, তেল, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ সবকিছুর দাম এখন বাড়তি। নিরুপায় হয়ে আমরা কেক, বিস্কুট, পাউরুটিসহ কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়েছি।
এনএইচ