মেসির মাইলফলক গোলে আর্জেন্টিনার জয়
Share on:
বিশ্বকাপ মিশন শেষে প্রথমবারের মতো মাঠে নেমেছিলো আর্জেন্টিনা। বুয়েন্স আয়ার্সের এল মনুমেন্তাল শুক্রবার (২৪ মার্চ) ভোরে পানামার বিপক্ষে খেলতে নেমে বেশ কঠিন পরীক্ষার মুখেই পড়ে স্কালোনির শিষ্যরা। একের পর এক আক্রমণ করেও গোলের দেখা পাচ্ছিলো না মেসিরা। তবে ম্যাচের ৭৮ মিনিটে তিয়াগো আলমদার গোলে লিড পাওয়ার পর ৮৯ মিনিটে মেসির গোল নিশ্চিত করে আর্জেন্টাইনদের জয়। আর তাতে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে পানামার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। একইসঙ্গে মেসি ছুঁয়েছেন ৮০০ গোলের মাইলফলক।
এই তো মাস তিনেক আগে আর্জেন্টিনার বহু আরাধ্য সোনালী ট্রফির স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। এর মাধ্যমে ফুরিয়েছে সাড়ে তিন দশকের বিশ্বশিরোপা জয়ের অপেক্ষা। বহু আরাধ্য সেই বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনার জার্সিতে তাদের আর মাঠে নামা হয়নি। তাই প্রীতি ম্যাচের তারিখ ঘোষণা হতেই তুমুল উৎসাহ নিয়ে ক্ষণ গণনা শুরু করেন ভক্তরা। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ পেরিয়ে গেছে।
এদিন খেলা শুরু হওয়ার আগেই গ্যালারিতে ওঠে সেই বিশ্বকাপের সুর। আলবিসেলেস্তারা তুমুল কোরাসে বিশ্বজয়ী মেসিদের অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। অশ্রু ঝরিয়ে কাঁদতে বাধ্য করেছেন কোচ লিওনেল স্কালোনি ও এমিলিয়ানো মার্টিনেজদের। এরপর ভক্তদের এত আবেগ-উদ্দীপনার প্রতিদান দিতেই যেন মাঠে নেমেছিলেন মেসি-ডি মারিয়ারা। তবে ভয়ও হয়েছিল- এত উচ্ছ্বাসে পা হড়কে যায় কিনা! না, সেরকম কিছুই হয়নি। দুর্দান্ত নৈপুণ্যে প্রীতি ম্যাচে পানামাকে ২-০ গোলে হারিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সেরেছে আর্জেন্টিনা।
হ্যাঁ আনুষ্ঠানিকতাই তো, এখনও বিশ্বকাপ জয়ের তরতাজা স্মৃতি আছে ভক্তদের মনে। তাই তাদের কাছে যে প্রীতি ম্যাচের ফল মুখ্য নয়। মেসিদের আবারও সাদা-আকাশি জার্সিতে দেখতে পাওয়াই তাদের পরম পাওয়া।
বুয়েনস আয়ার্সের এল মনুমেন্তালে শুক্রবার (২৪ মার্চ) ভোর হতেই (বাংলাদেশ সময়) প্রথমবার ‘তিন তারকাখচিত’ জার্সি পরে খেলতে নামে আর্জেন্টিনা। তবে ম্যাচে কঠিন পরীক্ষার মুখেই পড়ে স্কালোনির শিষ্যরা। রেফারির বাঁশি বাজার পর থেকেই তারা বইয়ে দেন আক্রমণের ঢেউ। তবুও জালের দেখা খোঁজ মিলছিল না। গোলপোস্ট মেসির সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দ্বিতীয় মিনিটে প্রথম সুযোগ পায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। তবে ডি বক্সে পাওয়া বল অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার কাজে লাগাতে পারেননি। পরের মিনিটেই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের ফাঁকি দিয়ে কোনাকুনি শট নেন মেসি। তবে গতি কম থাকায় বল পানামা গোলরক্ষকের হাতে গিয়ে থেমে যায়।
১৫তম মিনিটে মেসিকে বিপজ্জনক ফাউল করে বসেন পানামার ডিফেন্ডার কেভিন গালভান। যার দায়ে রেফারি তাকে হলুদ কার্ড দেখান। এরপর প্রায় ২৭ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত ফ্রি কিক নেন মেসি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই কিক পোস্ট কাঁপিয়ে ফেরে। পরবর্তী সময়ের বেশিরভাগেই বল দখলে ছিল আর্জেন্টিনার। তাদের মুহুর্মুহু আক্রমণ পানামা রক্ষণ জমাট রেখে সামলে নেয়।
৪৩তম মিনিটে বাঁ-দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে উড়িয়ে মারেন মেসি। পরের মিনিটে অনেক দূর থেকে অ্যাঞ্জো ফার্নান্দেজ বুলেট গতির শট নেন। তবে গোলরক্ষক জোসে গেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি কর্নারে পরিণত করেন। এভাবে একের পর এক আক্রমণ ব্যর্থ হয়ে গোলশূন্য সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দু’দল।
বিরতির পর মিনিট ছয়েক যেতে আবারও মেসির ফ্রি-কিক। তবে সেই শটটিও ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। খানিক বাদে আর্জেন্টিনা অধিনায়কের আরও একটি শট রুখে দেন গেরা। এভাবে গোলশূন্য ড্র-য়ের দিকেই আগাচ্ছিল ম্যাচ। ৭৩তম মিনিটে মার্কোস আকুনার ডি-বক্সে বাড়ানো ক্রসে ছুটে গিয়ে হেড দেন মেসি। কিন্তু বল ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
এরপর মেসির বাঁকানো ফ্রি কিক পোস্টে লেগে ফেরার পর বল বুক দিয়ে নামিয়ে শট নিতে গিয়েও ঠিকমতো পারেননি লিয়ান্দ্রো পারেদেস। সুযোগ পেয়ে দুরূহ কোণ থেকে জোরাল শটে দলকে এগিয়ে নেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ম্যাক অ্যালিস্টারের বদলি নামা আলমাদা। নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট বাকি থাকতে মাইলফলক ছোঁয়া গোলটি করেন মেসি। এর আগে তার দুটি ফ্রি-কিক ভাগ্যের ফেরে পোস্টে লাগলেও এবার আর ব্যর্থ হননি তিনি। বাঁকানো শটে রক্ষণ দেয়ালের ওপর দিয়ে খুঁজে নেন ঠিকানা। এতে আর্জেন্টিনার জয়টাও নিশ্চিত হয়ে যায়।
এ নিয়ে সবমিলিয়ে ৮০০তম এবং আন্তর্জাতিক ফুটবলে মেসির গোল হলো ৯৯টি। আগামী ২৮ মার্চ কিরাসাওয়ের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা পরের প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে।
এমকে