ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং : সারাদেশে নিহত বেড়ে ১৫
Share on:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে গাছ ভেঙে পড়ে, দেয়ালধসে এবং পানিতে ডুবে দেশের আট জেলায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যুর সংবাদ এসেছে। সময় বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করার সময় বাংলাদেশের ৮ জেলায় ঘূর্ণিঝড়টি তাণ্ডব চালিয়েছে। আর এসময় মৃত্যুর ঘটনাগুলি ঘটেছে।
উপকূলীয় অঞ্চল ও অন্যান্য জায়গা থেকে কুমিল্লা, নড়াইল, সিরাজগঞ্জ, ভোলা, বরগুনা ও গোপালগঞ্জের ইউএনবি সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন অনুসারে, সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে গাছ উপড়ে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কারণ এসময় দেশে দিনভর মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়।
সোমবার রাতে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল এলাকায় বাড়ির ওপর বিশাল গাছ পড়লে এক দম্পতি ও তাদের চার বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ঘটার সময় তারা ঘুমিয়ে ছিলেন।
জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রায়হান মেহবুব বলেন, এ ঘটনায় নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী ও তাদের মেয়ে নুসরাত আক্তার লিজা মারা যাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
তিনি আরও বলেন, রাত ১০টার দিকে যখন এই ঘটনা ঘটে তখন ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা কমপ্লেক্সে সোমবার বেলা ১১টার দিকে মাথায় গাছ পড়ে মর্জিনা বেগম নামে ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: নাসির উদ্দিন বলেন, বাগেরহাটের মর্জিনা উপজেলার রাজপুর গ্রামে গৃহকর্মীর কাজ করতেন।
ঘটনার সময় তার ১১ বছরের ছেলে তার সাথে ছিল, তবে সে বেঁচে যায় বলে ওসি জানান।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় সোমবার রাতে যমুনা নদীর এক খালে নৌকা ডুবে মা ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘নিহতরা হলেন- পূর্ব মোহনপুর গ্রামের খোকন শেখের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা (৩০) ও তার ছেলে আরাফাত রহমান (৫)।’
তিনি বলেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে আয়েশার স্বামী ও অপর দুই সন্তানকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাত ৮টার দিকে তারা একটি নৌকায় করে ওই খাল দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। তখন খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে সেটি ডুবে যায়।
ঘটনাস্থলেই আরাফাত মারা যায় এবং হাসপাতালে নেয়ার পর আয়শাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে ওসি জানান।
ভোলায় সদর, দৌলতখান, লালমোহন ও চরফ্যাশনে গাছের নিচে চাপা পড়ে ও পানিতে ডুবে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, মৃত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার মফিজুল ইসলাম (৬০), দৌলতখান উপজেলার বিবি খাদিজা (২০), লালমোহন উপজেলার রাবেয়া (৩০) ও চরফ্যাশন উপজেলার মনির (৩০)।
সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নে সোমবার রাতে নিজ বাড়িতে গাছ পড়ে মফিজুল এবং বিবি খাদিজাও গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। মনির মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে রাবেয়া ডুবে যান।
বরগুনার সদর উপজেলার সোনাখালী গ্রামে বাড়ির ওপর গাছ ভেঙে পড়লে রাতের খাবার খেতে গিয়ে ১১০ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, তিনি বাড়িতে একা ছিলেন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান।
এসময় গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় গাছের নিচে পিষ্ট হয়ে দুই নারী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন পাটগাতী ইউনিয়নের রেজাউলের স্ত্রী শারমিন (২৫) ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের হান্না তালুকদারের স্ত্রী রুমিসা (৬৫)।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, সোমবার রাতে ঝড়ের সময় পাঁচকাহনিয়া গ্রামে গাছ ভেঙ্গে পড়ে শারমিনের মৃত্যু হয় এবং ডুমুরিয়া গ্রামের বাড়িতে গাছের নিচে চাপা পড়ে রুমিসা মারা যান।
তিনি বলেন, তাদের পরিবারকে সহায়তা হিসেবে ২৫ হাজার টাকা, পুনর্বাসনের জন্য ৬ হাজার টাকা এবং টিন দেয়া হবে। সূত্র : ইউএনবি।
এন