মিয়ানমারে গণহত্যার সাক্ষ্য দিতে আর্জেন্টিনা যাচ্ছেন ৭ রোহিঙ্গা
Share on:
মিয়ানমারে গণহত্যার সাক্ষ্য দিতে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে যাচ্ছেন ৭ রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি প্রশাসন।
রোববার (২৮ মে) বিকেলে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ছেড়েছেন।
সোমবার (২৯ মে) রাতে তারা আর্জেন্টিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপ-সচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ১৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৭ রোহিঙ্গা বিশেষ অনুমতি নিয়ে আর্জেন্টিনায় যাচ্ছেন। তারা সেখানে একটি আদালতে মিয়ানমারের গণহত্যা নিয়ে চলমান একটি মামলার বিচারিক কার্যক্রমে সাক্ষ্য দেবেন। তারা ইতিমধ্যে ক্যাম্প ছেড়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর, 'ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন' (সার্বজনীন এখতিয়ার) নীতির অধীনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলার তদন্ত শুরু করে আর্জেন্টিনার বিচার বিভাগ।
এর প্রেক্ষিতে সে সময় ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে বাস করা ৭ রোহিঙ্গা। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে তাদের বুয়েন্স আয়ার্সের আদালতে সাক্ষী হিসেবে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
এ মামলা ছাড়াও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিজে) এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিসি) বিচার চলছে।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর যুক্তরাজ্য ভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন ইউকে (ব্রুক) আর্জেন্টিনায় মামলাটি শুরুর আবেদন করেছিল।
২০২১ সালের ১২ জুলাই আইসিসির তৎকালীন তদন্তের কারণে দেশটির নিম্ন আদালত মামলাটি খারিজ করে। পরে আগস্টে ব্রুকের করা আপিলের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে বাতিল করার রায় দিয়ে ঐ বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় আর্জেন্টিনার ফেডারেল ক্রিমিনাল কোর্টের (ফৌজদারি আদালত) সেকেন্ড চেম্বার।
মামলার প্রক্রিয়াকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ উল্লেখ করে ব্রুকের ওয়েবসাইটে একটি বার্তায় বলা হয়, আর্জেন্টিনার মামলাটি বিশ্বের কোথাও রোহিঙ্গা গণহত্যা সংক্রান্ত প্রথম সার্বজনীন বিচার ব্যবস্থার মামলা।
সেখানে ব্রুকের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী তুন খিন বলেন, গণহত্যা সংঘটনকারীরা কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারবে না। ঘৃণ্য এসব অপরাধের সাথে সম্পৃক্তদের জন্য সারা বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ। আর্জেন্টিনার আপিল বিভাগের দ্বিতীয় চেম্বার আদালত নিশ্চিত যে মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধের মাত্রা ভয়াবহ এবং সেগুলো অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে।
ব্রুক ও ৭ রোহিঙ্গার পক্ষে মামলাটির আইনি লড়াইয়ে আছেন বিশ্ব খ্যাত আইনজীবী টমাস ওজেয়া কুইন্টানা।
আরাকানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এ আইনজ্ঞ ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মানবাধিকারের জন্য জাতিসংঘের প্রাক্তন বিশেষ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করা কালীন রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বকে জানিয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক আইনে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে ‘ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই স্বীকৃত।
১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনে স্বীকৃতি লাভের পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে এটি নির্যাতন বিরোধী সনদের (১৯৮৪) মতো আন্তর্জাতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ সনদে স্থান পেয়েছে। এ নীতির আওতায় আর্জেন্টিনার আদালত অতীতে স্পেনে প্রাক্তন স্বৈরশাসক ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর শাসন এবং চীনে ফালুন গং আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য মামলাগুলো গ্রহণ করেছে।
এন