বিদায়ের আগে ‘বড় রায়’ দিলেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি
Share on:
প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিদায় নেওয়ার দুই দিন আগে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার ‘আইন সংশোধনের’— আলোচিত মামলার রায় দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল।
আর এ রায়ে সংশোধিত আইনের কিছু ধারাকে অবৈধ ঘোষণা করে সেগুলো বাতিল করে দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাক সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
গত বছর পাকিস্তানের দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি ব্যুরোর (ন্যাব) আইনে সংশোধনী আনা হয়। আইন সংশোধনের পর সরকারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি, রাজনীতিবিদ এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলাগুলো তুলে নেওয়া হয়।
এরপর গত বছরের জুনে এই আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তার সেই পিটিশনের প্রেক্ষিতেই শুক্রবার আইনের সংশোধিত ধারাগুলো বাতিল করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ।
সংবাদমাধ্যম জিও টিভি জানিয়েছে, সংশোধনী ধারা বাতিল করে দেওয়ার অর্থ হলো— পাকিস্তানের বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল এবং যেগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল— সেগুলো আবারও দুর্নীতি বিরোধী আদালতে ফিরে যাবে। আর এরমাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মুসলিম লীগ-এন এর নওয়াজ শরীফ, পিপিপির সহ-সভাপতি আসিফ আলী জারদারি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো সচল হবে।
অবশ্য তিন বিচারপতির মধ্যে একজন সংশোধিত আইনের ধারা বাতিল করে দেওয়ার বিপক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু দুইজন পক্ষে রায় দেওয়ায় এটি বাতিল হয়ে গেছে।
আদালত তার রায়ে বলেছেন, আইন পরিবর্তন করার পর যেসব মামলা বাতিল করা হয়েছে সেগুলো আবারও পুনর্স্থাপন করতে হবে, সঙ্গে যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলছিল সেগুলোও আবার শুরু করতে হবে।
এছাড়া ৫০০ মিলিয়ন রুপির কম যেসব দুর্নীতি মামলা বাতিল করা দেওয়া হয়েছিল সেগুলোও আবার সক্রিয় করতে হবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে এসব মামলা দুর্নীতি বিরোধী আদালতে নিয়ে আসতে হবে। এছাড়া আইন সংশোধনের পর যেসব মামলার রায় দেওয়া হয়েছিল সেগুলোও বাতিল করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত রায়ে আরও বলেছেন, ন্যাবের আইনে যেসব সংশোধনী আনা হয়েছিল, সেগুলোর কয়েকটি সংবিধান বিরোধী ছিল।
ন্যাবের এই আইনের বিভিন্ন ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছিল। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— ন্যাব চেয়ারম্যানের মেয়াদ এবং বিচারকদের মেয়াদ তিন বছরে নামিয়ে আনা, ৫০০ মিলিয়নের বেশি দুর্নীতির মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ন্যাবের বিচারিক ক্ষমতা রহিত করা, সব তদন্ত, মুলতবি অনুসন্ধান এবং বিচারিক সকল বিষয় প্রাসঙ্গিক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো, সকল মামলার রায় এক বছরের মধ্যে ঘোষণা করা।
ইমরান খান দাবি করেছিলেন এ আইনে সংশোধনী আনা হয়েছিল, দুর্নীতিবাজ ও বড় বড় ব্যক্তিদের দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য। এ কারণে এ সংশোধনীর বিরুদ্ধে পিটিশন দায়ের করেছিলেন তিনি।
ন্যাবের সংশোধিত আইনের বিরুদ্ধে পিটিশন দায়ের করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান
তার এ পিটিশনের ওপর সুপ্রিম কোর্টে ৫৩ বার শুনানি হয়। এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল জানান তারা এ নিয়ে একটি রায়ে উপনীত হয়েছেন এবং অবসর নেওয়ার আগে এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
এদিকে প্রধান বিচারপতি হিসেসে আগামী রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) শেষবারের মতো দায়িত্ব পালন করবেন উমর আতা বান্দিয়াল। এর আগেই বড় একটি রায় দিয়ে গেলেন তিনি। সূত্র: দ্য ডন, জিও টিভি
এমআই