tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ২৮ জুলাই ২০২২, ২০:৫৬ পিএম

ইউক্রেনে যুদ্ধের মধ্যেই বিয়ে বেড়েছে ৮ গুণ!


Ukrain

ইউক্রেনে যুদ্ধের মধ্যেও সেখানে বিয়ের নিবন্ধন বেড়েছে। আর রাজধানী কিয়েভে গত পাঁচ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিয়ে বেড়েছে আট গুণ!


আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কিয়েভে পাঁচ মাসে ৯ হাজার ১২০টি বিয়ে নিবন্ধন হয়। গত বছরের একই সময়ে ১ হাজার ১১০টি বিয়ে নিবন্ধন হয়েছিল। সে হিসাবে এই পাঁচ মাসে নিবন্ধিত বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে আট গুণের বেশি।

তেতিয়ানা ও তারাস (যুগলের ছদ্মনাম) জুনে ক্রেমেনচুকে নিজেদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। কিয়েভের ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই শিল্পনগরী অবস্থিত। তেতিয়ানা ও তারাস ছয় বছর বয়স থেকে প্রতিবেশী। গত বছর তেতিয়ানাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তারাস। বসন্তে বিয়ের পরিকল্পনা ছিল দুজনের।

তেতিয়ানা এএফপিকে বলেন, ‘মে মাসে আমরা বুঝতে পারি, এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, “পরে” বলে জীবনকে আটকে রাখা যাবে না। কারণ, এই যুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে, এই “পর” কখনো না-ও আসতে পারে।’

তেতিয়ানা ও তারাস পোলতাভায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর প্রথম ছয় সপ্তাহে ওই এলাকায় ১ হাজার ৬০০টি বিয়ে হয়। অথচ ২০২০ সালের পুরোটা সময় সেখানে বিয়ে হয়েছিল ১ হাজার ৩০০টি।

যুদ্ধে যাওয়ার আগমুহূর্তে পুরোপুরি সেনা পোশাকে ২২ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছিলেন ২৫ বছর বয়সী ভিতালি চার্নিখ। তিনি বলেন, ‘আমি যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধের সম্মুখভাগের উদ্দেশে রওনা হতে পারি।’

বিয়ের প্রতিশ্রুতির আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে তিন বছর ভিতালি ও আনাস্তাসিয়ার অস্পষ্ট ধারণা ছিল। তবে বর এএফপিকে বললেন, ‘যুদ্ধ চলছে। এখন কাজটা সম্পন্ন করে ফেলাই ভালো।’

সামনে কী আছে, সেই অনিশ্চয়তায় হঠাৎ অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজে নজর দিতে হতে পারে। আর ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে তরুণ যুগলেরা প্রস্ফুটিত রোমান্সকে এমনকি যুদ্ধের সময়ও আনুষ্ঠানিকতায় রূপ দেওয়ার আহ্বান এড়িয়ে যেতে পারেন না। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন চূড়ায় গিয়ে ঠেকেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রে ১২ মাসে ১৮ লাখ বিয়ে হয়। এই সংখ্যা এক দশক আগের চেয়ে ৮৩ শতাংশ বেশি।

ভিতালি চার্নিখ বলেন, তিনি বিশেষ করে সেনাদের মধ্যে ব্যাপক হারে বিয়ে বেড়ে যাওয়া লক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন কঠিন সময় লোকজন আসলে জানে না আগামীকাল কী ঘটবে। তাই তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাজটি সেরে নিতে আগ্রহী।’

কিয়েভের ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভিনিৎসিয়ার বাসিন্দা যোগব্যায়ামের শিক্ষিকা দারিয়া স্তেনিউকোভা। ৩১ বছর বয়সী দারিয়া কয়েক সপ্তাহ আগে ৩০ বছর বয়সী ভিতালি জাভালনিউককে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বিয়ের এক দিন আগে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যায়।

একটি রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় ভিনিৎসিয়া সিটি সেন্টার। নিহত হন ২৬ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিয়ের নিবন্ধন কার্যালয়। ধ্বংস হয়ে যায় দারিয়া স্তেনিউকোভার অ্যাপার্টমেন্টও।

দারিয়া বলেন, ‘আমরা মর্মাহত হয়েছিলাম, কিন্তু তাই বলে হাল ছাড়িনি। এর মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে আমরা ছিলাম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার ঘর ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু আমার জীবন তো নয়।’

তিনি আরও বলেন, কোনো প্রশাসনিক কেন্দ্রের একটি স্লটও তখন ফাঁকা ছিল না। এরপরও আমরা একটিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, যদিও বলা হয়েছিল ফাঁকা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

দারিয়া আরও বলেন, ‘আমরা পুরো দিন অপেক্ষা করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। তবে আমরা সেখানে পৌঁছানোর তিন মিনিটের মধ্যেই বিয়ের কাজটি সেরে ফেলি।’

বিস্ময়কর এই বিয়ের পর্ব পার করে এসে দিনটিকে তাদের কাছে অন্য রকমভাবে স্মরণীয় করে রেখেছেন এই দম্পতি। আর সেটা হলো ফটোশুটের জন্য বোমায় বিধ্বস্ত দারিয়ার অ্যাপার্টমেন্টকেই তাঁরা বেছে নেন।

দারিয়া বলেন, ‘গোটা বিশ্বের প্রতি এটা এক অনমনীয় বার্তা—ইউক্রেনীয়রা কতটা দৃঢ়চেতা হতে পারে। আমাদের মাথার ওপর দিয়ে রকেট উড়ে যেতে থাকলেও আমরা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে প্রস্তুত।’

এইচএন