tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:০১ পিএম

স্বাধীনতার পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কা যে ৬ জেলায়


1

চলতি মাসে গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তাপপ্রবাহ ছিল বাংলাদেশে।


আগামী ২ দিন অর্থাৎ ২৮ ও ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশের ৬ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কা করেছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার (৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কা খুবই বেশি আগামী ২৮ ও ২৯ এপ্রিলের যে কোনো দিন। সম্ভাব্য জেলা- চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, পাবনা, রাজশাহী, ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

খুবই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সকাল ১১টার পর থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ঘরের বাইরে বের হওয়ার থেকে বিরত থাকুন। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের এই সময়ে ঘরের বাইরে বের হয়ে খোলা আকাশের নিয়ে অবস্থান করা জীবনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় হিটস্ট্রোক হয়ে যেতে পারে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চলতি এপ্রিল মাসে টানা যতদিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরেও হয়নি। হিটস্ট্রোক ও গরমজনিত রোগে এবার অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর যে রেকর্ড হয়েছে, তা-ও অতীতে কোনোকালে হয়নি।

মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে চুয়াডাঙ্গা। পশ্চিমের এ জেলায় ২৭ দিন ধরে ‘মরুভূমির লু হাওয়ার’ মতো পরিস্থিতি। চলতি মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১১ শতাংশ। সেখানে ‘অনুভূত’ তাপমাত্রা ছিল ৪৬ ডিগ্রি। এর আগে গত শনিবার মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে। ওই দিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৪৮ সাল থেকে তাদের কাছে বিভিন্ন স্টেশনের আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে সব বছরে সব স্টেশনের উপাত্ত নেই। উপাত্তগুলো একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে আছে ১৯৮১ সাল থেকে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ১৯৪৮ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে এবারের এপ্রিল মাসে। এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা টানা ছিল না। কিন্তু এবার টানা ২৭ দিন তাপপ্রবাহ হলো।

আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৮ সালের পর এই ভূখণ্ডে এটাই সর্বোচ্চ টানা তাপপ্রবাহ। তবে এই ২৭ দিনের পুরো সময়ে সারা দেশের সর্বত্রই সমান হারে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়নি। ৩১ মার্চ থেকে শুরু করে ১১ এপ্রিলের পর্যন্ত দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। সে সময় তা খুব বেশি এলাকায় ছড়িয়ে যায়নি। এরপর ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কয়েকটি অঞ্চলে তাপপ্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে। ১৬ এপ্রিল থেকে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়, যা দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে টানা চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে ব্যাপ্তিকাল কম থাকায় তাপপ্রবাহ বড় সমস্যার কারণ হয়ে ওঠেনি। আগামী বছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল ও প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৪৩ বছরের মধ্যে যশোরে তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি দিন ঘটেছে। এর পরই আছে ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গা।

আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এবারের তাপপ্রবাহ দেশের ৭৫ ভাগেরও বেশি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা নজিরবিহীন। ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গায় এপ্রিল মাসে টানা ২৩ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। গত বছর এপ্রিলে টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ ছিল। তখন তাপপ্রবাহ এত ব্যাপক পরিসরেও ছিল না। ১৯৬৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস যশোরে। আর ১৯৮৯ সালে বগুড়ার তাপমাত্রা হয়েছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে ৪৩ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে কালবৈশাখী। এই দাবদাহে ৪৩ বছরের মধ্যে চলতি মাসে দেশে সবচেয়ে কম কালবৈশাখী হয়েছে।

এই তাপপ্রবাহের মাসে বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর সংখ্যা গেছে কমে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ১৯৮১ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের উপাত্ত তুলে ধরেছেন তার গবেষণায়। এই ৪৩ বছরে এপ্রিল মাসে ৩৬৫টি বড় বজ্রঝড় হয়। সবচেয়ে বেশি ঝড় হয়েছিল ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে, ১৪টি। আর ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে সবচেয়ে কম ৪টি করে ঝড় হয় এপ্রিলে।

গত বছরের এপ্রিলে বজ্রঝড় হয়েছিল ৭টি। ২০২২-২১ সালে হয় যথাক্রমে ৯টি ও ৮টি। আর এ বছর মাত্র একটি।

দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয় মে মাসে। এর পর আছে জুন, সেপ্টেম্বর ও এপ্রিল মাস। কিন্তু এবার এই ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মাত্র একটি বজ্রঝড় বা কালবৈশাখি হয়েছে। তাও হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। সেটিও অস্বাভাবিক।

এপ্রিল মাসে ঝড় কমে যাওয়ায় অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহকেই কারণ মনে করেন বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম। তিনি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) সঙ্গে যুক্ত।

তিনি বলেন, তাপমাত্রা বৈশ্বিকভাবে ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। এ বছরের এপ্রিল ভারতে ১২২ বছরের মধ্যে ছিল সবচেয়ে বেশি উষ্ণ। আমাদের যে বায়ুপ্রবাহ তার সঙ্গে সীমান্তসংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উডিষ্যার সম্পর্ক আছে। এ সময় এসব অঞ্চলে সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প বজ্র মেঘের সৃষ্টি করে। কিন্তু এবার ভারতের ওই সব অঞ্চলেও প্রচণ্ড গরম পড়েছে। আর্দ্রতাপূর্ণ জলীয় বাষ্প জড়ো হয়ে বজ্র মেঘ সৃষ্টি করেনি। তাতেই এ বিড়ম্বনা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এ অবস্থা দেখছি আমরা।

এনএইচ