ইসরায়েলের জন্য আরও ভয়ংকর হবেন ইরানের ভবিষ্যৎ নেতা
Share on:
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে নতুন এক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়েছে ইরান।
এমন এক সময় এ দুর্ঘটনা ঘটল যখন নিজেদের নতুন সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নির্বাচনের জন্য উদ্যোগী হচ্ছিল তেহরান। এমনকি সদ্য প্রয়াত ইব্রাহিম রাইসিকেই আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছিল। এমন অবস্থায় কে হবেন দেশটির পরবর্তী ধর্মীয় নেতা আর ইসরায়েল ও আমেরিকার সঙ্গে কোন পথে হাঁটবে ইরানের সম্পর্ক সেটিই এখন প্রশ্ন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল কয়েক বছর ধরেই ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থা বেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছিল। এর মধ্যেই ৮৫ বছর বয়সী আলি খামেনির স্বাস্থ্য ক্রমেই খারাপ হতে শুরু করায় দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ, দুর্বল অর্থনীতি, ব্যাপক দুর্নীতি ও ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনার মতো বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে হচ্ছিল তেহরানকে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাইসির মৃত্যুতে ইরানের রাষ্ট্রীয় নীতিতে খুব বেশি পরিবর্তন আসবে না। গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, ইরানের রাষ্ট্রীয়পদ্ধতি ইতোমধ্যে একটি পথে চলছে, যাতে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার পরিবর্তন হলেও তা ভবিষ্যতের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের পথেই এগোতে থাকবে। এমনকি রাইসি পরবর্তী যিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তাকে এই দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিতে হবে।
ভায়েজের মতে, ইরানের কট্টরপন্থি দৃষ্টিভঙ্গির আওতায় দেশটির পররাষ্ট্রনীতি, আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যন্ত্রাংশ তৈরির লক্ষ্য থেকে তারা বিচ্যুৎ হবে না। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের ইরানবিশেষজ্ঞ এলি গেরানমায়েহ জানান, রাইসি অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে আইআরজিসিকে কখনো চ্যালেঞ্জ করেননি। তাই নতুন প্রেসিডেন্টকেও হয়তো পররাষ্ট্রনীতি, আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও পারমাণবিক কর্মসূচিতে নিজস্ব ভূমিকা রাখতে সুযোগ দেওয়া হবে না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলি খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে রাইসির দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এ ক্ষেত্রে রাইসির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করা হতো, খামেনির ছেলে ৫৫ বছর বয়সী মোজতাবাকে। কিন্তু ইরানে রাজতন্ত্রের নিয়ম সেখানে নেই বলে তিনি ওই পদে আসতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইয়র্কটাউন ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো সাই খাতিরি জানান, আগের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাদের যুক্তি ছিল, শাহ আমলের উত্তরাধিকার আইন ইরানে চলবে না। কিন্তু রাইসির মৃত্যুর পর জনগণের কাছে বংশগত নেতৃত্বে জোর দিতে দেখা যেতে পারে।
রাইসির মৃত্যুতে মোজতাবা খামেনির জন্য বাবার উত্তরসূরি হওয়ার পথ সুগম হলেও ইরানের ধর্মীয় ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়টি অনেকটাই রহস্যজনক। ফলে আলি খামেনির উত্তরসূরি নির্বাচনের বিষয়টি নির্ভর করবে দেশটির জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাদের একটি কাউন্সিলের হাতে। মোজতাবা খামেনি নিজেও একজন জনপ্রিয় ধর্মীয় নেতা। এখন এই কাউন্সিল তাদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবেন, না কি সবাই যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, সেটা সময়ই বলে দেবে।
এনএইচ