জিম্মি জাহাজ থেকে সর্বশেষ যে বার্তা দিলেন চিফ অফিসার
Share on:
সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের অস্ত্রের মুখে বন্দি করে রাখা হয়েছে একটি কেভিনে। এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা নাবিকদের ওপর কোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতন করেনি। তবে অস্ত্রের মুখে তাদের কথা মেনে চলতে বাধ্য করছে দস্যুরা।
অপহরণের শিকার জাহাজের চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান পরিবারের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় জানিয়েছেন, নাবিকদের সামনে জলদস্যুরা অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আশপাশে নেভি জাহাজ দেখলেই ওরা মাথায় অস্ত্র ঠেকাচ্ছে। মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ওরা আমাদের জিম্মি করে রাখছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকালে পরিবারের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় তিনি এ তথ্য জানান।
অডিও বার্তায় আতিকুল্লাহ খান বলেন, আমি যেখানে ঘুমাই সেখানে পাশ ফিরলেই দেখতে পাই আমার দিকে বড় বড় মেশিনগান তাক করে রেখেছে। এই অবস্থায় ঘুমানো অসম্ভব। মানসিকভাবে চাপে থাকলেও সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি।
জাহাজে মজুত খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখনো খাবার আছে। কিন্তু, যেহেতু জলদস্যুরাও আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে, আমাদের খাবার আর কতদিন যাবে সেটা বলতে পারছি না। আর হয়তো ১০-১৫ দিন যেতে পারে। এরপর খাবার ও পানি শেষ হয়ে গেলে খুব কষ্টে পরে যাব।
এদিকে, বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ ২৩ নাবিককে উদ্ধার করতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) মেরিটাইম সিকিউরিটি ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ তাদের পিছু নেয়। কয়েক দফায় জলদস্যু ও নৌবাহিনীর (নেভি) সদস্যদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। একপর্যায়ে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিককে একে একে হত্যার হুমকিও দেয় জলদস্যুরা। এরপর কোনো উপায় না থাকায় পিছু হটে নেভির যুদ্ধজাহাজটি।
সোমালিয়ার স্থানীয় সময় বুধবার (১৩ মার্চ) রাত থেকে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজটি তাদের অনুসরণ করে। কিন্তু দুর্ধর্ষ জলদস্যুদের অনড় এবং অনমনীয় অবস্থানের কারণে জিম্মি থাকা ২৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবুও মাত্র ২০ নটিক্যাল মাইল দূর থেকে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমবি আব্দুল্লাহ’কে অনুসরণ করে যায় নেভির জাহাজটি। ইতোমধ্যে সোমালিয়া জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত জলসীমান্তে প্রবেশ করেছে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এই জাহাজটি। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) এক জিম্মি নাবিকের পাঠানো মেসেজ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাহাজটি কোন দেশের তা নিশ্চিত হতে পারেননি জিম্মি ওই নাবিক। তবে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নেভির ওই যুদ্ধজাহাজটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)।
এদিকে সোমালিয়ার স্থানীয় সময়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ২৩ বাংলাদেশিকে আরেক জলদস্যু বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে।
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামের জাহাজটি দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। ইতোমধ্যে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জিম্মি জাহাজের ২৩ নাবিকের পরিচয়ও জানা গেছে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে গোপন অডিও বার্তা দিয়েছেন তাদের কেউ কেউ।
এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরেই জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই কোম্পানির ‘এমভি জাহান মনি’ নামের একটি জাহাজ। ওই জাহাজের ২৬ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। ১০০ দিনের আন্তরিক প্রচেষ্টার পর তাদের মুক্ত করতে সফল হয় চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। এবারও পূর্বের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আরও দ্রুততম সময়ে ২৩ নাবিকসহ জাহাজ মুক্ত কারার পরিকল্পনা নিয়েছে শিল্পগোষ্ঠী কবির গ্রুপ।
এনএইচ