গুমের শিকার ব্যক্তিরা কি বেঁচে আছেন?
Share on:
দীর্ঘ ৮ বছর পর কথিত বন্দিশালা ‘আয়না ঘর’ থেকে মুক্ত হয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)।
এ ছাড়া ৫ বছরেরও বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর ফিরে এসেছেন বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামকেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা। শেখ হাসিনার পতনের পর এই তিনজনের ফিরে আসার পর গুম ও ‘আয়নাঘর’ আবার আলোচনায় উঠে আসে। এই তিনজনের ফিরে আসার পর বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীসহ আওয়ামী লীগ আমলে গুম হওয়া মানুষের খোঁজে স্বজনরা আশায় পথ চেয়ে আছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর তাদের আর খোঁজ মেলেনি।
এরই মধ্যে আজ ৩০ আগস্ট পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস। সারা পৃথিবীতে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর গুম হওয়া সব ব্যক্তির জন্য আন্তর্জাতিক সনদ হিসাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর প্রটেকশন অব অল পারসন্স অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়্যারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয় তাতে ৩০ আগস্টকে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করা হয়। ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিনে গুম হওয়া মানুষগুলোকে স্মরণ এবং সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য দিবসটি পালন করা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আর গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাকর্মীর পাশাপাশি আছেন সাধারণ লোকজনও।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- সবচেয়ে বেশি হয়েছে নির্বাচনের বছরগুলোয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় যা দ্বিগুণ ছিল। এর মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৪৬৬ জনকে হত্যা করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এ বছরই সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ গুম হয়। কারাগারে মৃত্যুও ছিল তৃতীয় সর্বোচ্চ। গুম হওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই এখনো নিখোঁজ। তবে ফেরত আসা ব্যক্তিদের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর নিজেদের তারা আবিষ্কার করতেন কোনো এক বদ্ধ রুমে। ‘আয়নাঘর’ কিংবা ‘সেফ হোম’ নামে পরিচিত সেই কুঠুরিতে বছরের পর বছর তাদের আটকে রেখে ভয়ংকর নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ। এক প্রতিবেদনে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেছেন, র্যাবের বিরুদ্ধে স্যাংশনের পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- কমে গেছে। ফলে স্যাংশন অনেক জীবন রক্ষার কার্যকর হাতিয়ার বলে প্রমাণিত হয়েছে। স্যাংশনের পর কমে যায় গুমের ঘটনাও। আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শাসনামলে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়েছেন ২ হাজার ৬৯৯ জন। এ সময়ে গুম হন ৬৭৭ জন, কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন ১ হাজার ৪৮ জন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের তালিকাসহ ২০২৪ সালের ঘটনা যুক্ত করলে নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়াবে বলে দাবি সংগঠনটির। অধিকারের প্রতিবেদন বলছে, জবাবদিহিতা ও আইনের শাসন বজায় রাখতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। অকার্যকর বিচার ব্যবস্থার কারণে সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার করে এসব বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুনের ঘটনা ঘটেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সরকারের সমালোচক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনের কাজে সরকারের পক্ষে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ব্যবহার করা হয়। এসব বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের ঘটনার মধ্যে নির্যাতনে হত্যা, ক্রসফায়ার, হত্যার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গুলি, ব্যবসায়ীকে আটক করে মালামাল লুট, নাগরিকদের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মাধ্যমে এসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে অধিকারের পরিসংখ্যান বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার বছর ২০০৯ সালে হত্যার শিকার হন মোট ১৫৪ জন। এছাড়া ২০১০ সালে ১২৭ জন, ২০১১ সালে ৮৪, ২০১২ সালে ৭০ জনকে হত্যা করা হয়। নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৯ জনে। আর নির্বাচনের বছর ২০১৪ সালে ১৭২ জন, ২০১৫ সালে ১৮৬, ২০১৬ সালে ১৭৮, ২০১৭ সালে ১৫৫ জনকে হত্যা করা হয়। ২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয় ৪৬৬ জনকে। ২০১৯ সালে ৩৯১ জন, ২০২০ সালে ২২৫ জনকে হত্যা করা হয়। ২০২১ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারির পর তা কমে ১০৭ জন, ২০২২ সালে ৩১ ও ২০২৩ সালে ২৪ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। এই দেড় দশকে ৬৭৭ জন গুমের শিকার হন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৮ জন গুমের শিকার হন ২০১৮ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছর। এছাড়া ২০০৯ সালে তিনজন, ২০১০ সালে ১৯, ২০১১ সালে ৩২, ২০১২ সালে ২৬, ২০১৩ সালে ৫৪, ২০১৪ সালে ৩৯, ২০১৫ সালে ৬৭, ২০১৬ সালে ৯০, ২০১৭ সালে ৮৮, ২০১৯ সালে ৩৪, ২০২০ সালে ৩১, ২০২১ সালে ২৩, ২০২২ সালে ২১ ও ২০২৩ সালে ৫২ জন গুমের শিকার হন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) তথ্যমতে, ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশে গুমের শিকার হয়েছেন ২৫৫ জন। অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৬০ জন গুমের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯২ জন এখনো নিখোঁজ। তাদের মধ্যে যেমন বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন শিক্ষার্থী কিংবা ব্যবসায়ী; যারা মূলত তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা অনেক বড় গুরুতর অপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ। বিরামহীনভাবে ক্রসফায়ারে হত্যা, আটক করে মুক্তিপণ দাবি, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুসহ নানা পন্থায় এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিচারপ্রার্থীরা যাতে বিচারালয়ে আসতে ও বিচার প্রার্থনা করতে না পারে, তার জন্য নানা পদক্ষেপ নেয়া হতো, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত।
ফিরে এসেছেন তিনজন: ৮ বছর পর কথিত বন্দিশালা ‘আয়না ঘর’ থেকে মুক্ত হয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আহমাদ বিন কাসেম (আরমান)। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তারা নিজ নিজ বাসায় ফেরেন। আবদুল্লাহিল আমান আযমী জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মরহুম গোলাম আযমের ছেলে। আর আহমাদ বিন কাসেম দেশের সনামধন্য শিল্প উদ্যোক্তা স্বৈরশাসনের রোষানলে পড়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ছেলে। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেম (আরমান)কে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে এবং এর কয়েকদিন পর ২৩ আগস্ট আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে গুম করা হয়। এছাড়াও ৫ বছরেরও বেশি সময় নিঁখোজ থাকার পর ফিরে এসেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক একটি রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মাইকেল চাকমা। ঢাকার শ্যামলি থেকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে গোপন বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছিল।
নিখোঁজদের সন্ধান চান স্বজনরা : সরকার পতনের পর গোপন বন্দীশালা কথিত ‘আয়না ঘর’ কয়েকজন ফিরে আসার পর নিখোঁজ আরো অনেকের এখনো কোনো হদিস মিলছে না। সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট এবং প্রকাশিত গোপন নথি দেখে ভেঙে পড়েছে অনেক পরিবার। নিখোঁজ ব্যক্তিরা কারো সন্তান, কারো ভাই ও কারো স্বামী, কারো বাবা। তাদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে পরিবারগুলো। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব মানুষের সন্ধান বের করার দাবি তুলেছেন গুমের শিকার পরিবারগুলোর স্বজনরা। সরকার পতনের পর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর ডিজিএফআই কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে নিঁখোজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা অফিস, সিটিটিসি কার্যালয়ের ভেতরে বন্দীশালার ঢুকে নিঁখোজ ভাই এবং অন্যান্যদের সন্ধান করেন মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম। গুমের শিকার পরিবারদের সঙ্গে করে ঘুরছেন আদালত থেকে অন্তবর্তী সরকার প্রধান পর্যন্ত গিয়েছেন সানজিদা। তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে কী ঘটেছে এবং কারা এর সাথে জড়িত সেগুলো খুঁজে বের করার দাবি তারা করেছেন। তিনি জানান, গত পনের বছরে অন্তত ছয় শতাধিক গুমের ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে অনেকের মৃত্যুর খবর এসেছে, কেউ কেউ ফিরে এসেছে আর এখনো অনেকে নিঁখোজ রয়েছেন। ঢাকার বাইরে যে পরিবারগুলো এরা তো অপেক্ষা করে আছে। সংখ্যাটা দেড়শ বা দু’শ না। আমার মনে হয় সংখ্যাটা আরো বেশি। আপনি আবার ছাত্র আন্দোলনের পর্যন্ত আসেন যদি আরো অনেক মানুষ গুম।
জাতিসংঘের তালিকায় গুমের শিকার হওয়া ৭৬ জন: জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ বিভিন্ন সময় গুমের শিকার হওয়া ৭৬ জনের একটি তালিকা ২০২১ সালে বাংলাদেশ সরকারকে দেয়। এ বিষয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপে আলোচনা হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেত ঢাকা সফরের সময় এ তালিকা নিয়ে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। মিশেল ব্যাশেলেতের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওয়ার্কিং গ্রুপ ৭৬ জনের যে তালিকা দিয়েছে, তাদের মধ্যে ১০ জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। বাকিদের মধ্যে ১০ জনকে খুঁজে পেতে পুলিশ সহযোগিতা করতে চাইলেও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। বাকি ৫৬ জন ‘পলাতক’ বা নিখোঁজ। অবশ্য সরকার শুরু থেকেই গুমের ঘটনাগুলো অস্বীকার করে আসছে।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে কমিশন গঠন: গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেছে সরকার। মঙ্গলবার ‘কমিশন অব ইনকয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ এর ক্ষমতাবলে এই কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সদস্যের মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানের জন্য এ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশন ‘কমিশন অব ইনকয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্তকার্য সম্পন্ন করে আগামী ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। এ কমিশনের সভাপতি হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকারকর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকারকর্মী সাজ্জাদ হোসেন। কমিশন ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণ করবে।
গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর : জোরপূর্বক অন্তর্ধান বা গুম হওয়া থেকে দেশের সব নাগরিককে সুরক্ষা দিতে এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য প্রটেকশন অব অল পার্সনস ফ্রম ফোর্সড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ শিরোনামের সনদে স্বাক্ষর করেন। এ সময় উপদেষ্টারা করতালির মাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। চুক্তিতে স্বাক্ষরের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক উপলক্ষ্য। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসের একদিন আগে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ১৫ বছরের দীর্ঘ স্বৈরাচারী শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত প্রতিটি গুমের ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করবে অন্তর্বর্তী সরকার।’