tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৫০ পিএম

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু, জাতীয়ভাবে জরিপ হয়নি!


পানিতে ডুবে.jpg

গত (৫ জানুয়ারি) রাজধানীতে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় জানানো হয়- গত দুই বছরে (২০২০ ও ২০২১) ১ হাজার ৪২৬টি ঘটনায় পানিতে ডুবে সারাদেশে ২,১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১,৭৯৯ জনই শিশু।অর্থাৎ গত দুই বছরে পানিতে ডুবে মৃতদের শতকরা ৮৩ ভাগই শিশু!


রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায় পুকুরে ডুবে ১ ও ২ বছর বয়সী দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পানিতে ডুবে ৪ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ভোলার মনপুরায় পুকুরের পানিতে পড়ে ৩ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর দুর্গাপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে ৩ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি)চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে পানিতে ডুবে আড়াই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

এগুলো সবই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত বিগত এক সপ্তাহের খবর।

হিসেব করলে দেখা যাচ্ছে, গড়ে প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও কোন না কোন শিশু পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। এছাড়া, গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হলে এমন আরো অনেক খবরই অজানা রয়ে যাচ্ছে।

গত (৫ জানুয়ারি) রাজধানীতে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় জানানো হয়- গত দুই বছরে (২০২০ ও ২০২১) ১ হাজার ৪২৬টি ঘটনায় পানিতে ডুবে সারাদেশে ২,১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১,৭৯৯ জনই শিশু।অর্থাৎ গত দুই বছরে পানিতে ডুবে মৃতদের শতকরা ৮৩ ভাগই শিশু!

গণমাধ্যম উন্নয়ন সংগঠন ‘সমষ্টি’ গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর এর (জিএইচএআই) সহযোগিতায় আয়োজিত ওই সভায় বিভিন্ন সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজপোর্টালে ১ জানুয়ারি, ২০২০ সাল থেকে শুরু করে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

অর্থাৎ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি এমন আরো অনেক খবরই অজানা রয়ে গেছে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে প্রকৃত মৃত্যুসংখ্যা আরো অনেক বেশি।

পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে ২০১৬ সালের পর জাতীয়ভাবে আর কোনো জরিপ পরিচালিত হয় নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ পরিচালিত ওই জরিপে বেরিয়ে এসেছিল যে, প্রতি বছর দেশে সব বয়সী প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায় যাদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অর্থাৎ আনুমানিক ১৪ হাজার ৫০০ জনই ১৮ বছরের কম বয়সী।

অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের শিশু পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। অন্যদিকে, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে তা বছরে প্রায় ১০ হাজার অথবা প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন।

অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়- বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ৪৩ শতাংশেরই কারণ হলো পানিতে ডুবে মৃত্যু।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার পর পানিতে ডুবে যাওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় প্রধান কারণ।

সম্প্রতি আরব নিউজের এক প্রতিবেদনেও বলা হয়- অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের বাচ্চাদের পানিতে ডুবে যাওয়ার হারের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে।

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হলো পানিতে ডুবে যাওয়া। এটা প্রতি বছর ১৭ হাজার মৃত্যুর কারণ।

সেন্টারের পরিচালক ড. আমিনুর রহমান বলেন, ২০১৬ সাল থেকে শিশুদের ডুবে যাওয়া রোধে আমরা তেমন কিছুই করিনি।

জলাশয়ের চারপাশে বেড়া দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু করার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এটি শিশুদের ডুবে যাওয়ার ঘটনা কমাতে খুব সাহায্য করবে। সারা দেশে জীবন রক্ষাকারী কৌশল শেখানোর কর্মসূচিও চালু করতে হবে।

ভুক্তভোগীদের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে আসতে সময়ের অপচয়ে অনেকে মারা যান বলেও মনে করেন আমিনুর- "আমি এটা লক্ষ্য করেছি যে ডুবে যাওয়ার শিকার বেশিরভাগ মানুষকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে মৃত অবস্থায় আনা হয়।

কারণ রোগীদের নিয়ে আসতে যাতায়াতে কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যায়। যদি উদ্ধারের পরপরই ভুক্তভোগীদের কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) দেওয়া যেত, তাহলে অনেকগুলো প্রাণ বাঁচানো যেত"।

উল্লেখ্য, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও কৃত্রিমভাবে তা কিছু সময় চালিয়ে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ করাকে সিপিআর বলা হয়।

এইচএন