ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার বেআইনী ও এখতিয়ার বহির্ভূত সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
Share on:
আওয়ামী নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় বৈঠকে বংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার বেআইনী ও এখতিয়ার বহির্ভূত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই ) এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান।
যৌথ বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন, "বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে একটি আদর্শিক, সুসংগঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের প্রচলিত সংবিধান মেনে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে, ইনশাআল্লাহ। জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতি ও ছাত্রবান্ধব সংগঠন হিসেবে দেশের ছাত্রসমাজ ও আপামর জনগনের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে এ সংগঠন। সুতরাং ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার যে আওয়ামী সিদ্ধান্ত তা সম্পূর্ণ বেআইনি, জাতি বিধ্বংসী, এখতিয়ার বহির্ভূত ও সংবিধান পরিপন্থী। একই সাথে এটা ছাত্রসমাজের সাথে স্রেফ প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা তাদের এই হঠকারি ও এখতিয়ার বহির্ভূত সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'
নেতৃবৃন্দ বলেন, "চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে অবৈধ সরকার আজ দিশেহারা। তারা এই আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে এমন পাশবিক গণহত্যার নজির পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ও বিশ্ববিবেক তাদের এই গণহত্যার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে জনগণের দৃষ্টি ও প্রেক্ষাপট ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে সরকার শুরু থেকেই ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী দলের ওপর ক্রমাগত দোষারোপ করে যাচ্ছে। তাদের এই অপপ্রচার জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা না পেলে তারা এবার ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। তাদের হঠকারি সিদ্ধান্ত গণমানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন নয়। এটা দেশকে পর্যায়ক্রমে একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়ার শামিল।"
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, "গণভবন কোনো রাজনৈতিক কার্যালয় নয়। এটি জনগণের টেক্সের অর্থে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। অথচ সেটাকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত করে সেখানে বসে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন ১৪ দল অন্য একটি বৈধ ও নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এটা নিতান্তই হাস্যকর। কোনো রাজনৈতিক দল অন্য কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করতে পারে না। এটা সংবিধান পরিপন্থী। একটি দল আর একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার সংস্কৃতি কোনো গণতান্ত্রিক দেশের নিয়ম হতে পারে না। স্পষ্টতই এটা স্বৈরাচারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ। এটা একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত। দেশবাসী তাদের এই বেআইনী, আত্মঘাতি ও হঠকারি সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না।"
নেতৃদ্বয় আরও বলেন, "সূচনালগ্ন থেকে ছাত্রশিবির নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে পথচলা অব্যাহত রাখলেও এই সরকার বার বার ছাত্রশিবিরকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে আসছে। বিশেষত ২০১০ সাল থেকে ছাত্রশিবিরকে এমন কোনো নির্যাতন নেই যা করা হয়নি, যা এখনও অব্যাহত আছে। প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি মীর কাসেম আলী, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি কামারুজ্জামান-সহ শত শত জনশক্তিকে শহীদ করা, কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের সকল অফিস বন্ধ করে করে দেওয়া, ঘরোয়া কোনো প্রোগ্রামকে 'গোপন বৈঠক’ তকমা দিয়ে হাজার হাজার নিরীহ জনশক্তিকে কারাগারে প্রেরণ করাসহ হীন কোনো অত্যাচার নেই যা এই অবৈধ সরকার করেনি।
এছাড়াও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনকে টানা ৫৪ দিন রিমান্ডে রেখে অকথ্য নির্যাতন করা হয়, যা ইতিহাসে বিরল। একটি সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত ও বৈধ ছাত্রসংগঠনকে এমন দমনপীড়ন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এতো জুলুম-নির্যাতনের পরও ছাত্রশিবির সবসময় তার নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ধারা অব্যাহত রেখেছে। সরকার বার বার সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে চাইলেও ছাত্রশিবির অহিংস ও আদর্শের প্রতি অবিচল ছিল। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে এ সংগঠন ছাত্র-জনতার আস্থার ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মেধাবীদের প্রিয় এই কাফেলাকে নিয়ে অবৈধ সরকারের কোনো ষড়যন্ত্র ছাত্রসমাজ মেনে নিবে না।"
নেতৃবৃন্দ ছাত্রশিবিরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ছাত্রসমাজসহ দেশের সকল মানুষ এগিয়ে আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সত্য ও সুন্দরের পথে ছাত্রশিবিরের যে পথচলা তা অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
প্রেসবিজ্ঞপ্তি//এমএইচ