‘বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার না হলে নতুন প্রজন্ম দিল্লির গোলাম হবে’
Share on:
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার না হলে নতুন প্রজন্ম দিল্লির গোলাম হবে বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশিষ্টজনরা।
শনিবার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে শিক্ষা গবেষণা সংসদ-ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এইসব কথা বলেন।
শিক্ষা গবেষণা সংসদ-ঢাকার উদ্যোগে দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা- জাতির ভবিষ্যৎ ও আমাদের করণীয় শীর্ষক সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও বিশিষ্টজনেরা বলেন, আধিপত্যবাদী শক্তি পরিকল্পিতভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা কৌশলে শিক্ষা ব্যবস্থার ভিতরে ইসলাম ধর্মের পরিপন্থী বিষয় সমুহ ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের মুসলিম পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলতে চক্রান্ত করছে।
এসময় তারা বলেন, ইতিমধ্যেই শিক্ষা ব্যবস্থায় সুকৌশলে ট্রান্সজেন্ডারের মাধ্যমে সমকামিতাকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় আমাদের সন্তানরা একসময় দিল্লির গোলাম হয়ে যাবে৷ ওহীর জ্ঞান বা শিক্ষা ছাড়া মুসলিম প্রধান একটি রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হতে পারে না। ইতিমধ্যে সেকুলার শিক্ষা ব্যবস্থার কুফল জাতি ভোগ করতে শুরু করেছে। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে মেধা পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। ফলে রাষ্ট্র ও শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, আমাদের ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতি হচ্ছে ব্যপকভাবে সালামের প্রচলন করা৷ এখন সালাম দিলে ও আলহামদুলিল্লাহ বললে ট্রল করা হচ্ছে, এটা গত ১৫ বছরের সেকুলার কুশিক্ষা ফল। মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে রাখতে ইসলামী ফোবিয়া সৃষ্টি করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম ধর্মের বিরোধী বিষয় পাঠ্যবইয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে ইসলাম থেকে দূরে রাখতে এবং ইসলাম বিদ্বেষী করে গড়ে তোলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সচেতন মহলসহ দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অনেক জাতি গোষ্ঠী বিলুপ্ত হয়েছে শুধুমাত্র তাদের পবিবার ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ার কারণে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম ধর্মের বিরোধী শিক্ষা পাঠ্যক্রমে চালু করা হয়েছে। দেশে মুসলিম থাকলে পরিবার ব্যবস্থা থাকবে। তাই মুসলমানদের পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করতে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার পাঠ্যবইয়ে ঢুকিয়ে সমকামিতাকে ছড়িয়ে দিয়ে মুসলিম সমাজ ও মুসলমানদের পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করার অপচেষ্টা চলছে। ১৫ শত বছর পরও ইসলাম টিকে আছে কারণ ইসলাম একটি সার্বজনীন জীবন বিধান। তাই আমাদের সন্তানদের ইসলামের সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। যদি ইসলাম টিকে থাকে তবে এই দেশ ও সমাজ টিকে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
প্রবন্ধকার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, বাংলাদেশে ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন শুরু হয় কুদরতে খুদা শিক্ষা কমিশনের মাধ্যমে, পরবর্তীতে কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশন ধর্মহীনতা ও ইসলাম বিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নে আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। সাম্প্রতিককালে নুরুল হক নাহিদ, দীপু মনি ও মহিবুল হাসান নওফেল শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ধর্মহীন সেক্যুলার শিক্ষা বিস্তারে নির্লজ্জ ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রধান সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করছে প্রচন্ড ইসলাম বিদ্বেষী ও বিতর্কিত লেখক জাফর ইকবাল। বর্তমান সরকার প্রাক-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ধর্ম শিক্ষা বাদ দিয়ে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সরকার এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে চায়। সরকার ধর্মহীন শিক্ষা, সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান চালু করে অধার্মিক, অনৈতিক ও পাপাচারে নিমজ্জিত সমাজব্যবস্থা তৈরী করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে ধর্মহীন শিক্ষা মানুষকে ধীরে ধীরে নৈতিকতা বিবর্জিত অন্যায়ের দিকে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার মূলধারা আল্লাহ বিমুখ ও ঈমান-আকীদা বিবর্জিত দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই এ শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে আদর্শিক জীবন ও দর্শন লাভ করার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় না। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় যারা শিক্ষিত হচ্ছে, তারা না ধর্মীয় জীবন পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো জ্ঞান লাভ করার সুযোগ পাচ্ছে, না সত্যিকার মুসলিম হয়ে গড়ে উঠতে পারছে আর না জীবন যাপনের সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছে। এভাবে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলামী জীবন ও দর্শন বিমুখ একটি প্রজন্ম গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে সরকার ও ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলো।
প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, শাসক গোষ্ঠী মনে করে ইসলাম বললেই পাকিস্তান। শাসক গোষ্ঠী শিক্ষা ব্যবস্থায় সেকুলার ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়ার নামে ইসলাম বিদ্বেষ ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং নতুন প্রজন্মকে ধর্মহীন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইসলামি ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কোরবান আলীর সভাপতিত্বে ও শিক্ষা গবেষণা সংসদ-ঢাকার সমন্বয়ক অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিকের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব। প্রধান আলোচক ছিলেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রফেসর এ.টি.এম. ফজলুল হক, নজরুল গবেষক ও কবি আবদুল হাই শিকদার, অধ্যক্ষ ড. ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ডা. নাজনিন আকতার, উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক রবিউল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার সুমন, মাকসুদুর রহমান প্রমুখ।