tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশনার সময়: ০৮ মার্চ ২০২৪, ২১:০৯ পিএম

থাইল্যান্ড হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বিকল্প জনশক্তি রফতানি বাজার


Th

এমডি আকতার হোসেন : থাইল্যান্ড হতে পারে বাংলাদেশের জন্য বিকল্প জনশক্তি রফতানি বাজার। এখানে ট্যুরিজম,হোটেল রেস্টুরেন্ট,ফুড প্যাকেজিং এবং মার্কেটিংয়ে বাংলাদেশি কর্মীর অনেক চাহিদা রয়েছে।


কিন্তু গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট(জি টু জি) কোন চুক্তি না থাকায় এই শ্রম বাজার ধরতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে মিয়ানমার, ভারত এবং লাওস জনশক্তি দিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

সম্প্রতি থাইল্যান্ড ঘুরে এমন চিত্র ফুলে উঠেছে থাই বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতাদের সাথে কথা বলে।

জানা গেছে ১৯৮৪ সাথে প্রথম থাইল্যান্ডে ঘুরতে যান চাঁদপুর মতলব উত্তর থানার কৃতি সন্তান জাহাঙ্গীর হোসেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান এখানে ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে। তখন তিনি কয়েক মাস পর আবারও থাইল্যান্ডের পাতায়া যান। সেবার গিয়ে তিনি সেখানে ওয়ার্কপার্মিটের আবেদন করেন। থাইল্যান্ড সরকার তাকে কাজের অনুমতিও দেন। শুরুতে তিনি সেখানে টেইলার্স দোকান দেন। আর এটিই বাংলাদেশি কোন নাগরিকের থাইল্যান্ডের পাতায়াতে প্রথম ব্যবসা। তার হাত ধরেই এখন থাইল্যান্ডে প্রায় ৮০০ ব্যবসায়ী রয়েছে। যাদের রয়েছে পাতায়া ব্যাংককে হোটেল রেস্টুরেন্ট,আবাসিক হোটেল,তৈরি পোশাক এবং ট্যুরিজম ব্যবসা। এখানে বাংলাদেশির রয়েছে কয়েক’শ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ। ২০০৯ সাথে এখানে যারা ব্যবসা করেন তাদের নিয়ে তিনি থাই বাংলাদেশ কমিউনিটির নামে একটি সংগঠন গঠন করেন। ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

থাই বাংলাদেশ কমিউনিটির বর্তমান সভাপতি গেয়াস উদ্দিন বলেন,আমি ১৯৮৬ সালে থাইল্যান্ডে আসি। আমিও এসে এখানের সরকারের কাছে কাজের অনুমতি নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। এবং এখানেই বিয়ে করি। আমার ছেলে মেয়েও এখানেই লেখা পড়া করেন। এখানে ব্যবসা খুবই ভালো। এখানে আমাদের জনশক্তির খুবই চাহিদা রয়েছে। আমরা আমাদের ব্যবসা পরিচালনা করি মিয়ানমার আর ভারতের লোকবল দিয়ে। সরকার যদি থাই গর্ভমেন্টের সাথে চুক্তি করতে পারতো তাহলে বাংলাদেশের জন্য বিকল্প জনশক্তি রফতানি বাজার হতে পারে। কিন্তু সরকার তা করতে পারছে না।

কমিউনিটির সেক্রেটারি শামসুজ্জামান শামিম বলেন,এদেশে আমিই প্রথম দাওয়াত নামে হোটের (খাবার রেস্টুরেন্ট) ব্যবসা শুরু করি। আমিও এখানে বেড়াতে এসে কাজে অনুমতি নিয়ে প্রথম কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি । পরে ২০০২ সাথে এই দাওয়াত রেস্টুরেন্ট চালু করি। এখানে প্রায় ৫০/৬০ কর্মী কাজ করেন।

তিনি বলেন,আমাদের দেশে অনেক যুবক এখন বেকার ঘুরছে। সরকার চাইলে এখানে তাদের পাঠাতে পারে। কিন্তু এক শ্রেনীর দালালের কারণে তা করা যাচ্ছে না। কারণ মালয়েশিয়ায় মানব পাচার রুট হিসেবে এটিকে ব্যবহার করে এই অশুভ চক্রটি। আর এদের কারণে থাইল্যান্ডে ভিসা কঠিন করছে। এতে করে মানুষ সহজে থাইল্যান্ডে আসতে পারছে না। যারা আসে তারাও চলে যাচ্ছে মালয়েশিয়া।

তিনি আরও বলেন,এখানে শ্রমিকের নুন্যতম মজুরি ৩০০ ডলার। কেউ চাইলেও এর চেয়ে কম বেতন দিতে পারবে না। এতে এক জন শ্রমিকের মাসিক বেতন হয় ৩৫ হাজার টাকা। আর যারা দক্ষ তাদের বেতন এক হাজার ডলার পর্যন্ত রয়েছে যা বাংলা টাকায় মাসে এক লাখ টাকার মত হয়। অথচ এখানে আসতে একজন শ্রমিকের ৪০/৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ৪০ হাজার টাকা ব্যয় করে মাসে যদি ৪০/৫০ হাজার টাকা আয় করা যায় তাহলে অনেক গরিব মানুয়ের উপকার হয়। সরকার চাইলে এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সরকার এ নিয়ে তেমন কোন কাজ করছে না। যারা মানব পাচার করে তাদের বিরোদ্ধে সরকার ব্যবসা নিলেই এখানে আমাদের শ্রম বাজার রফতানি অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

কমিউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সোলাইমান বলেন, থাইল্যান্ডে এখন প্রায় ৮০০ ব্যবসায়ী রয়েছে। এখানে আরও বড় ধরনের বিনিয়োগ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কোন কর্মী নেই। এতে আমাদের ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে এবং নানা সমস্যাও হচ্ছে। এখানে ট্যুরিজমে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এখানে কোন বাংলাদেশি লোক আসলে তাদের সব ধরনের সহায়তা করে থাকি। ভিসা প্রাপ্তি,হোটেল এবং বিভিন্ন পর্যটন এরিয়ে ঘুরতে সব ধরনের সহায়তা করে থাকি। কোন ধরনের বিপদে পড়লে তাদের আইনি সহায়তা করা হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, আশিয়ানভূক্ত রাষ্ট্র এবং ভারতের পর্যটকদের জন্য ভিসা ফ্রি দেশ। তাদের জন্য বিমান ভাড়াও অনেক কম। ভারত থেকে আসতে বিমান ভাড়া যেখানে লাগে মাত্র ১০ হাজার টাকা সেখানে বাংলাদেশ থেকে ভাড়া ৩০/৪০ হাজার টাকা। আর যাত্রী চাপ থাকলে এ ভাড়া ৫০/৫৫ হাজার হয়ে থাকে। এতে করে এখানে বাংলাদেশি পর্যটক কম আসছে। এজন্য বাংলাদেশ থাই এম্বাসিকে আরও কাজ করা দরকার। বিশেষ করে এখানে ব্যবসা সম্প্রসারন এবং জনশক্তি রফতানির জন্য। এতে করে দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশের যে রেমিট্যান্স সংকট রয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।

এতো প্রতি বন্ধকতার মধ্যে এখানে প্রতি দিন ছুটে আসেন হাজার হাজার বাংলাদেশি পর্যটক। থাইল্যান্ড ভ্রমণে যেতে এখন সব পর্যটকরাই ইচ্ছুক। সাদা বালির সমুদ্রসৈকত, রাতে ঘোরাঘুরি ও হৈ-হুল্লোরসহ ঐতিহাসিক সব দর্শনীয় ইমারত দেখতে থাইল্যান্ডে ভিড় করেন বিশ্বের পর্যটকরা। হানিমুনেও অনেকেই থাইল্যান্ড ভিজিট করেন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে।