পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ
Share on:
পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) পোশাকশ্রমিক ও কর্মচারীদের চারটি করে গ্রেডে মজুরি নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
এর আগে গত ১২ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরির খসড়া গেজেট প্রকাশ করে সরকার। তখন এ মজুরি হারের ওপর কারও কোনো সুপরিশ বা আপত্তি থাকলে ১৪ দিনের মধ্যে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছিল।
এর আগে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ হয়। গত ৭ নভেম্বর বিকেলে সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ মজুরির ঘোষণা দেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
ওই সময় প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্বের আট হাজার টাকা থেকে ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা হবে। এছাড়া তাদের জন্য বছরে পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে। নতুন মজুরি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
খসড়া গেজেটে পোশাকশ্রমিকদের পাঁচটি গ্রেডে মজুরি নির্ধারণ করা হলেও চূড়ান্ত গেজেটে একটি গ্রেড বাদ দিয়ে চারটি গ্রেড করা হয়। একই সঙ্গে চূড়ান্ত গেজেটে গ্রেড-১ ও গ্রেড-২-এ মজুরি বেড়েছে।
খসড়া গেজেটে বলা হয়েছে, ন্যূনতম মজুরি সমন্বয় করে এক বছর কর্মরত থাকার পর শ্রমিক-কর্মচারীরা মূল মজুরির পাঁচ শতাংশ হারে বার্ষিক ভিত্তিতে মজুরি বৃদ্ধি পাবে। পরবর্তী বছরে ক্রমবর্ধমান হারে পুনরায় মূল মজুরির পাঁচ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। সোয়েটারসহ অন্যান্য গার্মেন্টস শিল্প সেক্টরে ফুরন ভিত্তিক (পিস রেইট) মজুরিতে কর্মরত শ্রমিকরাও বার্ষিক ভিত্তিতে মূল মজুরির পাঁচ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন।
শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মঘণ্টা ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬’ এবং ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫’ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। শ্রমিক-কর্মচারীরা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর সংশ্লিষ্ট ধারা ও বিধি অনুযায়ী ভাতাদি এবং অন্যান্য সুবিধাদি পাবেন।
পোশাকশ্রমিকদের শিক্ষানবিশকাল হবে তিন মাস। শিক্ষানবিশ কাল সন্তোষজনকভাবে শেষ হওয়ার পর শিক্ষানবিশ শ্রমিক সংশ্লিষ্ট গ্রেডের স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত হবেন। শিক্ষানবিশ শ্রমিক মাসিক সর্বসাকুল্যে ৯ হাজার ৮৭৫ টাকা মজুরি পাবেন বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়েছে।
গেজেটের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেড-১ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৫ হাজার ৩৫ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৮ হাজার ৩৯০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৪ হাজার ১৯৫ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
খসড়া গেজেটে মোট মজুরি ছিল ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৮ হাজার ২০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৪ হাজার ১০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
গ্রেড-২ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৪ হাজার ২৭৩ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৮৮২ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৯৪১ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
খসড়া গেজেটে এ গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি ছিল ১৪ হাজার ১৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৮০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৯০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
গ্রেড-৩ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৭০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা। খসড়াতে একই ছিল।
খসড়া গেজেটে গ্রেড-৪ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ১৩ হাজার ২৫ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৫০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৫২৫ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা। চূড়ান্ত গেজেটে এ গ্রেডটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
চূড়ান্ত গেজেট অনুযায়ী গ্রেড-৪ এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৬ হাজার ৭০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৩৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা। এটি খসড়া গেজেটের গ্রেড-৫ ছিল।
অন্যদিকে পোশাক কারখানার কর্মচারীদের জন্য মজুরির চারটি গ্রেড সুপারিশ করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড। গ্রেড-১ এ ১০ হাজার ৯০০ টাকা মূল মজুরিতে মোট বেতন সুপারিশ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ টাকা। গ্রেড-২ এ ৯ হাজার টাকা মূল বেতনে কর্মচারীদের মোট বেতন হবে ১৫ হাজার ৯৫০ টাকা।
এছাড়া গ্রেড-৩ এ ৮ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতনে মোট বেতন ১৫ হাজার ২০০ টাকা এবং গ্রেড-৪ এ ৬ হাজার ৯০০ টাকা মূল বেতনে মোট বেতন ১২ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শ্রমিকদের মতো পোশাক কারখানার কর্মচারীদেরও মূল বেতনের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা এবং খাদ্য ভাতা যোগ করে মোট বেতন সুপারিশ করা হয়েছে।
পোশাক কারখানর শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে কে কোন গ্রেডের আওতায় বেতন পাবেন, তাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এমএইচ