tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
প্রকাশনার সময়: ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১১:৪৪ এএম

সংকটে ১০ ব্যাংক, প্রভিশন ঘাটতি ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি


ডলার.jpg

করোনা মহামারির সময় দেশের অর্থ-ব্যবসা ঠিক রাখতে একের পর এক সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে ঢালাওভাবে ছাড় দেওয়া হয় ঋণখেলাপি কমাতে। এত সব সুবিধার পরও কমছে না খেলাপি ঋণ।


করোনা মহামারির সময় দেশের অর্থ-ব্যবসা ঠিক রাখতে একের পর এক সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে ঢালাওভাবে ছাড় দেওয়া হয় ঋণখেলাপি কমাতে। এত সব সুবিধার পরও কমছে না খেলাপি ঋণ।

খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ঋণমান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে পুরো ব্যাংকিংখাত।

সেপ্টেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা।

যার সিংহভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত

জনতা,

বেসিক,

অগ্রণী

রূপালী ব্যাংকের।

এ ছাড়াও ঘাটতির তালিকায় আছে বেসরকারি খাতের

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক,

ঢাকা ব্যাংক,

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক,

ন্যাশনাল ব্যাংক

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং

বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

এর মধ্যে শুধু একটি ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে ৫ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। পুরো ব্যাংকিংখাতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।

তবে সার্বিক ব্যাংকিংখাতে প্রভিশন ঘাটতির নজির খুব একটা নেই। ব্যাংক যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশিরভাগ অর্থই আমানতকারীদের।

আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনোভাবে ঝুঁকির মুখে না পড়ে সেজন্য প্রভিশন সংরক্ষণের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত (নিয়মিত) ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

নিম্নমান (সাব-স্ট্যান্ডার্ড) ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণের (কু-ঋণ) বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ও নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৭২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করতে পেরেছে ৬৬ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।

ফলে পুরো ব্যাংকিংখাতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। তিন মাস আগে পুরো ব্যাংকিংখাতে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।

হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, আলোচিত সময়ে ১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। যার পরিমাণ ১৫ হাজার ৩৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

তিন মাস আগে ১১টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

ঘাটতিতে থাকা ১০ ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের চার ব্যাংক রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ১২ হাজার ২৬ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের পাঁচ ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। বিশেষায়িত খাতের একটি ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ২১ কোটি টাকা।

গত বছর করোনার কারণে কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও সেই গ্রাহককে খেলাপি করতে পারেনি ব্যাংকগুলো।

এ বছরও নতুন করে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় খেলাপি আদায়ে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত একজন গ্রাহক তার ঋণের চার ভাগের এক ভাগ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না।

আবার যেসব মেয়াদি ঋণ চলতি বছরের মার্চের মধ্যে পরিশোধ করার কথা ছিল, ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে তা জুন পর্যন্ত পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়।

অন্যদিকে তলবি ঋণ চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আটটি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এতসব সুবিধা দেওয়ার পরও চলতি বছরের ৯ (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) মাসে নতুন করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিন (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মাসে বেড়েছে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে সবমিলে ব্যাংকিংখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তেমন সদিচ্ছা নেই সরকারের।

ফলে প্রতিনিয়ত খেলাপি ঋণ বাড়ছে। খেলাপি আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রভিশন নিয়ে তিনি বলেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। ব্যাংক যদি প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার শঙ্কা থাকে।

এইচএন