ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ সংগঠন, মিছিল করলেই গ্রেফতার: আইজিপি
Share on:
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধ সংগঠন। তাদের কোন রাজনৈতিক অধিকার নেই।
তারা কোনো মিছিল মিটিং করতে পারবে না। করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা মিছিল করেছেন তাদেরকেও খুঁজে বেড় করে আইনের আওয়তায় আনা হবে।
শনিবার বিকেলে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল এন্ড কলেজ মিলনায়তনে মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আইজিপি এসব কথা বলেন।
আইপিজি বলেছেন, ছাত্রলীগের অতীত কর্মকান্ড দেখে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের যে অন্যায় অপকর্ম রয়েছে অবশ্যই সে কর্মকান্ডের বিচার করা হবে, তদন্ত হবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনাদের সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করছি।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাদের দীর্ঘদিনের অন্যায়-অপকর্মের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই ছাত্রলীগের কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অধিকার নেই। তারা নিষিদ্ধ সংগঠন।
বিগত সরকারের শাসন ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারি শাসন ব্যবস্থা উল্লেখ করে আইজিপি বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের কাঙ্খিত সেবা দিতে পারেনি। পুলিশ স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। করোনার সময় পুলিশের মানবিক কার্যক্রম প্রশংসিত হয়েছিল। বর্তমানে আমরা জনগণের আকাঙ্খার বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তাই আমরা জনগণের আকাঙ্খার পুলিশ গঠন করতে চাই।
আইজিপি বলেন, পুলিশ তাদের দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করবে। আমি পুলিশকে বলতে চাই, আপনারা কোন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাধ্যমে ব্যবহার হবেন না, আর রাজনীতিবীদদের বলতে চাই আপনারা দলীয় কাজে পুলিশকে ব্যবহার করবেন না।
আইজিপি ময়নুল ইসলাম বলেন, পুলিশে ধারাবাহিকভাবে অনেকগুলো পরিবর্তন সূচনা হয়েছে। ব্যাপকহারে কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগ্য ও বঞ্চিত পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে।
পুলিশ প্রধান বলেন, নতুন করে অস্ত্র নীতিমালা করা হচ্ছে। গত ১৫ বছরে যাদের অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার কথা ছিল না, তারা অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন এবং এই অস্ত্র গণ-অভ্যুত্থানে নিরীহ জনগণের বুকে ব্যবহার করা হয়। বিগত সরকারের ফ্যাসিস্টরা বৈধ অস্ত্র নিয়ে অবৈধভাবে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে। এই অস্ত্রে অসংখ্য ছাত্র-জনতা আহত ও শহিদ হয়েছেন। অনেকে দীর্ঘস্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।
তিনি বলেন, জুলাই হত্যাকান্ডের বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তা জড়িত ছিল। গণ-অভ্যুত্থানের আগে নেতৃত্ব পর্যায়ের গুটিকয়েক বিপথগামী কর্মকর্তার কারণে পুলিশ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিল।
আইজিপি আরও বলেন, এখন আমরা জনগণের আস্থার পুলিশ তৈরি করতে চাই। পুলিশ সুপার ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে ধারাবাহিকভাবে বদলি করা হচ্ছে। এই পদে যারা যোগ্য তাদের আনা হচ্ছে।
আবু সাঈদসহ অন্যান্য মামলার বিষয়ে আইজিপি বলেন, গণঅভ্যূত্থানে ছাত্র-জনতা আহত-নিহতের ঘটনার দায়ের করা মামলাগুলো আমরা সুষ্ঠুভাবে তদন্তের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আবু সাঈদের মামলাটি পিবিআইয়ের এসপি পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা তদন্ত করছে। এ মামলায় দুই পুলিশসহ ২১ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুরের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আজমল হোসেন, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট বাসুদেব বণিক, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, জেলা পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন, সেনা কর্মকর্তা লে. কর্ণেল মাসুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম, রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামু, কেন্দ্রীয় জামায়াত ইসলামীর শুরা সদস্য মাহবুবার রহমান বেলাল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুরের সমন্বয়ক ডা. জামিল হোসেন, ইমরান আহমেদ, আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন প্রমুখ।
সুধী সমাবেশ শেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত-নিহত পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।
এনএইচ