tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আইন আদালত প্রকাশনার সময়: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:৪৬ পিএম

বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মতিউর রহমান আকন্দ


Press_Conference_12_12_2023

অত্যন্ত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আপনাদেরকে এই সাংবাদিক সম্মেলনে আহŸান জানানো হয়েছে। আপনারা সাড়া দিয়েছেন এই জন্য আমার পক্ষ থেকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।


জাতির জাগ্রত বিবেক প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ

আপনারা জানেন, বাংলাদেশ আজকে এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। প্রতিদিন আদালতে প্রচÐ ভিড় দেখে আপানারা নিশ্চয়ই উপলদ্ধি করতে পারছেন, এই মানুষগুলো ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় আদালতে এসেছেন। তারা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেই এখানে এসেছেন। এই বিচারপ্রার্থী মানুষগুলো যখন অবিচারের শিকার হন, তখনই আমরা বিস্মিত হই।

আইনের সেবা দেওয়ার জন্য আমরা যারা আইন পেশায় নিয়োজিত আছি, আমরা যারা আইনের পোশাক পরিধান করে আদালতে মামলা পরিচালনার সময় কোনো মতামত তুলে ধরি তখন বলা হচ্ছে আইনের বই পরে দেখবি। কিন্তু প্রশ্ন তো এখানেই, বিচার তো হবে আইনের বইয়ে লিপিবদ্ধ আইনের মাধ্যমে। এই কথাগুলো চেয়ার থেকে যখন উচ্চারিত হয় তখন আমাদের বিচলিত হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

আপনারা আজকে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহে বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চের একজন বিচারপতির মন্তব্য শুনেছেন। পত্রিকায় এসেছে তিনি বলছেন, ১৮ কোটি মানুষকে বাঁচান! বিচার ব্যবস্থাকে বাঁচান! একজন বিচারকের বিচার ব্যবস্থাকে বাঁচানোর এই আবেদন সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। খুব বেশি দূর যেতে হবে না। গতকালই একটি মামলার রায় হলো। এই মামলাটি ২০১৩ সালের।

এই মামলার অন্যতম আসামী হলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সংগ্রামী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। তার সাথে আরও দুই জন, যারা কারাগারে আটক আছেন এবং আমাদের আন্দোলনরত মাঠে ময়দানের আরেকটি দল জাতীয়তাবাদী দল তাদের সহ মোট ১০ জন আসামীকে দন্ড দেওয়া হয়েছে, সাজা দেওয়া হয়েছে। কি সাজা দেওয়া হলো? দÐবিধির ৩৫৩/৩৪ ধারা অনুযায়ী ২ বছর ৬ মাস করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। প্যালানকোড অনুযায়ী মামলাটির সাজা দেওয়া হয়েছে। এই মামলা ট্রায়ালের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া দরকার, সেই সুযোগ আমরা আসামীদেরক দিতে পারিনি।

আসামীগণ যারা অভিযুক্ত তারা এই আদালতে তাদের যে প্রতিকার পাওয়া দরকার ছিল, তাদের সেই প্রতিকার তারা পাননি। তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং তারা আমাদেরকে বলেছেন, তারা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। বিশেষ করে যিনি কারাগারে আটক আছেন তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা এর বেশি কিছু এই মামলা সম্পর্কে বলছি না। যেহেতু এটা জুডিশিয়াল মেটার- আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আদালতে যাবো। আমরা বিশ্বাস করি, যে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত এবং ডকুমেন্টারির ভিত্তিতে রায় দেওয়া হয়েছে, সেই রায় টিকবে না এবং আমাদের আসামীগণ যাদেরকে সাজা দেওয়া হলো তারা বেকসুর খালাস পাবেন ইনশাআল্লাহ।

আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিভিন্ন বিচারপতিগণ সামাজিক অনুষ্ঠানে যান, সেখানে তারা বক্তব্য রাখেন। একটি বক্তব্য পত্রিকায় দেখেছি বাংলাদেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি। ৫০ লক্ষ্য মামলা বিচারের অপেক্ষায় আছে। যে মামলাগুলো ২০১০, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। আমরা দেখলাম আরও বহু সাধারণ মামলা রয়েছে- মার্ডার কেস আছে, সামাজিক অন্যায়-অপরাধের যেগুলোর চাক্ষুস প্রমাণ রয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী রয়েছে ঐ মামলাগুলো কিন্তু বিচারের আওতায় আনা হয়নি। আনা হলো কোন গুলো? যারা দেশের জন্য রাজনীতি করেন, মানবতার জন্য রাজনীতি করেন, তাদের মামলাগুলোই সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে।

এ থেকে ধারণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, শুধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই মূলত এই মামলাগুলো দ্রæত সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাত ৯টা পর্যন্ত সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে আপনারা দেখেছেন মোবাইলের মাধ্যমে সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে। ফৌজদারী কার্যবিধিতে সাক্ষ্য নেওয়ার যে সিস্টেম সেটা ভায়োলেট করা হচ্ছে। আজকে আমার খুবই মনে পড়ে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব উদ্দিন বলেছিলেন যে, নি¤œ আদালত সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। উনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদেরকে এটি বলেছিলেন। আজকে তা বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি। আমরা যেন সেই নির্মমতার শিকার হচ্ছি। আমরা এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাই।

আপনারা আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন যে, রাজনৈতিক কারণে যারা আসামী হন, তারা সম্মানিত মানুষ। দেশের জন্য তারা রাজনীতি করেন। এই পর্যায়ের নেতাদেরকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আবার হেলমেট মাথায় দিয়ে বুকের ভিতর বুলেটপ্রæফ জ্যাকেট পরিয়ে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। এটার মাধ্যমে কী ম্যাসেজ জাতিকে দেওয়া হচ্ছে? যারা প্রশাসনে আছেন তারা কেন এই কাজগুলো করছেন? আমরা বারবার আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি আমরা এখানো পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি।

আসামীদের বক্তব্য শুনার জন্যই এই আদালত। আমরা যখন বারবার পিটিশন দিয়ে ব্যর্থ হয়ে যাই, তখন আমরা কোথায় যাবো! বলা হয়ে থাকে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হলো আদালত। আদালতে বিচারচলাকালে কোনো আদেশ দ্বারা আমরা সংক্ষুব্ধ হলে, তার বিরুদ্ধে রিভিশন করার সুযোগ পাচ্ছি না। আমরা বলছি আমাদেরকে সার্টিফাইড কপি দেওয়া হোক, অথচ আমাদের সার্টিফাইড কপি দেওয়া হয়নি। আমাদের আইনজীবীগণ, আমাদের ক্লায়েন্টগণ যখন সার্টিফাইড কপি আনতে যাচ্ছেন, তখন বলা হচ্ছে যে, নথি পাওয়া যাচ্ছে না।

আমাদের আইনজীবীগণ এভিডেভিট-এর মাধ্যমে আদালতে রিভিশন দায়ের করছেন, সেখান থেকে বলে দেওয়া হচ্ছে সার্টিফাইড কপি নিয়ে আসেন। একদিকে সার্টিফাইড কপি পাওয়া যাচ্ছে না, আরেক দিকে উকিলের কথায় মামলার শুনানি হচ্ছে না। তাহলে মামালার আসামিগণ জুডিশিয়াল রিভিউ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ এটি হচ্ছে বিচারের গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট। আমরা অত্যন্ত বিচলিত। আমরা এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই আদালতের মাধ্যমে।

ডান্ডাবেড়ি পরানোর ব্যাপারে জেলকোড আছে এবং বাংলাদেশে সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায় আছে। সেই রায়টা আমরা আদালতের দৃষ্টিতে আনার পরও কোনো প্রতিকার পাইনি। মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান উনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে একজন সম্মানিত ও প্রিয় নেতা। তিনি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনেট সদস্য। তিনি একজন শিক্ষাবিদ। তিনি একজন রাজনৈতিক নেতা।

তিনি সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে লক্ষাধিক ভোট পেয়েছেন। জয়-পরাজয় থাকতেই পারে কিন্তু তিনি তো নিজ এলাকার লক্ষাধিক মানুষের সমর্থন পাওয়া একজন ব্যক্তি। এই ব্যক্তিকে আজকে প্রত্যেক দিন কোর্টে আনা হয়। গতকাল আনা হয়েছে, পরশু আনা হয়েছে আজকেও আনা হয়েছে ডান্ডাবেরি পরিহিত অবস্থায়। এর কোনো যুক্তি নেই । আমরা আদালতের কাছে গিয়েছি। আদালত এই বিষয়ে আদেশ দিবেন বলেছেন আমরা সন্তোষজনক আদেশ আদালত থেকে এখনো পাইনি।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ ,

আজ আমরা অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে যে সমস্ত দন্ডপ্রাপ্ত আসামী রয়েছেন, তাদের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে এই মিনতি পেশ করলাম। জাতিকে জানানো ছাড়া আমাদের আর কোনো যাওয়ার জায়গা নেই। এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। আজকে বিচারপতির সেই কণ্ঠ বিচারবিভাগকে বাঁচান! বিচার ব্যবস্থাকে বাঁচান। আমাদেরও এটাই কথা। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমাদের কথা এখানেই শেষ করছি। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

সাম্প্রতিক কালে আদালতে বিভিন্ন মামলায় প্রদত্ত রায় এবং বিচারাঙ্গণের পরিবেশ নিয়ে তুলে ধরে আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ লইয়াসং াকউউন্সের সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাড ভোটেক মতিউর রহমান আকন্দ। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মুবারবক হোসাইন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এড. আবদুর রাজ্জাক, এডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন, এড. ড. হেলাল উদ্দিন, এড. আবু বক্কর সিদ্দিক, এড. লুৎফর রহমান আজাদ, এড. আজমত হোসাইনসহ বিপুল সংখ্যক আইনজীবী।

সাংবাদিক সম্মেলনে