tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩:৫১ পিএম

বিএনপি কি এখনো সরকারের বিরুদ্ধে 'গণঅভ্যুত্থান' আশা করে?


02c2a400-4809-11ee-9b58-cb80889117a8

বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি তাদের প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পূর্ণ করেছে এমন এক সময়ে যখন দলটি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে আছে। অনেকে মনে করেন, ১৭ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির জন্য আগামী নির্বাচন একটি চ্যালেঞ্জ। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দলটি যে একদফা ঘোষণা করেছে সেটি কতটা সফল হবে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে।


নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে চাইছে দলটি । কিন্তু বর্তমান রাজনৈতিক পটভূমিতে সরকার পতনের আন্দোলনে সফল হওয়াটাই এখন বিএনপির জন্য সবচে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বিএনপির জন্য অনেকটা 'অস্তিত্ব রক্ষার' লড়াই হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

রাজনীতির কঠিন সময়
বর্তমানে বিএনপির আন্দোলন যেভাবে এগুচ্ছে তাতে সরকার পতন ঘটাতে পারবে কী-না তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ আছে।

দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং সরকারের কঠোর অবস্থানে বিএনপির রাজনীতি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। তাই আগামী দিনে বিএনপির আন্দোলনের পরিণতি কী হয় সেদিকেও এখন অনেকের দৃষ্টি রয়েছে।

বিষয়টি খুব একটা সহজ নয় বলে মানছেন বিএনপির নেতারা।

“আপনার প্রতিপক্ষ যদি একটা রাজনৈতিক দল হয় সেটা এক ধরনের রাজনীতি। এবং আপনার প্রতিপক্ষ যদি হয় একটা রেজিম, যারা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে পাওয়ারফুল হচ্ছে এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে, সেটি বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা, ইলেকশন কমিশন সবগুলোকে যখন করায়ত্ব করে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় সেটা একটা খুব কঠিন অবস্থা। আমরা তার সম্মুক্ষীণ,” বিবিসি বাংলাকে বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে চাপ তৈরি করেছে তাতে বিএনপির মধ্যে একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে। সরকার এবার একতরফা ভোট করতে চাইলে সেটি প্রতিরোধের চেষ্টা করবে বলেও ইঙ্গিত দিচ্ছে বিএনপি।

“আমরা এমন একটা পর্যায়ে চলে আসছি দেশে জনগণ প্রয়োজনে প্রতিরোধ করবে। এবং প্রতিরোধ করার অধিকার কিন্তু আছে দেশের নাগরিকদের"

"আপনি যখন তার রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করবেন সেই দেশের নাগরিকদের প্রতিরোধ করার সাংবিধানিক অধিকার আছে কিন্তু। তো বাংলাদেশ ঠিক সেই পর্যায়ে এখন এসেছে,” বলেন মি. চৌধুরী।

'গণঅভ্যুত্থান' কীভাবে?
সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনের আর বাকী আছে চার মাসের মতো। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনঢ় অবস্থান ধরে রেখেছে বিএনপি।

অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে সরকার অটল। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপ বা আলোচনার বিষয়টিও যেহেতু অনুপস্থিত, তাই দাবি আদায়ে গণ-আন্দোলন ছাড়া বিকল্প দেখছে না বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করতে চান তারা।

“এরশাদ পতনের মাত্র কয়েকদিন আগেও বলেছে যে কোথায় পদত্যাগ করবো জিরো পয়েন্টে? আমরা উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কী দেখেছি? আটষট্টি সালে আইয়ুব খান উন্নয়নের একদশক পালন করেছে, কিন্তু উনসত্তরে তিনি আর নাই"

"গণ-আন্দোলন বা মানুষের আন্দোলন এটা কখন স্পার্ক করবে, কখন পরিপূর্ণতা লাভ করবে এটা প্রেডিক্ট করা যায় না। কে জানে যে এখন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে পরিবর্তন হয়ে যাবে না। কে জানে যে দু্ই সপ্তাহের মধ্যে হবে না বা চার সপ্তাহের মধ্যে হবে না,” বলেন মি. খান।

বিএনপি গণঅভ্যুত্থানের কথা বলেলেও এখন পর্যন্ত তাদের সরকার বিরোধী আন্দোলন হচ্ছে খণ্ড-খণ্ড ভাবে। কয়েকটি বড় সমাবেশ ছাড়া টানা আন্দোলন কিংবা জোরালো কর্মসূচি নিয়ে রাজনীতির মাঠে অবস্থান নিতে পারেনি বিএনপি।

এ বাস্তবতায় নির্বাচনের আগে যতটুকু সময় আছে তার মধ্যে কীভাবে গণ-আন্দোলন সৃষ্টি হবে? আর সেই আন্দোলনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা কী?

এমন প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ডক্টর শামসুজ্জোহা হত্যার ঘটনায় উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বা আসাদের মৃত্যুতে এটা বদলে গেছে। ডাক্তার মিলন বা নূর হোসেনের মৃত্যুতে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন মুহূর্তে বদলে গেছে।

"এটা কোনো পরিকল্পনার বিষয় না। একটা পরিকল্পনা ঠিক আছে। সেটা হচ্ছে - আমরা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য আমাদের এ আন্দোলনটা অব্যাহত রাখবো এবং ক্রমান্বয়ে আরো জোরদার করার চেষ্টা করবো। অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন,” বলেন মি. খান।

এখন পর্যন্ত রাজপথে সভা সমাবেশ, পদযাত্রার মতো কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে নিচ্ছে দলটি। এসব কর্মসূচীতে যে সরকার নমনীয় নয় সেটি স্পষ্ট। তাহলে ভবিষ্যত কর্মসূচি কেমন হবে?

“চলমান আন্দোলন যখন যে কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে সেই কর্মসূচি আসবে। আর কর্মসূচি তো একা বিএনপি দিচ্ছে না। এখানে ছত্রিশ দল আছে, ছত্রিশ দলের যুগপতের বাইরে যারা আছে তাদের সাথে আমাদের একটা মনের মিল আছে সকলে একদিকে যাচ্ছি," বলেন মি. চৌধুরী।

"সুতরাং আন্দোলনের প্রেক্ষাপট টা কিন্তু সে রকমই। কর্মসূচি যেগুলো আসবে সেগুলো কিন্তু সেটার ভিত্তিতেই হবে। আর আন্দোলন বলে দেবে কখন কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"

বাস্তবতা হচ্ছে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি বিতর্কিত নির্বাচন করেও সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করেছে। কিন্তু এবার নিরপেক্ষ সরকার গঠন ছাড়া একতরফা নির্বাচন করার সুযোগ দিতে চায় না বিএনপি। যদিও সেটি আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি আদায় করতে পারবে কী-না সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা