আমরা তো এক-এগারোর কথা ভুলে যাইনি : মির্জা ফখরুল
Share on:
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত নির্বাচন দাবি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁরা এখনো এক–এগারোর কথা ভুলে যাননি।
তাই আবার যখন ওই চেহারাগুলো সামনে আসে, তখন যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়, প্রশ্ন এসে যায়।
৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দখল নিয়ে বিএনপিকে লক্ষ্যবস্তু করে প্রচারণা চালানোর হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল। তাঁর মতে, এ কাজগুলো করা হচ্ছে আবার এক-এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে, বিরাজনীতিকীকরণের চেষ্টা থেকে।
বুধবার (২৮আগষ্ট) দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বর্তমান সরকারের মধ্যেও বিরাজনীতিকীকরণের কোনো লক্ষণ দেখছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, আমি এমন লক্ষণ দেখছি না। আমি সতর্ক করছি। আমার একটা সতর্কের কথা আছে। কিছু চেহারা আছে তো? এ চেহারাগুলোকে দেখলে আমরা ভয় পাই।’
তবে যাঁদের কোনো দিন দেখা যায়নি, তাঁরা সামনে চলে আসছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হঠাৎ করে তাঁরা মিডিয়াতে ফ্রন্ট পেজে চলে আসছেন। তাঁদের বক্তব্য, থিওরি প্রচার করছেন। আমি কারও নাম বলতে চাই না। আমার মনে হয়, এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ভালো বিষয় নয়।’
দুই দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান দলীয় এক কর্মসূচিতে এই বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবি এবং দখলদারির বিষয়ে কথা বলেন। বিষয়টি তুলে ধরে এক সাংবাদিক এ ব্যাপারে বিএনপির বক্তব্য জানতে চান।
জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, এটা সুপরিকল্পিত একটা চক্রান্ত। কারণ, আমরা তো এক-এগারোর কথা ভুলে যাইনি। এক-এগারোতে যেটা হয়েছিল বিরাজনীতিকীকরণের প্রচেষ্টা।
যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে এরা সরকার চালাতে পারবে, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তা–ভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না।
সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের লড়াইটা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সেটার জন্যই তো নির্বাচন। এটা তো আমাদের রাইট। আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এত দিন লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি।’
জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে বাতিল করা হলো, তার জন্য ওই দলগুলো মিলেই তো আমরা আন্দোলন করেছি। ওই দলগুলোর অনেকের আন্দোলনে অনেক নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে।
এমনকি তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই আন্দোলনকে ওই বিষয়কে বাদ দিয়ে আমি তো অন্য রাজনৈতিক চিন্তা এই মুহূর্তে করব না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হ্যাঁ, অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে একটি আন্দোলন-বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। অবশ্যই এই সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করে যাচ্ছি, করব যত দিন আমরা মনে করি সরকার রাইট ট্রাকে থাকবে।’
২০০৭ সালের সেনা–সমর্থিত এক-এগারো সরকারের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো ভুলে যাইনি এক-এগারোর সময় কারা চেষ্টা করেছিল বিরাজনীতিকীকরণের। এমনকি ওই সময়ে আমাদের দলকে পর্যন্ত পুরোপুরি বাতিল, নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও হয়েছিল।
এ কথাগুলো তো আমরা ভুলতে পারি না। এটা আমার গণতন্ত্রের জন্য, আমার রাজনীতির জন্য, আমার দেশের কল্যাণের জন্য এ কথাগুলো আমার মনে রাখতে হবে। আবার ওই চেহারাগুলোই যদি সামনে দেখি, তখন তো যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়, প্রশ্ন এসে যায়।’
সে কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে যাঁরা কাজ করেছেন, যাঁরা সহায়তা করেছেন, তাঁদের যেভাবে দেখতে চান না, সেই একইভাবে যাঁরা গণতন্ত্রকে ব্যাহত করার জন্য, ধ্বংস করার জন্য কাজ করেছেন তাঁদেরও এ দেশের মানুষে দেখতে চায় না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘মানুষ এখানে একটা ডেমোক্রেটিক সেটআপ চায়, গণতন্ত্র চায়। মানুষ নির্বাচন চায়। এই বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।’
কারও নাম উল্লেখ না করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি যদি মনে করি, একজন ব্যক্তি একেবারে স্বর্গ বানিয়ে দিতে পারবে—আমার ওই চিন্তাটা সঠিক হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কীভাবে চলবে। সংস্কারের দাবি তো আমরাই তুলেছি। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি।
৩১ দফা থেকে কমিয়ে ১০ দফা হয়েছে, ১০ দফা থেকে এক দফা হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছি। আমরা তো সংস্কার চাই। তবে সেই সংস্কারটা অবশ্যই হতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে।’
জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়, এমন বক্তব্য না দিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান বিএনপির মহাসচিব।
‘যৌক্তিক’ সময়ের ধারণা কী : অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা বলেছে বিএনপি। সেই যৌক্তিক সময়ের কোনো ধারণা আছে কি না, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই জন্যই আলোচনা দরকার। যৌক্তিক সময়ের ধারণা নির্ভর করবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে।
আমরা কী চাই, ওনারা কী চান, জনগণ কী চায়, একটা আলাপ–আলোচনা তো হতে হবে। সে জন্য বলেছি বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অতি দ্রুত আলোচনা হওয়া দরকার। খুব জোর দিয়ে বলেছি, আজকেও বলছি। নইলে ভুল–বোঝাবুঝি তৈরি হয়।’
জামায়াত নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ : সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আদেশটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে—এমন তথ্য জানিয়ে একজন সংবাদিক প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না, সে যে দলই হোক। আমাদের সংবিধানে যেকোনো ব্যক্তির অধিকার রয়েছে সংগঠন করার।
কিন্তু স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকতে হবে। আমার বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, সে ধরনের দলকে তো সমর্থন করা যাবে না। কিন্তু আমরা মনে করি, মানুষের অধিকার আছে একটা সংগঠন তৈরি করার রাজনীতি করার।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অর্জিত বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য এবং বিএনপির অবদানকে খাটো করতে পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এই বিপ্লবকে ব্যর্থ করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র আছে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন, বিদেশ থেকে, বিশেষ করে ভারত থেকে এমন কতগুলো প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা বাংলাদেশে যে বিপ্লব সেটাকে তারা নস্যাৎ করতে চায়। কতগুলো রাজনৈতিক ইস্যুকে তারা সাম্প্রদায়িক ইস্যু বানাতে চায়। যেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘প্রথম দিকে তারা যে সংখ্যালঘু নির্যাতনে প্রচার চালিয়েছিল, এর বোধ হয় এক দুই পারসেন্টও সঠিক নয়। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, দখলদারি।
এগুলো কিন্তু একটা ক্যাম্পেইন। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, আবার আগের মতো এক-এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। মনে রাখত হবে, গণতন্ত্রে নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন।
এসএম