ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চায় রাশিয়া : পুতিন
Share on:
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান চায় এবং এটি অনিবার্যভাবে কূটনৈতিক সমাধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আতিথ্য দেওয়ার একদিন পর পুতিন এই মন্তব্য করলেন।
বুধবারের (২১ ডিসেম্বর) জেলেনস্কির সেই ওয়াশিংটন সফরের সময় কিয়েভকে সহায়তা অব্যাহত ও অটুট রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাইডেন।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্স’র এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
পুতিন বলেন, সামরিক সংঘর্ষ চালিয়ে যাওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়, বরং এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো (আমাদের লক্ষ্য)। আমরা এই যুদ্ধের অবসানের জন্য চেষ্টা করব এবং তা অবশ্যই যত তাড়াতাড়ি হয় তত ভালো।
অবশ্য হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য আলোচনার জন্য পুতিন কোনও ইঙ্গিতই দেখাননি। অনলাইন ব্রিফিংয়ের কথা বলার সময় কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘(পুতিনের মন্তব্য তার পদক্ষেপের) পুরোপুরি বিপরীত।’
তার ভাষায়, তিনি (পুতিন) স্থল ও আকাশপথে যেসব হামলা করছেন তা এমন একজন ব্যক্তিকে আমাদের সামনে তুলে ধরছে যিনি ইউক্রেনের জনগণের ওপর সহিংসতা চালিয়ে যেতে চান এবং যুদ্ধ আরও বাড়াতে চান।
কিরবি পুনর্ব্যক্ত করেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন পুতিনের সাথে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত রয়েছেন। তবে সেটি কেবল তখনই যখন রাশিয়ান নেতা ‘আলোচনার বিষয়ে গুরুত্ব দেখাবেন’।
রাশিয়া অবশ্য ক্রমাগত বলছে, মস্কো আলোচনার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। কিন্তু ইউক্রেন ও তার মিত্রদের ধারণা, ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে রাশিয়ার ব্যর্থতা পরে সময়ক্ষেপনের জন্য চক্রান্ত হিসেবে রাশিয়া এই কথা বলছে।
পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অনেকবার বলেছি: শত্রুতার তীব্রতা অযৌক্তিক ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সকল সশস্ত্র সংঘাতই কোনো না কোনোভাবে কূটনৈতিক পথে কোনো না কোনো আলোচনার মাধ্যমে শেষ হয়। খুব শিগগিরই বা পরে, সংঘাতের মধ্যে থাকা যে কোনও পক্ষ বসে একটি চুক্তি করে। যারা আমাদের বিরোধিতা করে তাদের কাছে যত তাড়াতাড়ি এই উপলব্ধি আসে, ততই মঙ্গল। আমরা কখনোই এর সম্ভাবনা ত্যাগ করিনি।’
রাশিয়া অবশ্য বরাবরই বলছে, যুদ্ধের অবসানে ইউক্রেনই আলোচনা করতে অস্বীকার করছে। তবে কিয়েভের দাবি, রাশিয়াকে অবশ্যই তাদের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে এবং তাদের দখল করা সমস্ত অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের বিষয়েও কথা বলেছেন। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জেলেনস্কিকে সরবরাহ করতে সম্মত হন। প্রেসিডেন্ট পুতিন বলছেন, রাশিয়া এটি মোকাবিলার একটি উপায় খুঁজে বের করবে।
পুতিন দাবি করেছেন, প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমটি ‘বেশ পুরোনো’ এবং রাশিয়ার এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মতো কাজ করে না। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের ভাষায়, ‘একটি প্রতিষেধক সর্বদা পাওয়া যাবে। তাই যারা এটা করছে তারা বৃথাই করছে। এটা শুধু দ্বন্দ্বকে দীর্ঘায়িত করবে, এটাই সব।’
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহীদের দুই রাষ্ট্র ‘দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিক’কে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তি রক্ষায় ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী পাঠায় রাশিয়া।
পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সহায়তার লক্ষ্যে মস্কো স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীকে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী নিত্য পণ্যের দাম বেড়ে যায় যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতির চেহারা।
নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে রাশিয়া থেকে জ্বালানি, ভোজ্য তেল, গ্যাস ও কয়লাসহ খাদ্যশস্যের আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। বিভিন্ন দেশে দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। ৬ মাসের বেশি সময় ধরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ।
এন