tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আইন আদালত প্রকাশনার সময়: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:৪৮ পিএম

আদালত বর্জনের আহবান লইয়ার্স কাউন্সিলের


Lawyers_31_12_2023

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ১ নং হলে চলমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিল এক সংবাদ সম্মেলনে লইয়ার্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ আদালত বর্জনের আহবান জানিয়েছেন ।


রবিবার ( ৩১ ডিসেম্বর ) বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ আহবান জানান ।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বিজ্ঞ আইনজীবী বন্ধুগণ,

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

দেশের এক কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি।

আপনারা অবশ্যই অবগত আছেন, গত কিছু দিন যাবত নি¤œ আদালতে রাজনৈতিক মামলাসমূহ তড়িঘড়ি করে

রায় প্রদান করে বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। গত দুই মাসে প্রায় অর্ধ শতাধিক মামলায় দেড়

হাজারের বেশি লোককে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম,

ফৌজদারী কার্যবিধি সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কোনো কোনা মামলায় রাত ৯টা পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ,

আসামীর অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য নেয়া এমনকি ৬ কার্যদিবসে চার্জ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন, ৩৪২

মামলার রায় ঘোষণার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই ঘটনা

নজিরবিহীন।

রাজনৈতিক ঘটনাসমূহ রাজনৈতিকভাবে সমাধান না করে আদালতে টেনে নেয়া হচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ক্রিমিনাল মামলার আসামী সাজিয়ে বিচারের নামে তাদেরকে অপমান-অপদস্থ করা

হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও জাতীয় নেতৃবৃন্দকে মাসের পর মাস কারাগারে

আটক রাখা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ১ বছর যাবত, সেক্রেটারি জেনারেল

ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ২৮ মাাস যাবত, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা

রফিকুল ইসলাম খান ২৮ মাস যাবত, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের

আমীর জনাব সেলিম উদ্দিন ৯ মাস যাবত, সাবেক এমপি জনাব শাহজাহান চৌধুরী ৩১ মাস যাবত কারাগারে

আটক রয়েছেন। তারা সকলেই জামিন লাভের পর তাদের নামে নতুন নতুন সাজানো মামলা দিয়ে তাদের

মুক্তির পথ রুদ্ধ করা হয়েছে।

সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে ডান্ডবেড়ি পরিহিত অবস্থায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আদালতে

হাজির করা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান নিষ্ঠুর,

অমানবিক ও অসাংবিধানিক আচরণের শিকার হয়েছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সিনেট

সদস্য। সামাজিকভাবে তার সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। অথচ তার সাথে বন্দি অবস্থায় অমানবিক আচরণ করা

হচ্ছে। তিনি কারাগারে বন্দি থাকাবস্থায় সকল মামলায় জামিন পাওয়া সত্তে¡ও তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়নি। তিনি

২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে আটক আছেন। অথচ তাঁকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের

কলাবাগান থানার মামলা নং ৭, তারিখ- ১৪/১/২০২৩ এ গ্রেফতার দেখানো হয়। যিনি ভিতরে আটক

ছিলেন, কী করে তিনি বন্দি থাকাবস্থায় বাইরে সংঘটিত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হলেন, তা বিবেচনায় না নিয়ে

তাঁকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়ে আদালত ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে

আইনজীবী হিসেবে আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরকে আইনি সহায়তা দিতে পারছি না।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

একটি দেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। সেই সাথে বিচার বিভাগের

স্বাধীনতাও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক আন্দোলনে রাজনৈতিক

দলসমূহের অন্যতম অঙ্গীকার ছিল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। কিন্তু আজ পর্যন্ত বিচার বিভাগের

স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। নামে মাত্র বিচার বিভাগকে প্রশাসন থেকে বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হলেও

প্রকৃতপক্ষে নি¤œ আদালতসমূহ প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিচারকের পদে

অধিষ্ঠিত থাকাবস্থায় রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার দুঃখজনক অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়েছে। রাজনৈতিক ঘটনা

প্রবাহ কোর্ট অঙ্গণে টেনে এনে বিচারাঙ্গণের পরিবেশকে কলুষিত করা হয়েছে।

দেশবাসী অবগত আছেন, গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে নির্বাচন। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের

মাধ্যমে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু গত ১৫ বছর যাবত দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস

করে দেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনসহ কোনো

নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। নির্বাচনহীনতার সংস্কৃতি আদালত অঙ্গণেও সংক্রমিত হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশন নির্বাচনে কলঙ্কজনক ঘটনার কথা আপনারা অবগত আছেন।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে প্রায় সকল রাজনৈতিক

দল, পেশাজীবী সংগঠনসমূহ ও দেশের সুশীল সমাজ কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ঐকমত্য

পোষণ করেছেন। গণতান্ত্রিক বিশ্ব এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশসমূহ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক

নির্বাচনের উপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। সরকার তা অগ্রাহ্য করে ২০১৪ ও ২০১৮ স্টাইলে নির্বাচনের

নামে আরেকটি প্রহসনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। প্রহসনের এই নির্বাচন সম্পন্ন হলে দেশে গণতন্ত্র,

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বলে আর কিছু থাকবে না। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ প্রহসনের নির্বাচন বয়কট

করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছে। এই আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য সরকার

প্রতিদিনই শত শত রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে।

২৮ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত

প্রায় ৩৫হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের অনেককে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদেরকে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। আবার কাউকে কাউকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গ্রেফতারের পর থানায় এবং কারাগারে বিভিন্ন সময়ে ১৩ জনের মৃত্যু সংবাংদ গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী রাজশাহীর দামকুড়া থানা আমীর জনাব আবদুল লতিফ রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তিকাল করেছেন। কারাগারে আটক থাকার কারণে জীবনের শেষ মুহূর্তে তিনি চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কারাগারে থাকাবস্থায় যারা ইন্তিকাল করেছেন তাদের দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে। সরকারের জুলুম-নিপীড়ন থেকে আইনজীবীগণও রেহাই পাননি। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও

সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে দেশকে রাজনীতিহীনতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে

আমরা আইনজীবীগণ নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। তারই অংশ হিসেবে আন্দোলনের

ধারাবাহিকতায় ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা দেশব্যাপী আদালত বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

দেশের সকল বারের বিজ্ঞ আইনজীবী ভাই-বোনদেরকে আদালত বর্জন কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার

জন্য আহবান জানাচ্ছি।”

বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিলের যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাকের সঞ্চালনায় অন্যান্যর মধ্যে

উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার,

এডভোকেট আব্দুল বাতেন, এডভোকেট ডক্টর গোলাম রহমান ভ‚ঁইয়া, এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন,

এডভোকেট রেজাউল করিম খন্দকার, এডভোকেট আবু বাক্কার সিদ্দিক, এডভোকেট ডঃ হেলাল উদ্দিন,

এডভোকেট মইনুদ্দিন, এডভোকেট লুৎফর রহমান, এডভোকেট রোকন রেজা শেখ, এডভোকেট মইনুদ্দিন

ফারুকী, এডভোকেট আব্দুল করিম, এডভোকেট আব্দুস সবুর দেওয়ান, এডভোকেট পারভেজ হোসাইন,

এডভোকেট আসমত হোসাইন, এডভোকেট আবুল হাকাম, এডভোকেট মোজাহিদুল ইসলাম, এডভোকেট

রেজাউল হক রিয়াজ, এডভোকেট আসাদুল্লাহ, এডভোকেট তাওহিদুল ইসলাম, এডভোকেট নিজাম উদ্দিন,

এডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মারুফ ফাহিম, এডভোকেট আহমেদ আদিব প্রমুখ।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি