tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অপরাধ প্রকাশনার সময়: ২৮ জানুয়ারী ২০২৩, ১৮:০১ পিএম

বিচারক ও আইনজীবী একে অপরের পরিপূরক : প্রধান বিচারপতি


chapai-20230128171235

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, বিচারকদের সহযোগিতা করতে হবে আইনজীবীদের। স্বল্প সময়ে বিচারকাজ সম্পন্ন করা বিচারক ও আইনজীবীদের দায়িত্ব। আদালতের দ্বারে ঘুরতে থাকা সন্তানহারা বাবা ও অসহায় নিরীহ নির্যাতিতদেরকে উভয়পক্ষই সহযোগিতা করবেন। একটি মামলার জন্য বছরের পর বছর আদালতের দ্বারে ঘুরতে থাকা ব্যক্তিদের স্বস্তি দেবেন। আদালতে ঘুরতে ঘুরতে তাদের অবস্থার কথা অনুভব করবেন। তাদের জায়গায় নিজেকে ভেবে উভয়পক্ষ বিচারকাজ পরিচালনা করবেন।


শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালত চত্বরে জেলা আইনজীবী সমিতির শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। 

প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলা যত দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। বছরের পর বছর ধরে বিচারপ্রার্থীরা আদালতে ঘুরতে থাকলে বলবে, দেশে বিচার নেই। আর এজন্য তখন দায়ী থাকবে দেশের বিচার ব্যবস্থা, বিচারক ও আইনজাবীরা। বিচারক ও আইনজীবীদের প্রতি অনুরোধ, বিষয়টি অনুধাবন করে বিচারপ্রার্থীদের যত দ্রুত সম্ভব বিচারকাজ শেষ করে তাদেরকে বাসায় পাঠাবেন। 

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বিচারপ্রার্থীরা শুরুতেই আইনজীবীদের কাছে যান। সে সময় তাদের কথা ভালোভাবে শুনবেন। মনযোগ দিয়ে শুনে সঠিক পরামর্শ দেবেন। পরে তা বিচারকের নিকট সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবেন। কারণ সুন্দর উপস্থাপনের মাধ্যমেই একজন ভালো আইনজীবী তৈরি হয়। আইনজীবীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাই বিচারকের সিদ্ধান্তে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করবেন না। বিচারকগণের উদ্দেশ্যে বলব, যেসব আইনজীবী আপনাদের সামনে আসেন তারা অনেকেই আপনার বাবার বয়সের। এসব বিষয়ে তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে অনেক জ্ঞান রয়েছে। বিচারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে তাদেরকে প্রাপ্য সম্মান দেবেন। 

বিচার বিভাগকে সংবিধানের শেষ রক্ষাকবচ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, বেঞ্চ ও বার একে অন্যের পরিপূরক। তারা একটি পাখির দুইটি ডানা। বিচারক ও আইনজীবী একে অপরের পরিপূরক। উভয়পক্ষকে পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ও শ্রদ্ধাবোধ রেখে কাজ করতে হবে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, কয়েক জায়গায় বিচারকের প্রতি আইনজীবীদের ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আপনাদের দায়িত্ব শৃঙ্খলা বজায় রাখা। আমাদের নিজেদের স্বার্থে তা বজায় রাখতে হবে। তা না হলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে। মনে রাখবেন, আপনারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়। 

সৃষ্টিশীল পরিশ্রমের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিচারকের সঙ্গে কোনো মতবিরোধ থাকলে আলোচনা করে সমাধান করবেন। কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সরাসরি আমার কাছে অভিযোগ করবেন। কোনো বিচারক বিচার বিক্রি করলে বা অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আপনারা সকলেই দেশপ্রেমিক। তাই আসুন, সবাই মিলে বিচার ব্যবস্থাকে গতিশীল করতে, দেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। এভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করে আমরা দুর্নীতিমুক্ত মাদকমুক্ত সমাজ গঠন ও সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনব। 

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, সংবিধান রচনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন আইনজীবীরা। সুষ্ঠু সমাজ নির্মাণে ভূমিকা রাখেন বলেই বিচারপতি কৃষ্ণা রায় আইনজীবীদের সামাজিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাই আপনাদেরকে অনৈতিকতার বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম, আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. রবিউল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জবদুল হক।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ মোহা. আদীব আলী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার, জেলা প্রশাসক এমকেএম গালিভ খাঁন, পুলিশ সুপার এএইচএম আব্দুর রকিব, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল ইসলাম কনক প্রমুখ। 

এমআই