মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বর্তমান সরকারের জনগণের আদালতে বিচার হবে: ড. হেলাল উদ্দিন
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশে আজ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এরফলে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
এদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে গুম, খুন, নির্যাতন চরম আকার ধারণ করেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে বর্তমান সরকার ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের একদিন জনগণের আদালতে বিচার হবে।
রোববার ১০ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা গুমের রাজ্যে বাস করছি। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ব্যারিস্টার আরমান ও সাবেক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল আযমীকে পাওয়া যাচ্ছে না। মেধাবী ছাত্র ওলিউল্লাহ ও আল মোকাদ্দাসকে ২০১২ সালে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এরপরে আর তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশে এখন নতুন কায়দায় গুপ্ত হত্যা চলছে। রাজশাহীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সহ ২ জন বরেণ্য ডাক্তারকে হত্যা করা হল, রংপুরে জনপ্রিয় চেয়ারম্যানকে হত্যা করা হল।
এভাবে গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে আতংক সৃষ্টি করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা বা সাইবার অ্যাক্ট নামে জনগণের কণ্ঠকে রোধ করা হচ্ছে। আজকে বাংলাদেশের জনগণের কথা বলার অধিকার, ভোট ও ভাতের অধিকার সহ সকল অধিকার হরণ করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, অবিলম্বে অবৈধ তফসিল বাতিল ও কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠা করে আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় সংগ্রামী জনতা রাজপথে নেমে এসেছে, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই তারা ঘরে ফিরবে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসেন ও ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, শামছুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, কামরুল আহসান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি তাকরিম হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ঢাকা কলেজ সভাপতি আসিফ তাজওয়ার শিশির সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন থানা আমীর ও সেক্রেটারিবৃন্দ।
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার দিবসেও আমাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্ষমতাসীন দলের পেটুয়া বাহিনীর ভুমিকা পালন করছে। তারা উচ্চ আদালতের কোনো নির্দেশনা মানছে না। অসংখ্য মানুষকে বিনা কারণে জেল দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী সহ সারাদেশে এক লাখের অধিক মানুষকে বিনা কারণে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। পুলিশ বিরোধী দলের নেতার্কমীদের গ্রেফতারের পর ভয়াবহ নির্যাতনের মাধ্যমে এক ধরণের ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। আমরা অবিলম্বে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ সকল বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি করছি। অন্যথায় গণ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের মুক্ত করা হবে ইনশাআল্লাহ। মানবাধিকার সংস্থা 'অধিকার' এর রিপোর্ট অনুযায়ী এই সরকারের বিগত ২০০৯-২০২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিচার বহির্ভূত হত্যা হয়েছে ২৬৮৭ টি, গুমের স্বীকার হয়েছেন ৬৬৩ জন। একদিন এদেশের মাটিতেই সকল গুম ও হত্যাকান্ডের বিচার হবে ইনশাআল্লাহ।
দেলাওয়ার হোসেন বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতন ছাড়া গুম ও খুন হওয়া ব্যক্তিদের সন্তান ও মা-বাবার কষ্ট মুছবে না। আমরা কারানির্যাতিত বিরোধী দলের সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই। একতরফার ফরমায়েশি নির্বাচন বন্ধ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং গুম হওয়া সবাইকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শেষে চলে যাওয়ার পথে নেতা-কর্মীদের উপর পুলিশ আতর্কিত হামলা চালিয়ে গুলিবর্ষণ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। যা বাংলাদেশের সংবিধান ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের শামিল। শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি