আন্দোলন সফল করতে মজবুত সাংগঠনিক ভিত্তির কোনো বিকল্প নেই : মাওলানা মাসুম
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম বলেছেন, সবরের মাধ্যমে দ্বীনের কাজকে এগিয়ে নিতে হবে, মুমিনদের কেবল আল্লাহর ওপরে ভরসা করা উচিৎ। শুধুমাত্র নিজেদের দক্ষতা ও সক্ষমতার ওপরে দৃঢ় থাকা ঠিক নয়। আল্লাহর ওপরে সকল কঠিন পরিস্থিতিতে তায়াক্কুল করে এই ময়দানকে সাহসিকতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেছেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ রাজধানীর এই এলাকাটি রাজনৈতিকভাবে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। সুতরাং এখানে কাজ করতে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সামনে অগ্রসর হতে হবে। প্রত্যেক পাড়ায়-মহল্লায় সকলের কাছে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে আরো তৎপর হতে হবে। আন্দোলন সফল করতে মজবুত সাংগঠনিক ভিত্তির কোনো বিকল্প নেই। সেইসাথে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়তে দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবার রাষ্ট্র সমাজ সবক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ও নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, মানুষের হেদায়াতের জন্য দায়িত্বশীল হিসেবে আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।
মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত দায়িত্বশীল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকির।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন ও মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের কর্মপরিষদ অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, মাওলানা ফরিদুল ইসলাম ও শামছুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক নুরুন্নবী, জয়নাল আবেদীন, হাফিজুর রহমান, মোবারক হোসাইন, শেখ শরিফ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রহমানসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সকল থানা আমির ও বিভাগীয় সভাপতিবৃন্দ।
এ টি এম মাসুম তার বক্তব্যে বলেন, দায়িত্বশীলদের অনুপ্রেরণা প্রদান করে টিমস্পিরিটের মাধ্যমে সকলকে নিয়ে সংগঠনকে আরো মজবুত করতে হবে। সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড অর্থাৎ স্থানীয় কার্যক্রম যত বেশি শক্তিশালী হবে, সামগ্রিকভাবে মহানগরী ও কেন্দ্রীয় সংগঠন ততো সুদৃঢ় হবে। যেখানে যত বেশি বিপর্যয় এসেছে সেখানে দ্বীনের দাওয়াত আরো ব্যাপকতর হয়েছে। ফলে কোনো ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক বাধা দেখে ভয় পাওয়া বা হতাশ হওয়া অথবা কাজ কমিয়ে দেয়া ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য উচিৎ নয়।
তিনি আরও বলেন, কুরআন ও হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, ইসলামী আন্দোলন প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে থেকে সবচেয়ে বেশি মজবুতি অর্জন করেছিল। কোনো কারণে মুমিনদের পিছিয়ে যাওয়া বা নমনীয় হয়ে পড়ার কথা কখনো আল্লাহ ও রাসূল (সা) উল্লেখ করেননি। সুতরাং সে আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের যথাযথ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দ্বীনের বিজয়কে তরান্বিত করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন- ‘আমি মুমিনদেরকে কিছুটা ভয়, ক্ষুধা ও জান-মালের ক্ষতি দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি।’ সেখানে যারা ধৈর্যের সাথে অটল থেকে সেসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করে উত্তীর্ণ হয় তারই প্রকৃত সফলকাম।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি বলেন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ এলাকা দেশের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মনে রাখতে হবে. আমরা দেশের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এলাকায় অবস্থান করছি। সমাজের মানুষের কল্যাণ ও সেবার মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকতে হবে। অহংকার, রিয়া ও নফস এই জিনিসগুলোর বিষয়ে দায়িত্বশীলদের বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। এর মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে শুরু করে সংগঠনও ক্ষতির সম্মুখিন হয়। এই ব্যাধিগুলো যেন দায়িত্বশীল ভাইদের ভেতর না থাকে। আল্লাহর দ্বীনের কাজ হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতা থেকে এবং কেয়ামতের কঠিন দিনে নাজাত পেতে আমাদের সকল তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দায়িত্বশীলদের ব্যক্তিগত সকল কাজের মাঝেও দ্বীনের এই মহান দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দেয়ার জন্য সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেদের ও সংগঠনের ভারসাম্যপূর্ণ কাজের সমন্বয় করতে হবে। একইসাথে আমাদেরকে বহুবিধ যোগ্যতা ও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। ইকামাতে দ্বীনের এ কাজে একনিষ্ঠ হয়ে সবার কাছে সংগঠনের দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিতে হবে। সফলতা ও বিপ্লবের জন্য একটি সুদৃঢ় ক্ষেত্র প্রস্তুত করা খুব জরুরি। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সকল স্তরের দায়িত্বশীলদেরকে নৈতিকতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের পথে বাধা আসবে এটা স্বাভাবিক, এই কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করেই ইসলাম বিজয়ী হয়েছে। খোদাভীতি, মেধা, প্রজ্ঞা ও বিবেকবোধের আলোকে নিজেকে ও সংগঠনকে পরিচালনা করতে পারলেই কেবল আমাদের প্রতিটি স্তরের সাফল্যের পাশাপাশি পরকালীন মুক্তি লাভ সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, দেশ ও জাতির ঘাড়ে এক অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও বাকশালী শক্তি জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। এমতাবস্থায় দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এই অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। অন্যথায় ফ্যাসিবাদী শক্তির হাত থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করা যাবে না। তাই আগামী দিনে দেশের এই বঞ্চিত মনবতাকে উদ্ধারের জন্য সংগঠনের দায়িত্বশীলদের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আবদুস সবুর ফকির বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আদর্শিক ও নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ তৈরি করার প্রত্যয়দীপ্ত কাফেলা। এই আন্দোলনের দায়িত্বশীলদের স্মরণ রাখতে হবে, আমরা শুধু দুনিয়াবী কল্যাণ নয় বরং পরকালীন মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করি। পৃথিবীর ভোগ-বিলাস তথা ক্ষমতার লোভ-মোহ চরিতার্থ করার জন্য আমাদের কোনো কর্মতৎপরতা নেই। মানবতার কল্যাণে আমাদের সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আমল যদি খালেসভাবে একমাত্র আল্লাহর জন্য না হয়, তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। গোপনে করা পাপ যেমন মানুষকে ধ্বংস করে দেয়, অনুরূপভাবে আমল গোপনে করার মাধ্যমে আল্লাহর অতি প্রিয় হওয়া সম্ভব হয়। নবীওয়ালা একাজ তথা ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্বশীল হিসেবে অবশ্যই আমাদেরকে মুখলেস বান্দায় পরিণত হতে হবে এবং খুলুসিয়াতের সাথে ইসলামী আন্দোলনের কাজকে আঞ্জাম দিতে হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি
এমআই