tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ২৪ জুন ২০২৩, ১৬:৪৮ পিএম

নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দিলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ


৪

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর আজ জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।


শনিবার (২৪ জুন) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে সকাল থেকে রাজধানীর গুলিস্তান হোটেল ইম্পেরিয়ালের ৮ম তলার মিলনায়তনে ‘বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণ এবং একটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে করণীয়’ মতবিনিময় সভায় জাতীয় সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করেন দলটির আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

এসময় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাসহ দেশের শীর্ষ ওলামা শায়েখ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামী আন্দোলন কর্তৃক ঘোষিত জাতীয় সরকারের প্রস্তাবিত রূপরেখা:

১. আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ, যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে।

২. যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

৩. জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।

৪. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।

৫. সংসদ ভেঙ্গে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।

৬. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

৭. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

৮. বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলু, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশ জমিয়তুল মুছলেহীনের আমীর মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, বাংলাদেশ মসজিদ মিশন ও সেন্ট্রাল মসজিদ মিশন সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি, পীর সাহেব মোকামিয়া মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস, মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী ও খেলাফতে রব্বানী পার্টির চেয়ারম্যান ড. আবদুল লতিফ মাসুম।

মতবিনিময় সভায় মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, খন্দকার গোলাম মাওলা।

সভায় নিজের লিখিত বক্তব্যে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচনটি সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অনেক দলই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা যেহেতু আগ থেকেই বলে আসছেন, তাই হয়তো এ পদ্ধতিগুলো তারা পরিবর্তন করতে চান না। আমরা বলি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তো সময়ের প্রেক্ষিতে এসেছে। ১৯৯১ সালের আগে কোনো দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে কোনো সরকার ছিল না এবং এ নামে নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি। এ পদ্ধতিও শেষ পর্যন্ত অবিতর্কিত থাকেনি। আর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন তো স্বাধীনতার পর কোনো কালেই গ্রহণযোগ্য হয়নি।

সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচন ছিল ফরমায়েশি নির্বাচন। সামরিক সরকার জনমতের তোয়াক্কাই করেনি। তাই জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও আলেম-ওলামাদের নিকট এ ব্যাপারে সুচিন্তিত মতামত দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। ইতিপূর্বে আমরা অনেক বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।

জাতীয় এবং রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দলীয় সরকারের অধীনে নয়; বরং জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব এবং সিইসির পদত্যাগের দাবিতে সব দেশপ্রেমিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দাবি জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার মূল চেতনা- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার আজ ভূলুণ্ঠিত। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার নেই বললেই চলে। বর্তমান সরকার ভোটের নামে প্রহসন করে, ভোটকেন্দ্র দখল করে দিনের ভোট রাতে নিয়ে এবং ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল কারচুপি করে গোটা বিশ্বের সামনে বাংলাদেশকে লজ্জিত করেছে। এতে করে ক্ষমতাসীন সরকার জনবিচ্ছিন্ন একটি স্বৈর সরকারে পরিণত হয়েছে।

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, পরিস্থিতি এমন পর্যায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, বিদেশি শক্তিগুলো বিভিন্ন ছুতায় বাংলাদেশকে নানারকম নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখাচ্ছে। এমতাবস্থায় সরকার ক্ষমতায় থাকার সব বৈধতা হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আজ চরম হুমকির মুখে। অর্থনৈতিক সংকট দিন দিন ঘনীভূত হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি, দেশীয় ব্যাংকের তারল্য সংকটসহ ডলার সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি অর্থনীতিকে আজ পঙ্গু করে ফেলেছে। বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির অশুভ প্রভাব; স্বাধীন রাষ্ট্রের সম্মান ক্ষুণ্ণ করছে। তাই সরকারের পতন এখন সময়ের দাবী।

সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম আরও বলেন, সরকার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজন করার পায়তারা করছে এবং মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা আগেও বলেছি এবং এখনও বলছি- দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না।

এমআই