ইসরাইল রাফা দখলদার ও বর্বরোচিত হামলায় জামায়াতের নিন্দা ও প্রতিবাদ
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা: শফিকুর রহমানের বলেছেন,ফিলিস্তিনে বিশেষ করে অতিসম্প্রতি রাফায় দখলদার ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলা এবং ফিলিস্তিনি মুসলিম জাতিগত নিধনযজ্ঞ বন্ধে বিশ্ববাসীর প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান ।
বৃহস্পতিবার ( ১৬মে ) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের আমীর ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবে তিনি এসব কথা বলেন ।
তিনি বলেন,দখলদার ইসরাইলি বাহিনী ১৯৪৮ সাল থেকেই ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ঘর-বাড়ি ও ভূমি জবর দখল করে দখলদারিত্ব চালিয়ে আসছে। দীর্ঘ ৭৫ বছর যাবত ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনে বর্বর গণহত্যা চালিয়ে ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে।
গত বছর ৭ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার বেসামরিক সাধারণ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে এবং ৮০ হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছে, যাদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এমনকি জাতিসংঘের কর্মী, বিদেশী সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। বাস্তুচ্যূত গাজাবাসী আশ্রয় শিবিরে ঠাঁই নিয়েছিল। কিন্তু ইসরাইলি বাহিনী আশ্রয় শিবিরগুলোতেও হামলা করে গণহত্যা চালিয়েছে। বর্বর ইসরাইলিদের হাত থেকে হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ, আশ্রয় কেন্দ্র কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। গাজায় এ পর্যন্ত ৭টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে এবং এসব গণকবর থেকে কয়েক শত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলমানদের ওপর অবৈধ ইসরাইলি বাহিনীর এসব আগ্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা আমাদের জানা নেই। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলা এবং ফিলিস্তিনি মুসলিম জাতিগত নিধনযজ্ঞের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ফিলিস্তিনে হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষাধিক বাস্তুচ্যূত সাধারণ ফিলিস্তিনি রাফাতে আশ্রয় নিয়েছে। তারা সেখানে খাদ্য ও পানির অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এই অমানবিক সংকটের মধ্যেও বর্বর ইসরাইলি বাহিনী রাফায় স্থল অভিযান পরিচালনা করে গণহত্যা চালাচ্ছে। তারা যুদ্ধের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ কার্পেট বোমা নিক্ষেপ করছে। জাতিসঙ্ঘ বলেছে, ‘রাফায় স্থল অভিযান ‘নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয়’ সৃষ্টি করবে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই নাগাদ পুরো ফিলিস্তিনে দুর্ভিক্ষ ব্যাপক রূপ নিতে পারে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ আরও লক্ষ্য করছে যে, গাজায় খাদ্য সামগ্রী প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অভুক্ত গাজাবাসীর জন্য খাদ্য বহনকারী ট্রাকে হামলা করে উগ্র ইসরাইলিরা পদদলিত করে খাবার নষ্ট করেছে এবং গাজায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ মনে করে, জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে ইসরাইলিরা অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক আইন-কানুন, রীতিনীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে। বর্তমানে বিশ্ববাসীর কাছে এ কথা দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ফিলিস্তিন সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। অতি সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে ১৪৩টি সদস্য রাষ্ট্র ভোট দিয়েছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ শান্তিকামী বিশ্ববাসীর এই প্রস্তাবকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে এবং অভিমত ব্যক্ত করছে যে, স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া নির্যাতিত-নিপীড়িত ফিলিস্তিনবাসীর মুক্তি আসবে না। তাই স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই মুসলিম উম্মাহ ও শান্তিকামী বিশ্ববাসীর দাবি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জাতিসংঘ, ওআইসিসহ শান্তিকামী গণতান্ত্রিক বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে। সেই সাথে দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের শাহাদাত কবুল করার এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছে এবং নিহতদের শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও আহতদের প্রতি এবং ফিলিস্তিনি সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাছে।”
প্রেসবিজ্ঞপ্তি//এমএইচ