দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, জুলুমতন্ত্র চলছে: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
Share on:
দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, অর্থনীতিও শেষ। এখন জুলুমতন্ত্র চলছে বলেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
বুধবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাকশাল প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরেনা উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক নুরুন্নবী মানিক, আব্দুর রহমান, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণের মজলিসে শূরা ও ঢাবির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ রফিকুন্নবীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি একটি কলঙ্কিত দিন। ১৯৭৫ সালের আজকের এই দিনে সকলের গলা টিপে ধরে কণ্ঠকে রোধ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে বাতিল করে একটি মাত্র দল বাকশাল কায়েম করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছিল। মূলত তারা নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্যই বাকশাল কায়েম করেছিল।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা দেশটাকে মগের মুল্লুক মনে করে লুটপাট, ধর্ষণ, রাহাজানি শুরু করে দেশটাকে ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিয়ে গিয়েছিল। এমন কোন অপকর্ম ছিল না যা তারা করতে বাদ রেখেছিল। ৭৫ সালের বিভিষিকার মতো দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, অর্থনীতিও শেষ। দেশে এখন জুলুমতন্ত্র চলছে। বাকশাল কায়েম করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতির যে ক্ষতি করেছিল জনগন নতুন করে তা আর দেখতে চায় না। জনগণ এখন তাদের নির্বাচিত সরকার দেখতে চাই।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করে তাদের ইতিহাসের সব থেকে বড় ভুলটি করে ফেলেছিল। তারা এমনভাবে মানুষের অধিকারকে হরণ করেছিল যে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। শুধুমাত্র চারটি পত্রিকা বাকি রেখে সকল পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সেগুলোও ছিল সরকার নিয়ন্ত্রিত তাদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। সরকার যেই কথাগুলো বলতে চায়তো শুধু সেগুলোই প্রকাশিত হতো। জনগণের স্বার্থ এবং বিরোধীদলের কথা সেখানে ছাপানো হতো না।
তিনি বলেন, ঠিক একইভাবে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও মানুষের কণ্ঠরোধ, ভোট ও ভাতের অধিকারকে হরণ করেছে। যার ফলে দেখা যায় আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ সদস্যই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। তারা লুটপাট, ধর্ষণ, ব্যাংক-ডাকাতি থেকে শুরু করে এখন চর দখলের মতো স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় দখল করা শুরু করেছে। তারা বাকশালের শিক্ষাকে এখনো ধারণ করে মানুষের কোনো অধিকার দিতে চায় না।
জামায়াত নেতা বলেন, যারা মানুষের হক ভু-লুণ্ঠিত করে, জনগণের অধিকার নিষ্পেষিত করে, তাদের দ্বারা জাতির কোনো কল্যাণ সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় সকল মানুষ রাজপথে নেমেছে যুগপৎ আন্দোলন করছে। জনগণ এই সরকারের পতন চায় এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। জামায়াতও এজন্য আন্দোলন করছে। আমাদের দাবি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, একসময় এই কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতের সাথে যুগপতভাবে আন্দোলন করেছিল। অথচ আজকে তারা কেয়ারটেকার সরকার চায় না। তার কারণ তারা গণতন্ত্র চায় না, তারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক তা চায় না, তারা ভোটের অধিকার চায় না, তারা ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য যেকোনোভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদেরকে আজ ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য রাজপথে নামতে হবে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে জনগণের অধিকার ফিরে আসবে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আজকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকার বাংলাদেশকে একটি পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আজকে বিরোধী দলের উপর নিয়মিত জুলুম নির্যাতন ও গ্রেফতার চলছে। জামায়াতে ইসলামীকে তার রাজনৈতিক অধিকার দেয়া হচ্ছে না। জামায়াতের অফিসগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের যেখানেই পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, তাদেরকে ঘরের মধ্যেও স্বাভাবিকভাবে পাওয়া গেলে তাদেরকে নাশকতার মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দাড়ি টুপি দেখে জামায়াত ভেবে সাধারণ মানুষকেও রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
মহানগর আমির বলেন, যখন এদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ বাঁচানোর আন্দোলনে ঐক্যমত পোষণ করছে। আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান যখন যুগপৎ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তার মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাকে এই ফ্যাসিস্ট সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে। জামায়াতের উপর নির্যাতনের খড়গ চাপিয়ে বিরোধী দলগুলো ও জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আজ দেশ ও জাতি ঐক্যবদ্ধ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে আন্দোলন ও সংগ্রাম প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান তিনি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি
এমআই