ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে ধরা দুই এসআই
Share on:
রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানাধীন পুরান বাণিজ্য মেলা এলাকা থেকে শাহাদৎ সরদার (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে গত ৯ ডিসেম্বর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। প্রাইভেটকারে উঠিয়ে হাতকড়া পরানো ও চোখ, মুখ বাধা হয় কালো কাপড়ে। পকেটে থাকা, মানিব্যাগ ও মোবাইলফোন নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর একটি বাসায় নিয়ে মারধর করে ডিবিবিএল ব্যাংকের এটিএম কার্ডের পিন কোড নিয়ে ন্যাক্সাস পে অ্যাপসের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট থেকে সিটি ব্যাংকে মোট ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩০ টাকা স্থানান্তর করে নেয়। সব মিলিয়ে ৯ লাখ ১৯ হাজার ২৯ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে ছেড়ে দেওয়া হয় ভুক্তভোগীকে।
মিরপুর-১ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর ভুক্তভোগী শাহাদৎ সরদার বাসে করে কলাবাগানে নিজের বাসায় যান। মারধরের কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর চিকিৎসা গ্রহণ ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তিনি।
ওই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ডিএমপির শাহআলী থানার দুই উপ-পরিদর্শকের (এসআই) সংশ্লিষ্টতা পায় পুলিশ। পরে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অবহিত করে দুই এসআইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ডিএমপির শাহআলী থানায় কর্মরত তুহিন কাজী ও মশিউর রহমান তাপস।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আজিমুল হক। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ও তথ্য-তদন্তে প্রমাণের ভিত্তিতে দুই এসআইকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী মো. শাহাদৎ সরদার নওগাঁ সদরের ফারাতপুরে ছাত্তার আলী সরদারের ছেলে। তিনি শেরে বাংলা নগরের রাজাবাজারের বাসিন্দা।
শেরে বাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, 'গত ৯ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আমার এক পরিচিত ছোট ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই। তাকে না পেয়ে রিকশাযোগে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান্থপথ যাওয়ার সময় আনুমানিক বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন ভবনের নিকট পৌঁছলে নীল রঙের একটি প্রাইভেটকার আমার রিকশার গতিরোধ করে অজ্ঞাতনামা ৩ জন লোক।'
'তারা প্রাইভেটকার থেকে নেমে ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাকে (শাহাদৎ সরদার) প্রাইভেটকারে উঠিয়ে হাতকড়া পরিয়ে ও কালো কাপড় দিয়ে চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে। প্যান্টের পকেটে থাকা, মানিব্যাগ, খয়েরি রঙের ভিভো ১৭ মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। সিম খুলে রাখে। পকেটে থাকা নগদ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জোরপূর্বক নিয়ে নেয়। এরপর একটি বাসায় নিয়ে মানিব্যাগে থাকা ডিবিবিএল ব্যাংকের এটিএম কার্ডের পিনকোড চায়। পিনকোড দিতে অস্বীকার করলে অপহরণকারীরা শাহাদৎ সরদারকে কিল, ঘুষি মেরে এটিএম কার্ডের পিনকোড নিয়ে নেয়।'
'এরপর এটিএম বুথে গিয়ে কার্ডের ব্যালেন্স চেক করে ও টাকার পরিমাণ জেনে নেয়। অপহরণকারীরা ফোনের ন্যাক্সাস পে অ্যাপস ইনস্টল করে ন্যাক্সাস পেনাল কোড পে এর মাধ্যমে আমার (শাহাদৎ সরদার) অ্যাকাউন্ট থেকে সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে পর্যায়ক্রমে ৩ লাখ ১০ টাকা, ৩ লাখ ১০ টাকা ও ১ লাখ ৩৩ হাজার ১০ টাকা করে মোট তিন ধাপে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩০ টাকা স্থানান্তর করে নেয়। সবমিলেয়ে তারা ৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।'
মামলায় ভুক্তভোগী শাহাদৎ সরদার আরও উল্লেখ করেন, 'টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর অপহরণকারীরা আবার হাতে হাতকড়া পরিয়ে এবং কালো কাপড়ে চোখ ও মুখ বেঁধে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। একপর্যায়ে ওই দিনই রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাতকড়া খুলে মিরপুর-১ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। এরপর বাসযোগে কলাবাগানের রাজাবাজারের বাসায় চলে যাই।'
এব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মামলার পর আমরা ঘটনাস্থল, যে বুথে টাকা চেক করা হয়েছে তা পরির্দশন করেছি। এরপর সম্ভাব্য সব তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের পর তিনজনই শনাক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ডিএমপির শাহআলী থানায় কর্মরত দুই এসআই তুহিন কাজী ও মশিউর রহমান তাপসের সংশ্লিষ্টতা মেলে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ওই দুই এসআইকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাদের কখন কোথা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা স্পষ্ট করেননি এ কর্মকর্তা।
এব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মু. আহাদ আলী (ওসি) বলেন, মামলা হয়েছিল। দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে তেজগাঁও বিভাগের ডিসিকে ফোন করার পরামর্শ দেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আজিমুল হক বলেন, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ও তথ্য-তদন্তে প্রমাণের ভিত্তিতে দুই এসআইকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর বেশি কোনো তথ্য দিতে তিনি রাজি হননি। তিনি ডিসি মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, আমাকে অফিসিয়ালি এখনো তেজগাঁও বিভাগ পুলিশ কিছু জানায়নি। তারা জানালে আমিও জানাতে পারব।
যোগাযোগ করা হলে শাহ আলী থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। মন্তব্য নিতে হলে আপনি ডিসি মিরপুর বিভাগ কিংবা ডিসি মিডিয়াকে ফোন করুন।
যোগাযোগ করা হলে মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন মোল্লাহ বলেন, বিধি-বিধান অনুযায়ী এব্যাপারে যা যা করণীয় তা গ্রহণ করা হয়েছে। এর বেশি তিনিও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এনএইচ