অসাধরণ ফুটবল খেলেও জয় পেলো না বাংলাদেশ
Share on:
গোল মিসের মহড়ায় ভুগতে থাকা দলটি দ্বিতীয়ার্ধে বরং পিছিয়েই পড়েছিল। তবে সেখান থেকে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত লেবাননের সঙ্গে ১-১ ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন জামাল ভূঁইয়ারা।
মঙ্গলবার(২১নভেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচে প্রথমার্ধেও বাংলাদেশ ভালো খেলেছে।
কিন্তু গোল মিসের মহড়ায় এগিয়ে যেতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণ আর গোলরক্ষক শ্রাবণের ভুলে ৭২ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
৬৭ মিনিটে লেবাননকে এগিয়ে দেন মাজেদ উসমান। তবে সে গোল শোধ করতে খুব একটা সময় নেয়নি বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া দুর্দান্ত এক শটে ৭২ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরান মোরসালিন।
কিংস অ্যারেনায় আগের তিন ম্যাচের একটিতেও হারেনি বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচ ড্রয়ের পর মালদ্বীপের বিপক্ষে জিতেছিল। তাই তো দেশের নতুন এই ভেন্যু পয়ন্তই বাংলাদেশের জন্য।
লেবাননের বিপক্ষে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এ প্রসঙ্গটা উঠেছে ঘুরেফিরে-বাংলাদেশ কি পারবে ঘরের এই ভেন্যুতে না হারার রেকর্ড অক্ষুণ্ন রাখতে?
৬৮ মিনিটে যখন রক্ষণ আর গোলরক্ষকের ভুল বোঝাবুঝিতে গোল খেয়ে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে, তখন ধরেই নেওয়া হয়েছিল হয়তো এই ভেন্যুতে প্রথম হারটা লেখা হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের নামের পাশে।
কিন্তু বাংলাদেশ শুরু থেকে যে ফুটবলটা খেলছিল, তাতে হার মোটেই প্রাপ্য ছিল না। ম্যাচ ফেরার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই লেবাননের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ৫ মিনিটের ব্যবধানেই বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরে আসে দুর্দান্তভাবে।
মদকাণ্ডে মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নিষিদ্ধ ছিলেন মোরসালিন। বসুন্ধরা কিংস সাসপেনশন প্রত্যাহার করে নিলেও দ্বিতীয় ম্যাচে কোচ বিবেচনায় আনেননি তাকে।
তবে অস্ট্রেলিয়া সফরে নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে খেলিয়েছেন কোচ। রাকিব হোসেন দুই হলুদ কার্ডে সাসপেনশনে থাকায় ঘরের মাঠে লেবাননের বিপক্ষে একাদশে সুযোগ পান মোরসালিন।
দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করলেও শেষ পর্যন্ত সেই মোরসালিনই বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে উদযাপনের উপলক্ষ্য এনে দেন কিংস অ্যারেনায়।
ম্যাচটি যারা দেখেননি তাদের কাছে মনে হবে বাংলাদেশ ঘাম ঝরিয়ে ম্যাচটি ড্র করেছে। পিছিয়ে পরে ম্যাচে ফেরায় বিষয়টা তেমনই।
তবে বাংলাদেশ অতিথি দলের চেয়ে অনেক বেটার ফুটবল খেলেই এই ম্যাচে অর্জন করেছে এক পয়েন্ট।
দুই অর্ধের শুরতে কিছু সময় বাংলাদেশ এলোমেলো ফুটবল খেলেছে। বাকি সময়ের প্রাধান্য ছিল বাংলাদেশের। লেবাননের চেয়ে গোলের সুযোগও বেশি পেয়েছিল বাংলাদেশ।
এই মাঠে এর আগে বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের চেয়ে অন্য লেভেলের দল লেবাননের বিপক্ষে যে ফুটবল খেলেছে বাংলাদেশ, তা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হবে।
রক্ষণে সর্বশক্তি নিয়োগ করে ফুটবল এখন আর খেলে না বাংলাদেশ। গত ১৬ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ বাদ দিলে বাকি ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ফুটবলই খেলেছে।
সেই ধারাবাহিকতায় আজ কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশ খেললো সাম্প্রতিক সময়ের সেরা ম্যাচটি।
আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া তাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে বলেছিলেন সমর্থকদের। এ ম্যাচের পর লাল-সবুজ জার্সিধারীদের ওপর দর্শক-সমর্থকদের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়বে তা নিশ্চিত।
৭৯ ধাপ এগিয়ে থাকা একটা দলের বিপক্ষে এভাবে বুক চিতিয়ে ফুটবল খেলে ফাহিম-মোরসালিনরা সমর্থকদের হৃদয়ই জয় করে নিয়েছেন।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের 'ই' গ্রুপে বাংলাদেশের এখনো ম্যাচ বাকি চারটি। এর মধ্যে ঘরের মাঠে খেলবে অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিস্তিনের বিপক্ষে।
লড়াইয়ের এই চেতনা ধরে রাখতে পারলে পরের ম্যাচগুলো থেকেই আসতে পারে আরো পয়েন্ট। গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া আছে বলে বাংলাদেশ দ্বিতীয় হওয়ার লড়াইটা ভালোভাবেই করতে পারবে।
জিতলে সেই পথটা আরও মসৃণ হতো। বাংলাদেশ জেতার মতোই ফুটবল খেলেছে। গত সাফ থেকে বাংলাদেশের গোল মিসের মহড়া চলছে। এ ম্যাচেও ছিল। লেবাননের মতো দলের বিপক্ষে সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে না পারলে খেসারত দিতে হয়।
বাংলাদেশ দিয়েছে ম্যাচ জিততে না পেরে। তাও মন্দের ভালো যে ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে দ্রুতই ফিরে এসেছে হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা।
বাংলাদেশ প্রথম সুযোগ তৈরি করেছিল ২৪ মিনিটে। জামাল ভূঁইয়ার কর্নারে বিশ্বনাথের দূর্বল হেড সহজেই ধরেন লেবাননের গোলরক্ষক মোস্তাফা মাতার।
পরের মিনিটেই বাম দিক থেকে মোরসালিনের কাটব্যাক থেকে বক্সে বল পেয়েছিলেন মো. সোহেল রানা। কিন্তু সোহেল শট নেওয়ার আগেই দ্রুত বল ক্লিয়ার করেন লেবাননের এক ডিফেন্ডার।
৩৪ মিনিটে ডান দিক থেকে ফাহিমের ক্রস বক্সে অরক্ষিত মোরসালিনের পায়ের কাছে বল পড়লেও শট নিতে পারেননি। তিন মিনিট পর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল অতিথি দলটির সামনে। বক্সের মাথা থেকে নেওয়া জিহাদ আইয়ুবের শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
বিরতির বাঁশির আগের মিনিটে আবার সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। আবার সেই মোরসালিন সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন। ডান দিক থেকে ফাহিমের নিচু ক্রস ছোট বক্স থেকে বল-পায়ে সংযোগ ঘটাতে পারেননি মোরসালিন। পারলে এগিয়েই বিরতিতে যেতে পারতো বাংলাদেশ।
৫১ মিনিটে করিম ডারবিসের শট পোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। ৫৯ মিনিটে বিশ্বনাথের শট বক্সে দাঁড়ানো মোরসালিনের পায়ে পড়লেও তিনি বল থামাতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধে এটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম আক্রমণ।
কিংস অ্যারেনা স্তব্ধ করে ৬৮ মিনিটে লিড নেয় লেবানন। গোলরক্ষক শ্রাবণ আর রক্ষণের খেলোয়াড়দের সমন্বয়ের অভাবে গোল করেন লেবাননের বদলি খেলোয়াড় মাজেদ ওসমান।
ম্যাচে ফিরতে বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। ৭৩ মিনিটে ডান দিকে বল দখলের লড়াইয়ে জিতে ফাহিম সামনে পাস দেন। মোরসালিন বল ধরে এগিয়ে যান এবং বক্সের মাথা থেকে তীব্র শটে কাঁপিয়ে দেন লেবাননের জাল। গোল হওয়ার পরই প্রাণ ফিরে পায় কিংস অ্যারেনা। গ্যালারি হয়ে ওঠে উৎসবমুখর।
নির্ধারিত সময়ে এক মিনিট আগে এগিয়ে যাওয়ার সূবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। বদলি রফিকুল ইসলাম নিঁখুত পাস দিয়েছিলেন মোরসালিনকে। বক্স থেকে মোরসালিন ঠিকঠাকমতো শট নিতে পারেননি। তার শট আছড়ে পড়ে সাইডনেটে।
ইনজুরি সময়ের শেষ মুহূর্তে লেবাননের একটি আক্রমণ রুখে দিয়েছেন বাংলাদেশের বদলি গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ।
বাংলাদেশ একাদশ
মিতুল মারমা (মেহেদী হাসান শ্রাবণ) (গোলরক্ষক), শাকিল হোসেন, বিশ্বনাথ ঘোষ, ইসা ফয়সাল, তারিক কাজী, জামাল ভূঁইয়া (রবিউল হাসান), মো. হৃদয় (জনি), সোহেল রানা, সোহেল রানা-২, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম (রফিকুল ইসলাম) ও মোরসালিন।
এসএম