ষড়যন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার
Share on:
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, সরকার গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এই আগ্রাসী শক্তি ও আধিপত্যবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
সোমবার (২৫মার্চ) দুপুরে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত। আজকে মানুষের বাকস্বাধীনতা নেই। জনগণ স্বাধীনতার সুফল আজও ভোগ করতে পারেনি। জামায়াতসহ অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন প্রকাশ্য স্বাধীনতা দিবসের প্রোগ্রাম করতে পারছে না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ইনসাফ, সামাজিক সুবিচারের যে ঘোষণা আছে তা আজ ভূ-লুণ্ঠিত। বার বার প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ভোট চুরি করে দেশে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করেছে। স্বাধীনতাকে তারা নিজেদের সম্পত্তি মনে করে অথচ তাদের মধ্যে কেউ বীরশ্রেষ্ঠ নেই। তাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা নিরাপদ নয়। ফ্যাসিবাদের পতন ও বাংলাদেশকে একটি কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা সরকার পরিচালনা করছে তাদের কাছে জনগণ নিরাপদ নয়। মানবতা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। বর্তমান সরকার যখনই এদেশের ক্ষমতায় আসে তখনই বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, ব্যাংক লুট হয়, সকল অন্যায় বেড়ে যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়ে, সীমান্তে হত্যা বেড়ে যায়, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে। কালচারাল আগ্রাসন পুরো জাতিকে গ্রাস করে নেয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের চেষ্টায় এদেশ ব্রিটিশ কলোনি থেকে মুক্ত হয়েছে আর বর্তমান সরকার এদেশকে আবারো পার্শ্ববর্তী দেশের কলোনি বানিয়েছে। তাই বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য, এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটি স্বাধীনতার সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে পড়েছে।’
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। আরো বক্তব্য প্রদান করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসেন ও কামাল হোসাইন। আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী অফিস সম্পাদক আব্দুস সাত্তার সুমন, সহকারী প্রচার সম্পাদক আশরাফুল আলম ইমন, সহকারী সমাজকল্যাণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ খান প্রমুখ।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাধীনতার সংগ্রাম হয়েছিল মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অরক্ষিত। লুটেরার দল বাংলাদেশকে লুটপাট করে খাচ্ছে। আধিপত্যবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রের কবল থেকে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার একমাত্র রক্ষাকবচ হলো ইসলাম।
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জনগণের অধিকার-ন্যায়বিচার ও মর্যাদা বর্তমান শাসক শ্রেণীর কাছে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়ে আছে। সরকার বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে পরিপূর্ণভাবে অকার্যকর করে রেখেছে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘সরকার ক্ষমতায় বসে প্রহসনের ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে পুরো দেশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। তাদের মুখে স্বাধীনতা রক্ষার গল্প মানায় না। এদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা সবচেয়ে বড় দাবিদার বলে নিজেদের প্রকাশ করে তারাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে ভূ-লুণ্ঠিত করে চলেছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডবের মাধ্যমে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেই থেকে বাংলাদেশ আধিপত্যবাদ থেকে মুক্তি পাইনি। জনসমর্থনহীন সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই সরকারি প্রতিষ্ঠানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। পরপর চার মেয়াদে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে দেশের সমস্ত মৌলিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করে এদেশের মিডিয়া ও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে রেখে জনগণের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
তিনি দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি