বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় শহীদ রাশেদুল হকের কুড়িগ্রামের বাড়িতে জামায়াত
Share on:
বৈষাম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় শহীদ রাশিদুল হকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
শুক্রবার (১৬ আগষ্ট ) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুন খাওয়া ইউনিয়নের চর কাটগিরি গ্রামে শহীদ রাশেদুল হকের বাড়িতে আসেন। তিনি তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেন। এসময় তিনি শহীদ রাশেদুল হকের কবর জিয়ারত করেন এবং আমীরে জামায়াতের পক্ষ থেকে শহীদ রাশিদুল হকের বাবা বাচ্চু মিয়ার কাছে এক লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন।
কুড়িগ্রাম জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকীর সভাপতিত্বে নুন খাওয়া কাটগিরি নূরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত এক সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, “বিগত প্রায় ১৭ বছর যাবৎ বাংলাদেশের মানুষ অবরুদ্ধ ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে দেশের মানুষ আজ মুক্ত হয়েছে। দেশের আজ বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। ছাত্র-জনতা এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, জালিমের বিরুদ্ধে কঠিন শব্দ উচ্চারণ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। তারই ধারাবাহিকতায় সিংহের মতো বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহসী টগবগে যুবক আবু সাঈদ। আবু সাঈদের আত্মত্যাগের কারণে রংপুর আজ শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের কাছে গর্বিত একটি নাম। রাশিদুল হকের পিতা এক রাশিদুলকে হারিয়েছেন ঠিকই কিন্তু হাজার হাজার রাশিদুল তার পাশে রয়েছে। শহীদ রাশেদুল হক শুধু কুড়িগ্রামের সন্তান নয়, সে বাংলাদেশের বীর সন্তান। শহীদ রাশেদুল হকসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে এদেশের মানুষকে মুক্ত করেছে, এদেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করেছে এবং মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। বাংলাদেশ এবং রংপুর বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মাওলানা আবদুল হালিম আরও বলেন, শহিদ রাশিদুল হকসহ যারা বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছে তারা সকলেই বীর। বাংলাদেশের মানুষ তাদের কোনো দিন ভুলবে না। এই আন্দোলনে বহু শিশু জীবন দিয়েছে, অগণিত ছাত্র-ছাত্রী জীবন দিয়েছে, অসংখ্য সাধারণ শ্রমিক-মজুর জীবন দিয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু গতি রক্ষার মানসে নির্বিচারে দেশের নাগরিকদের হত্যা করেছে। সুতরাং এটা একটা গণহত্যা। যে সরকারের অধীনে কোনো শিশু তার মায়ের কোলে, বাবার কোলে এবং নিজ ঘর, বারান্দা ও ছাদে নিরাপদ নয়, সেই স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল এবং তাদেরকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কুড়িগ্রামের রাশিদুল হকসহ যেসব শিশু, শিক্ষার্থী, শ্রমিক-মজুর এবং যেসব সাধারণ মানুষ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা শহীদ রাশিদুল হকের পরিবারের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাল্লাহ।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, কুড়িগ্রাম জেলা সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিন, জেলা অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি শাহজালাল সবুজ, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এডভোকেট ইয়াসিন আলী সরকার, জেলা প্রচার সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য জহুরুল ইসলাম, নাগেশ্বরী উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুল মান্নান ও সেক্রেটারি মাওলানা শহিদুল ইসলামসহ জেলা ও উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মুকুল হোসেন।
উল্লেখ্য, শহীদ রাশিদুল হক রাজধানীর শনির আখড়ায় একটি গার্মেন্টস-এ কর্মরত ছিলেন। তিনি গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মাত্র ২১ দিনের বিবাহিত জীবনে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন।
প্রেসবিজ্ঞপ্তি//এমএইচ