রসুনের দরপতন, বিপাকে কৃষক
Share on:
মোঃ আব্দুল আউয়াল মন্ডল, নাটোর : নাটোরের বড়াইগ্রামে মসলা জাতীয় ফসল রসুন তোলা শুরু হয়েছে। বর্তমানে চাষীরা জমি থেকে রসুন তোলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কিন্তু ন্যায্য মূল্য না পেয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। নিজেদের উদ্ভাবিত বিনা হালে রসুন চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক সফলতা পেলেও দাম না থাকায় লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠছে না তাদের।
উল্টো বিঘা প্রতি চাষীদের ৫-৬ হাজার টাকা লোকসান যাচ্ছে, আর যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে রসুন চাষ করেছেন তাদের লোকসান প্রতি বিঘায় ২০ হাজারেরও বেশি। বিদেশ থেকে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ রসুন আমদানী করার কারণেই চাষীরা রসুনের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে দাবি চাষীদের।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে বড়াইগ্রামে ৯ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়। এসব জমিতে কমপক্ষে ৮০ হাজার ৩৬৭ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বড়াইগ্রামের লক্ষীকোল বাজারে রসুন বেচতে আসা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার প্রতি মণ রসুন মানভেদে মাত্র ৮০০-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। রসুনের এ অস্বাভাবিক দরপতনে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষীরা।
রসুন বিক্রি করতে আসা কৃষক মানিক হোসেন ও আব্দুল মালেক বলেন, অন্যান্য বছর এ সময়ে যে দাম থাকে, এবার দাম তার চেয়ে কম। এ অবস্থায় আমাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।
ভরতপুর গ্রামের রসুন চাষী মতিউর রহমান জানান, প্রতি বিঘা জমিতে রসুন চাষ, নিড়ানি, রসুন তোলা ও কেটে বাছাই করতে প্রায় ৪০ জন শ্রমিকের মজুরি ও খাবার খরচ বাবদ কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বীজ, সার ও সেচে আরও ১১-১২ হাজার টাকা খরচ পড়ে। এছাড়া যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে রসুন চাষ করেছেন, তাদের বিঘা প্রতি আরও ১৫ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে।
চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মণ রসুন উৎপাদিত হয়েছে। বর্তমান দরে প্রতি বিঘায় উৎপাদিত রসুন সর্বাধিক ২০-২২ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচতো উঠছেই না, উল্টো কৃষকের বিঘা প্রতি কমপক্ষে ৫-৬ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। আর লিজ চাষীদের লোকসান বিঘা প্রতি কুড়ি হাজারেরও বেশি।
বাজিতপুর গ্রামের রসুন চাষী হাসানুল বান্না জানান, এ বছর আমি ৫ বিঘা জমি নিয়ে রসুন চাষ করে প্রায় ১১০ মণ রসুন পেয়েছি। ভাল দাম পেলে এ বছর রসুন বিক্রি করে গত বছরের ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবো বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু দাম অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় এ বছর আরো প্রায় ৩০-৩৫ হাজার টাকা লোকসান হওয়ার আশঙ্কা করছি।
রসুন ব্যবসায়ী আলম হোসেন জানান, চাষীদের উৎপাদিত রসুনে দেশের মোট চাহিদার যেটুকু পুরণ হচ্ছে, সেটুকু বাদে অবশিষ্ট রসুন আমদানী করলে সমস্যা হতো না। কিন্তু সরকারিভাবে চাহিদার তুলনায় বিপুল পরিমাণ বেশি রসুন আমদানী করায় দেশীয় রসুনের দাম নেই। ফলে দেশীয় রসুন চাষীরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, অত্যন্ত কষ্টে উৎপাদিত রসুনের ন্যায্য দাম না পেলে চাষীরা রসুন চাষে নিরুৎসাহিত হবেন। তাই চাষীরা যেন ন্যায্য দাম পায় সে ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ভূমিকা রাখতে হবে।
এইচএন