ঐতিহাসিক অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত যুক্তরাষ্ট্রের হাউস স্পিকার
Share on:
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার রিপাবলিকান কেভিন ম্যাকার্থি।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত ভোটে তাকে সরিয়ে দেয়ার পক্ষে ভোট পড়ে ২১৬টি। বিপক্ষে পড়ে ২১০ ভোট। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রিপাবলিকান ক্ষমতাচ্যুত হলেন।
প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যালঘু ডেমোক্রেটরা। কিন্তু গত শনিবার সরকারি বিভিন্ন এজেন্সিতে অর্থায়নের বিষয়ে তিনি সিনেট ডেমোক্রেটদের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন বলে অভিযোগ আছে। এরপরই অতি রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের মধ্যে বিদ্রোহের শিকার হন কেভিন ম্যাকার্থি। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দল থেকে তার সুস্পষ্ট কোনো উত্তরসূরি হবেন এমন কাউকে দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অনলাইন বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ফ্লোরিডার রিপাবলিকান ম্যাট গায়েটজ সোমবার (২ অক্টোবর) স্পিকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। এ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে বিরল।
স্পিকারের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, তিনি ইউক্রেনকে অর্থ সরবরাহ দেয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছেন। তবে তার এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন কেভিন ম্যাকার্থি।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) পদ হারানোর পর সন্ধ্যায় তিনি রিপাবলিকান আইন প্রণেতার সঙ্গে একটি প্রাইভেট মিটিং করেছেন। তাদেরকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এ পদে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিকল্পনা নেই তার। তার সঙ্গে রাজনৈতিক শত্রুতায় লিপ্ত গায়েটজকে লক্ষ্য করে তিনি বলেছেন, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে গায়েটজ দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কেভিন ম্যাকার্থি বলেছেন, আপনারা জানেন আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা ব্যক্তিগত। তহবিল সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সৃষ্টির জন্য তহবিল সংগ্রহ সংক্রান্ত ইমেইল পাঠানো হয়েছে। এটা কংগ্রেস সদস্যসুলভ আচরণ নয়। যেসব কট্টরপন্থি আমার বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন তারা রক্ষণশীল নন।
এ বছর জানুয়ারিতে তীব্র কঠিন পরিস্থিতির মাধ্যমে স্পিকার নির্বাচিত হন কেভিন ম্যাকার্থি। এ জন্য চেম্বারে ১৫ দফা ভোট হয়। কারণ ম্যাট গায়েটজ ও ডানপন্থিরা তাকে সমর্থনে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিলেন।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) কেভিন ম্যাকার্থিকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মাত্র আটজন রিপাবলিকান ভোট দেন। অন্যদিকে তিনি ২১০ জন আইন প্রণেতার ভোট পেতে সক্ষম হন, তারা সবাই রিপাবলিকান।
অন্যদিকে কেভিন ম্যাকার্থিকে ক্ষমতাচ্যুত করার এই লড়াইয়ে দলছুট রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগ দেন ডেমোক্রেটরা। তার বিরুদ্ধে উদারমনা রিপাবলিকান ন্যান্সি মেস-এর ভোট বিস্মিত করেছে অনেককে।
অনাস্থা ভোটের পর সাউথ ক্যারোলাইনার এই আইনপ্রণেতা বলেছেন, আমি এমন একজন স্পিকার খুঁজছি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে সত্য কথা বলবেন, সৎ হবেন এবং কংগ্রেসে উভয় দলের কাছে আস্থার হবেন।
অন্যদিকে ডেমোক্রেট হাউস নেতা হাকিম জেফ্রিস তার সহকর্মীদের কাছে একটি চিঠি লিখে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কেভিন ম্যাকার্থিকে উদ্ধার করতে যে ভোট প্রয়োজন, তারা তা দেবেন না। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য ওয়াশিংটনের বামপন্থি ডেমোক্রেট কংগ্রেসওমেন প্রমিলা জয়পাল ভোটের আগে সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের অযোগ্যতার মধ্যে ডুবে থাকতে দাও।
ভোটের ফল ঘোষণার আগে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের মধ্যে এক রকম নীরবতা দেখা যায়। এদিন পরিষদ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এই পরিষদ ২২১-২১২ ব্যবধানে নিয়ন্ত্রণে আছে রিপাবলিকানদের। এরই মধ্যে আরাকানসাসের রিপাবলিকান স্টিভ ওম্যাক জোরালোভাবে ঘোষণা করেন যে, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকারের পদ শূণ্য ঘোষণা করা হলো। দিনের শুরুতে ডনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। তাতে তিনি নিজেদের একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই না করে উগ্র বাম ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানান।
ওদিকে নর্থ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান প্যাট্রিক ম্যাকহেনরি বর্তমানে অস্থায়ীভাবে অন্তর্বর্তী স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ক্ষমতাচ্যুত স্পিকার ম্যাট ম্যাকার্থির সমর্থক। তিনি হাউসের পূর্ণ ক্ষমতা পাবেন নাকি প্রশাসনিক ক্ষমতা পাবেন এবং একটি নতুন নির্বাচন তদারকির সক্ষমতা পাবেন তা স্পষ্ট নয়। একজন অন্তর্বর্তী স্পিকার কতদিন দায়িত্বে থাকবেন সে বিষয়েও কোনো স্পষ্ট আইন নেই, যদিও ১১ই অক্টোবর একজন নতুন স্পিকার নির্বাচনের পরিকল্পনা রয়েছে।
ম্যাট ম্যাকার্থির স্থানে বড় রকমের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে লুইজিয়ানার রিপাবলিকান স্টিভ স্ক্যালাইস এবং মিনেসোটার রিপাবলিকান টম ইমার’কে। কিন্তু তাদের কেউই এই পদে দায়িত্ব পালনে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
ওদিকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যাঁ-পিয়েরে এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আশা করছেন খুব দ্রুতই একজন নতুন স্পিকার নির্বাচন করা হবে। কারণ, দেশ যেসব সমস্যার মুখোমুখি তা সমাধানে অপেক্ষা করা যাবে না।
এনএইচ