আমরা কখনও আ.লীগের দোসর ছিলাম না: জিএম কাদের
Share on:
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ জোর করে নির্বাচনে নিয়েছে। এতে জাতীয় পার্টি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমি কি মন্ত্রী হতে নির্বাচনে গিয়েছি? আমি তো ২০০৮ সালে মন্ত্রী ছিলাম। তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিরোধের কারণে, পদত্যাগ করেছিলাম। আমি কখনও মন্ত্রিত্বের জন্য রাজনীতি করি না।’
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় মহিলা পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জিএম কাদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিল। ৩০০ আসনের মধ্যে আমিসহ ২৭০ জনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে যাইনি এবং সংসদেও যাইনি। তখন আওয়ামী লীগ আমাকে মন্ত্রিত্ব দিতে চেয়েছিল, আমি রাজি হইনি।’
‘আমরা জনগণের কোনও ক্ষতি করিনি, জনগণের উপকার করতে চেষ্টা করেছি। ২০১৪ সালে যখন আমরা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তখন আরেকটা গ্রুপ বানিয়ে তাদের লাঙ্গল মার্কা দিয়ে নির্বাচনে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল সরকার। আমি বিশ্বাস করিনি। তাই ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা ২৭০ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলাম।’
জিএম কাদের উল্লেখ করেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচন আমরা বর্জন করতে চেয়েছিলাম। আমাদের বাধ্য করা হয় নির্বাচনে যেতে, এটা সবাই জানে। ১৭ ডিসেম্বর ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন, আমরা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার লোকজন আমাদের অফিস ঘেরাও করে রাখে। আমাদের সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করতে দেয়নি।’
‘জোর করে নির্বাচনে নেওয়ার কারণে আমাদের রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন বর্জন করতে পারিনি। আওয়ামী লীগের পতন না হলে আমাদের দল বিলীন হয়ে যেতো। আওয়ামী লীগের পতন না হলে কোনও দলই বাংলাদেশে থাকতো না।’
‘শুধু, আওয়ামী লীগ থাকতো। আমরা কখনোই আওয়ামী লীগের দোসর ছিলাম না, আমরা সব সময় জনগণের দোসর ছিলাম। জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপির আদর্শগত মিল আছে কিন্তু চরিত্রগত কোনও মিল নেই। জাতীয় পার্টিকে সব সময় ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টি নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।’
জাপার নেতা বলেন, ‘১৯৯১ সালের নির্বাচনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জেলে থেকেই ৫টি আসনে জয়লাভ করেছিল। ৫টি আসনের জনগণ এরশাদকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছে, তাকে আপনারা কীভাবে স্বৈরাচার বলেন? আপনি যদি গণতন্ত্রমনা হন, তাহলে এরশাদকে কখনোই স্বৈরাচার বলতে পারবেন না।’
‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন জননন্দিত নেতা। কোনও নির্বাচনে তিনি পরাজিত হননি। প্রতিটি নির্বাচনে জনগণ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচিত করে জানিয়ে দিয়েছেন, এরশাদ কখনোই স্বৈরাচার ছিল না। ’৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মাঠে থাকতে পারেনি, তারপরও এরশাদ সাহেব জেলে থেকেই ৫টি আসনে জয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টি ওই নির্বাচনে ৩৬টি আসনে জয়ী হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা যাইনি। আমাদের কিছু লোককে বাধ্য করে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তো বিএনপি অংশ নিয়েছিল। মার্কা ছিল না কিন্তু ২ ধাপ পর্যন্ত বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ২০১৮ সালে বিএনপিসহ সকল দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল, আমরাও নির্বাচনে ছিলাম।’
প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে এই মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া প্রমুখ।
এনএইচ